চিকিৎসাসেবা-রোগী ও চিকিৎসকের দূরত্ব কমাতে হবে by এ বি এম আবদুল্লাহ
নিত্যনতুন প্রযুক্তি রোগনির্ণয় সহজ করেছে। জিনতত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ায় অনেক জটিল রোগের কারণ উন্মোচিত হয়েছে। রোগীকে সঠিক চিকিৎসায় সহায়তা করতে আধুনিক প্রযুক্তি চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষ দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে। প্রভাব পড়েছে গড় আয়ুর ওপর।
এক দিনে বা এক বছরে এটা হয়নি। কোনো কোনো রোগ পরাস্ত করার জন্য মানুষ শতাধিক বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইংল্যান্ড-আমেরিকায় একসময় কলেরা ছিল। বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করে কলেরা সেসব অঞ্চলে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। কলেরা বা বসন্তে আমাদের দেশেও গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হওয়ার ইতিহাস আছে। এখন কলেরার টিকার ব্যবহারও শুরু হয়েছে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ওআরএসের ব্যবহার যুগান্তকারী আবিষ্কার। টিকা পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল করেছে।
সঠিক রোগনির্ণয় যথাযথ ব্যবস্থাপত্রের পূর্বশর্ত। চিকিৎসকেরা যখনই রোগনির্ণয়ে হিমশিম খেয়েছেন, তখনই নতুন প্রযুক্তি তাঁদের সহায়তা করেছে। এমআরআইয়ের কথাই ধরা যাক। এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের, বিশেষ করে মস্তিষ্কের অনেক জটিল রোগ সহজেই নিরূপণ সম্ভব হচ্ছে। ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির পরীক্ষা-নিরীক্ষা আজ অণু-পরমাণু পর্যায়ে রোগের কারণ ও ধরন নির্ণয় করতে পারছে। জেনেটিক অ্যানালাইসিস, ক্রোমোজোমাল অ্যানালাইসিস, মলিকুলার বায়োকেমিস্ট্রি ও ইমিউনোলজি রোগের ধরন-ধারণ ও কারণ ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে। রেডিওলজির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে, ইমেজিংয়ের নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার দেহের ভেতরের প্রায় সব চিত্রই তুলে আনতে পারছে নির্ভুলভাবে।
কোষ এবং তারও ভেতরের উপাদানগুলো কীভাবে কাজ করে, কীভাবে বংশগতি প্রবাহিত হয় এবং কীভাবেই বা সমন্বিত হয়, কোন সামান্য প্রোটিনের ভুলে বা কোন ছোট্ট ডিএনএজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতির দরুন দেখা দেয় জটিল রোগ, তা আমরা জানতে পারছি। রক্তের সুগার টেস্ট এক মিনিটেই করা সম্ভব।
ক্লোনিং পদ্ধতিও বিজ্ঞানের আরেক বিস্ময়কর আবিষ্কার। অদূর ভবিষ্যতে ক্লোনিংকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি ও প্রতিস্থাপনও সহজ হতে চলেছে। শল্যচিকিৎসায় অ্যানেসথেসিয়া ও অ্যান্টি-বায়োটিকের ব্যবহার এনেছে সফলতার উচ্চ হার। এন্ডোস্কপিক সার্জারি, লেসার সার্জারি, গামা নাইফ সার্জারি ইত্যাদির কারণে কাটাছেঁড়া ছাড়াই সম্ভব হচ্ছে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার। ধাত্রীবিদ্যা অনেক এগিয়েছে, গর্ভস্থ শিশুর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা সহজ হয়েছে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে। এর ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো গেছে অনেকাংশেই।
টেস্টটিউব প্রযুক্তি জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের দুঃখ অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। হূৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃৎ অকেজো বা নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপনও করা যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো কোনো একসময় কল্পনারও অতীত ছিল।
নতুন নতুন বইপুস্তক ছাড়াও শত রকম জার্নাল থেকে এসব বিষয়ে নবীন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সহায়তা নিতে পারছেন। এ ছাড়া আছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ইন্টারনেট-ওয়েবসাইট।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অবদান আমরা চিকিৎসকেরা কতটুকু সৎভাবে ব্যবহার করতে পারছি বা করছি, তা আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকাই বা কী?
