তারা আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে by মওদুদ আহমদ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা না-থাকা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকার বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার সুযোগ নেই। বিরোধী দল প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছে। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আমীর-উল ইসলাম এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার সুযোগ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। বিষয়টি কি বাধ্যবাধকতাপূর্ণ?
মওদুদ আহমদ এই বক্তব্য সত্য নয়। সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় সংসদ বা জনগণের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। আমাদের সংবিধানের কোথাও লেখা নেই যে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় জনগণ মানতে বাধ্য বা সংসদ মানতে বাধ্য। বিশেষ করে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে। আমাদের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিভিউ করার এখতিয়ার স্বীকৃত।
মওদুদ আহমদ হ্যাঁ, সেটা ঠিক। সুপ্রিম কোর্ট যেকোনো বিষয়ে রায় দিতে পারেন।
প্রথম আলো সুতরাং সেই সব রায়ের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মওদুদ আহমদ আপনি যদি সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ পড়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন, সেখানে লেখা আছে, আপিল বিভাগের কোনো আইন বা ঘোষণা হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।
প্রথম আলো তাহলে কি আপনি বলতে চান, অষ্টম সংশোধনীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, সেটা আপনারা মানে নির্বাহী বিভাগ না মানলেও পারতেন। সেই সুযোগ কি খোলা ছিল?
মওদুদ আহমদ সরকার যদি চাইত তাহলে সেটা করতে পারত। সরকার সেই রায় অবজ্ঞা করতে পারত। ভারতে এমন অনেক রায় হয়েছে, যেখানে সংসদ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিয়েছে। সংসদকে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য করবেন, এমন কোনো উদাহরণ দুনিয়ায় নেই।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না রাখার প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল দিয়েছে। এ ছাড়া আইনি পদক্ষেপ কিংবা আলাপ-আলোচনার বিকল্প খুঁজে দেখবে কি বিএনপি?
মওদুদ আহমদ না, সরকার তো সেই জায়গা রাখেনি। এখন বিএনপিকে প্রস্তাব দিতে বলা একটা তামাশা। কারণ, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। তারা সরকারি দল, তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এখানে আমাদের সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ কোথায়? তারা যদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে বলত যে আসুন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই, তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল। আরেকভাবে দেখুন, ধরুন, সুপ্রিম কোর্টে রায় হয়নি। তাহলে কি এই সংসদের এখতিয়ার ছিল না তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের?
প্রথম আলো সরকারই বিএনপিকে সংসদ বয়কট ও হরতালের দিকে ঠেলে দিল?
মওদুদ আহমদ আমার মনে হয়, বিরোধী দলের জন্য সব কটি দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো রকমের সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা বা কোনো রকম সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, সেটা থেকে এই সরকার সম্পূর্ণভাবে সরে গেছে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হলো তাঁর ব্রেইন চাইল্ড। এখন তিনি তাঁর সেই চাইল্ডকে নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করবেন, সেটা দেশের মানুষ আশা করেনি।
প্রথম আলো দেশবাসী এখন দেখবে, একটি দল (আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাসের পর মাস জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছে, তখন যারা (বিএনপি) এর বিরোধী ছিল, এখন তারাই আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
মওদুদ আহমদ এটা হলো আমাদের ইতিহাসের পরিহাস। তর্কের খাতিরে বলছি, একই দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আর আন্দোলন করবেই না, তা কিন্তু ঠিক নয়। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে আর তারা যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে উদ্যোগী হয়, তখন আওয়ামী লীগ কিন্তু আবার আন্দোলন করবে।
প্রথম আলো তাহলে এই যে পরিহাসের রাজনীতি, এ থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই?
মওদুদ আহমদ আপাতত নেই বলেই মনে হচ্ছে।
প্রথম আলো তাহলে এর বিকল্প কী?