ব্যবহারের ভুলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নতি কিছু দুর্গতি বয়ে এনেছে। আগের জমানায় রোগী কম ছিল, চিকিৎসার সুযোগও ছিল অপ্রতুল। চিকিৎসকদের ভুলভ্রান্তি কম হতো, তবে অজানা ছিল অনেক কিছুই। চিকিৎসাসেবা বর্তমানে অনেকাংশে ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ও ইমেজিং-নির্ভর বলে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অনেক দেশেই উন্নত চিকিৎসা চলে গেছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশ্বায়ন ও বাজার-সংস্কৃতির প্রভাব থেকে চিকিৎসাবিদ্যা ও সেবা মুক্ত হতে পারেনি বলে চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা নেমে এসেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীর কাতারে। আলোর নিচের অন্ধকারটুকু ফেলে দেওয়া যায় না।
রোগের ইতিহাস ও রোগীর শারীরিক পরীক্ষা আজ হয়ে উঠেছে কম গুরুত্বপূর্ণ, ক্লিনিক্যাল জাজমেন্ট কমে যাচ্ছে। যন্ত্রনির্ভরতা চিকিৎসককে রোগী থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। রোগীর সঙ্গে কথা বলে অহেতুক সময় নষ্ট করার চেয়ে ল্যাবরেটরিতে রোগনির্ণয় অনেক সহজ ও নিরাপদ, কিন্তু এতে চিকিৎসাবিদ্যার মূল আর্টই অনেকাংশে যাচ্ছে হারিয়ে। চিকিৎসকেরা ল্যাবরেটরির প্রতিবেদনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল স্কিল কাজে না লাগালে চিকিৎসকের পরিবর্তে মানুষ ল্যাবরেটরির রোবটের কাছ থেকেই সেবা নিতে চাইবে। রোগীর কথা না শুনে, ভালোভাবে রোগীকে পরীক্ষা না করায় অনেক রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় হচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। চিকিৎসক যদি রোগের ইতিহাস ভালোভাবে শোনেন তবে অনেক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তাতে অযথা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এড়ানো সম্ভব। শুধু চিকিৎসকের অদক্ষতা বা অমনোযোগের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ভার রোগীকে মাথা পেতে নিতে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সুচিকিৎসার সুযোগ। দেখা যাচ্ছে, অনেক নামীদামি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে না বুঝেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগী নিঃস্ব হয়ে যান।
করপোরেট-সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসাসেবার ওপর। বেশির ভাগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের কাছে রোগী এখন রোগী নন বরং ক্লায়েন্ট। চিকিৎসাসেবা চিকিৎসকদের কাছ থেকে ক্রমেই চলে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি, করপোরেট অফিস, চেইন প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড ওষুধ কোম্পানির হাতে। এরা চিকিৎসাসেবাকে আর সেবা নয়, বরং মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত। আর চিকিৎসকেরাও তাদের হাতের পুতুল হতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হচ্ছে। একদিকে চিকিৎসকদের আত্মবিশ্বাস কমেছে, নৈতিকতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, রোগী তাঁর আস্থা হারাচ্ছেন।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রয়োজন চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল স্কিল ও জাজমেন্টের ওপর পূর্ণ আস্থা সৃষ্টি করা এবং দক্ষতা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় ও সঠিক উপায়ে ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির সাহায্য নেওয়া। তৃতীয়ত, চিকিৎসকদের নৈতিক শিক্ষাদানের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ও অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের, যাঁরা এই মহান পেশায় জড়িত।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সঠিক রোগনির্ণয় যথাযথ ব্যবস্থাপত্রের পূর্বশর্ত। চিকিৎসকেরা যখনই রোগনির্ণয়ে হিমশিম খেয়েছেন, তখনই নতুন প্রযুক্তি তাঁদের সহায়তা করেছে। এমআরআইয়ের কথাই ধরা যাক। এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের, বিশেষ করে মস্তিষ্কের অনেক জটিল রোগ সহজেই নিরূপণ সম্ভব হচ্ছে। ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির পরীক্ষা-নিরীক্ষা আজ অণু-পরমাণু পর্যায়ে রোগের কারণ ও ধরন নির্ণয় করতে পারছে। জেনেটিক অ্যানালাইসিস, ক্রোমোজোমাল অ্যানালাইসিস, মলিকুলার বায়োকেমিস্ট্রি ও ইমিউনোলজি রোগের ধরন-ধারণ ও কারণ ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে। রেডিওলজির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে, ইমেজিংয়ের নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার দেহের ভেতরের প্রায় সব চিত্রই তুলে আনতে পারছে নির্ভুলভাবে।
কোষ এবং তারও ভেতরের উপাদানগুলো কীভাবে কাজ করে, কীভাবে বংশগতি প্রবাহিত হয় এবং কীভাবেই বা সমন্বিত হয়, কোন সামান্য প্রোটিনের ভুলে বা কোন ছোট্ট ডিএনএজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতির দরুন দেখা দেয় জটিল রোগ, তা আমরা জানতে পারছি। রক্তের সুগার টেস্ট এক মিনিটেই করা সম্ভব।
ক্লোনিং পদ্ধতিও বিজ্ঞানের আরেক বিস্ময়কর আবিষ্কার। অদূর ভবিষ্যতে ক্লোনিংকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি ও প্রতিস্থাপনও সহজ হতে চলেছে। শল্যচিকিৎসায় অ্যানেসথেসিয়া ও অ্যান্টি-বায়োটিকের ব্যবহার এনেছে সফলতার উচ্চ হার। এন্ডোস্কপিক সার্জারি, লেসার সার্জারি, গামা নাইফ সার্জারি ইত্যাদির কারণে কাটাছেঁড়া ছাড়াই সম্ভব হচ্ছে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার। ধাত্রীবিদ্যা অনেক এগিয়েছে, গর্ভস্থ শিশুর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা সহজ হয়েছে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে। এর ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো গেছে অনেকাংশেই।
টেস্টটিউব প্রযুক্তি জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের দুঃখ অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। হূৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃৎ অকেজো বা নষ্ট হলে তা প্রতিস্থাপনও করা যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো কোনো একসময় কল্পনারও অতীত ছিল।
নতুন নতুন বইপুস্তক ছাড়াও শত রকম জার্নাল থেকে এসব বিষয়ে নবীন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সহায়তা নিতে পারছেন। এ ছাড়া আছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ইন্টারনেট-ওয়েবসাইট।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অবদান আমরা চিকিৎসকেরা কতটুকু সৎভাবে ব্যবহার করতে পারছি বা করছি, তা আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকাই বা কী?