মওদুদ আহমদ বিকল্প তো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে সরকারের পক্ষের শক্তি, অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষের শক্তি। সরকার যদি বুদ্ধিমান হতো, তাহলে সিদ্ধান্ত উন্মুক্ত রেখে আলোচনার জন্য বলতে পারত।
প্রথম আলো যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পরও বিশেষ কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। সংসদেও সংবিধান সংশোধনের বিল ওঠেনি। প্রধানমন্ত্রীও আলাপ-আলোচনার পথ খোলা আছে বলেই উল্লেখ করেছেন।
মওদুদ আহমদ না, কোনো পথ খোলা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলে দিয়েছেন, সেখানে বিশেষ কমিটির আর কী মূল্য আছে? তারা কি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আসতে পারবে? সেই ক্ষমতা কমিটির আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে না।
প্রথম আলো বিএনপি তাহলে এ বিষয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব লিখিতভাবে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পারে।
মওদুদ আহমদ আমরা তো বলেছি, সংবিধানে বর্তমানে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রয়েছে, সেভাবেই থাকবে।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপির অবস্থান স্ববিরোধী। আপনারা একদিকে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বর্তমান রূপে বহাল থাকবে; আবার একই সঙ্গে বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে মানবেন না।
মওদুদ আহমদ না, এখানে কোনো স্ববিরোধিতা নেই।
প্রথম আলো সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই আছে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর অব্যবহিত পূর্ববর্তী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেবেন।
মওদুদ আহমদ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় শুধু কি একা বিচারপতি খায়রুল হকই প্রধান উপদেষ্টা হতে যোগ্য? তারপর অ্যাপিলেট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রয়েছেন। সুতরাং এখানে কোনো সংঘাত নেই। বিচারপতি খায়রুল হককেই একমাত্র প্রধান উপদেষ্টা হতে হবে, সেটা কি আমাদের সংবিধানে আছে? বরং আছে, কোনো কারণে তিনি যদি না হতে পারেন, তাহলে পরবর্তী বিকল্প থেকে বেছে নিতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন, সংবিধানে এ বিষয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। কারও মানা না-মানার প্রশ্ন নেই। বিচারপতি খায়রুল হক যদি স্বেচ্ছায় অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলেই শুধু আপনি পরবর্তী বিকল্পে যেতে পারেন।
মওদুদ আহমদ বিচারপতি খায়রুল হক যাতে প্রধান উপদেষ্টা হতে অপারগতা জানান, সেটা আমরা দেখব। বিচারপতি কে এম হাসানকে অপারগতা প্রকাশ করতে হয়েছিল।
প্রথম আলো প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিচারপতি খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণে যে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতে বলা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। আপনার অভিমত কী?
মওদুদ আহমদ এই অভিমতের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি।
প্রথম আলো ধন্যবাদ।
মওদুদ আহমদ ধন্যবাদ।
মওদুদ আহমদ এই বক্তব্য সত্য নয়। সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় সংসদ বা জনগণের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। আমাদের সংবিধানের কোথাও লেখা নেই যে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় জনগণ মানতে বাধ্য বা সংসদ মানতে বাধ্য। বিশেষ করে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে। আমাদের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিভিউ করার এখতিয়ার স্বীকৃত।
মওদুদ আহমদ হ্যাঁ, সেটা ঠিক। সুপ্রিম কোর্ট যেকোনো বিষয়ে রায় দিতে পারেন।
প্রথম আলো সুতরাং সেই সব রায়ের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মওদুদ আহমদ আপনি যদি সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ পড়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন, সেখানে লেখা আছে, আপিল বিভাগের কোনো আইন বা ঘোষণা হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।
প্রথম আলো তাহলে কি আপনি বলতে চান, অষ্টম সংশোধনীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, সেটা আপনারা মানে নির্বাহী বিভাগ না মানলেও পারতেন। সেই সুযোগ কি খোলা ছিল?
মওদুদ আহমদ সরকার যদি চাইত তাহলে সেটা করতে পারত। সরকার সেই রায় অবজ্ঞা করতে পারত। ভারতে এমন অনেক রায় হয়েছে, যেখানে সংসদ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা বন্ধ করে দিয়েছে। সংসদকে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য করবেন, এমন কোনো উদাহরণ দুনিয়ায় নেই।
প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না রাখার প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল দিয়েছে। এ ছাড়া আইনি পদক্ষেপ কিংবা আলাপ-আলোচনার বিকল্প খুঁজে দেখবে কি বিএনপি?
মওদুদ আহমদ না, সরকার তো সেই জায়গা রাখেনি। এখন বিএনপিকে প্রস্তাব দিতে বলা একটা তামাশা। কারণ, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। তারা সরকারি দল, তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এখানে আমাদের সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ কোথায়? তারা যদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে বলত যে আসুন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই, তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল। আরেকভাবে দেখুন, ধরুন, সুপ্রিম কোর্টে রায় হয়নি। তাহলে কি এই সংসদের এখতিয়ার ছিল না তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের?
প্রথম আলো সরকারই বিএনপিকে সংসদ বয়কট ও হরতালের দিকে ঠেলে দিল?
মওদুদ আহমদ আমার মনে হয়, বিরোধী দলের জন্য সব কটি দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো রকমের সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা বা কোনো রকম সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, সেটা থেকে এই সরকার সম্পূর্ণভাবে সরে গেছে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হলো তাঁর ব্রেইন চাইল্ড। এখন তিনি তাঁর সেই চাইল্ডকে নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করবেন, সেটা দেশের মানুষ আশা করেনি।
প্রথম আলো দেশবাসী এখন দেখবে, একটি দল (আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাসের পর মাস জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছে, তখন যারা (বিএনপি) এর বিরোধী ছিল, এখন তারাই আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।
মওদুদ আহমদ এটা হলো আমাদের ইতিহাসের পরিহাস। তর্কের খাতিরে বলছি, একই দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আর আন্দোলন করবেই না, তা কিন্তু ঠিক নয়। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে আর তারা যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে উদ্যোগী হয়, তখন আওয়ামী লীগ কিন্তু আবার আন্দোলন করবে।
প্রথম আলো তাহলে এই যে পরিহাসের রাজনীতি, এ থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই?
মওদুদ আহমদ আপাতত নেই বলেই মনে হচ্ছে।
প্রথম আলো তাহলে এর বিকল্প কী?
মওদুদ আহমদ বিকল্প তো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে সরকারের পক্ষের শক্তি, অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষের শক্তি। সরকার যদি বুদ্ধিমান হতো, তাহলে সিদ্ধান্ত উন্মুক্ত রেখে আলোচনার জন্য বলতে পারত।
প্রথম আলো যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পরও বিশেষ কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। সংসদেও সংবিধান সংশোধনের বিল ওঠেনি। প্রধানমন্ত্রীও আলাপ-আলোচনার পথ খোলা আছে বলেই উল্লেখ করেছেন।
মওদুদ আহমদ না, কোনো পথ খোলা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলে দিয়েছেন, সেখানে বিশেষ কমিটির আর কী মূল্য আছে? তারা কি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আসতে পারবে? সেই ক্ষমতা কমিটির আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে না।
প্রথম আলো বিএনপি তাহলে এ বিষয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব লিখিতভাবে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পারে।
মওদুদ আহমদ আমরা তো বলেছি, সংবিধানে বর্তমানে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রয়েছে, সেভাবেই থাকবে।
প্রথম আলো কিন্তু বিএনপির অবস্থান স্ববিরোধী। আপনারা একদিকে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বর্তমান রূপে বহাল থাকবে; আবার একই সঙ্গে বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে মানবেন না।
মওদুদ আহমদ না, এখানে কোনো স্ববিরোধিতা নেই।
প্রথম আলো সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই আছে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর অব্যবহিত পূর্ববর্তী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেবেন।
মওদুদ আহমদ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় শুধু কি একা বিচারপতি খায়রুল হকই প্রধান উপদেষ্টা হতে যোগ্য? তারপর অ্যাপিলেট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রয়েছেন। সুতরাং এখানে কোনো সংঘাত নেই। বিচারপতি খায়রুল হককেই একমাত্র প্রধান উপদেষ্টা হতে হবে, সেটা কি আমাদের সংবিধানে আছে? বরং আছে, কোনো কারণে তিনি যদি না হতে পারেন, তাহলে পরবর্তী বিকল্প থেকে বেছে নিতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন, সংবিধানে এ বিষয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। কারও মানা না-মানার প্রশ্ন নেই। বিচারপতি খায়রুল হক যদি স্বেচ্ছায় অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলেই শুধু আপনি পরবর্তী বিকল্পে যেতে পারেন।
মওদুদ আহমদ বিচারপতি খায়রুল হক যাতে প্রধান উপদেষ্টা হতে অপারগতা জানান, সেটা আমরা দেখব। বিচারপতি কে এম হাসানকে অপারগতা প্রকাশ করতে হয়েছিল।
প্রথম আলো প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিচারপতি খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণে যে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতে বলা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। আপনার অভিমত কী?
মওদুদ আহমদ এই অভিমতের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি।
প্রথম আলো ধন্যবাদ।
মওদুদ আহমদ ধন্যবাদ।
No comments