ব্যবহারের ভুলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নতি কিছু দুর্গতি বয়ে এনেছে। আগের জমানায় রোগী কম ছিল, চিকিৎসার সুযোগও ছিল অপ্রতুল। চিকিৎসকদের ভুলভ্রান্তি কম হতো, তবে অজানা ছিল অনেক কিছুই। চিকিৎসাসেবা বর্তমানে অনেকাংশে ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ও ইমেজিং-নির্ভর বলে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অনেক দেশেই উন্নত চিকিৎসা চলে গেছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশ্বায়ন ও বাজার-সংস্কৃতির প্রভাব থেকে চিকিৎসাবিদ্যা ও সেবা মুক্ত হতে পারেনি বলে চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা নেমে এসেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীর কাতারে। আলোর নিচের অন্ধকারটুকু ফেলে দেওয়া যায় না।
রোগের ইতিহাস ও রোগীর শারীরিক পরীক্ষা আজ হয়ে উঠেছে কম গুরুত্বপূর্ণ, ক্লিনিক্যাল জাজমেন্ট কমে যাচ্ছে। যন্ত্রনির্ভরতা চিকিৎসককে রোগী থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। রোগীর সঙ্গে কথা বলে অহেতুক সময় নষ্ট করার চেয়ে ল্যাবরেটরিতে রোগনির্ণয় অনেক সহজ ও নিরাপদ, কিন্তু এতে চিকিৎসাবিদ্যার মূল আর্টই অনেকাংশে যাচ্ছে হারিয়ে। চিকিৎসকেরা ল্যাবরেটরির প্রতিবেদনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল স্কিল কাজে না লাগালে চিকিৎসকের পরিবর্তে মানুষ ল্যাবরেটরির রোবটের কাছ থেকেই সেবা নিতে চাইবে। রোগীর কথা না শুনে, ভালোভাবে রোগীকে পরীক্ষা না করায় অনেক রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় হচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। চিকিৎসক যদি রোগের ইতিহাস ভালোভাবে শোনেন তবে অনেক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তাতে অযথা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এড়ানো সম্ভব। শুধু চিকিৎসকের অদক্ষতা বা অমনোযোগের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ভার রোগীকে মাথা পেতে নিতে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সুচিকিৎসার সুযোগ। দেখা যাচ্ছে, অনেক নামীদামি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে না বুঝেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগী নিঃস্ব হয়ে যান।
করপোরেট-সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসাসেবার ওপর। বেশির ভাগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের কাছে রোগী এখন রোগী নন বরং ক্লায়েন্ট। চিকিৎসাসেবা চিকিৎসকদের কাছ থেকে ক্রমেই চলে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি, করপোরেট অফিস, চেইন প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড ওষুধ কোম্পানির হাতে। এরা চিকিৎসাসেবাকে আর সেবা নয়, বরং মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত। আর চিকিৎসকেরাও তাদের হাতের পুতুল হতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হচ্ছে। একদিকে চিকিৎসকদের আত্মবিশ্বাস কমেছে, নৈতিকতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, রোগী তাঁর আস্থা হারাচ্ছেন।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রয়োজন চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল স্কিল ও জাজমেন্টের ওপর পূর্ণ আস্থা সৃষ্টি করা এবং দক্ষতা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় ও সঠিক উপায়ে ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির সাহায্য নেওয়া। তৃতীয়ত, চিকিৎসকদের নৈতিক শিক্ষাদানের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ও অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের, যাঁরা এই মহান পেশায় জড়িত।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments