কিবরিয়া হত্যার বিচার-আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি by নাজলী কিবরিয়া ও রেজা কিবরিয়া
ছয় বছর পার হতে চলল। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আমাদের বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া, জাতিসংঘের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি, বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সাংসদ আততায়ীর গ্রেনেড হামলায় সিলেটের হবিগঞ্জে নৃশংসভাবে নিহত হন। আমরা এখনো তাঁর হত্যার সুবিচারের অপেক্ষায় আছি।
শাহ এ এম এস কিবরিয়ার দীর্ঘ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কর্মজীবনকে আলাদা করে চেনা যায় মানুষের সেবামুখিনতা দিয়ে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। একাত্তরের ৪ আগস্ট তিনি ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের সংগ্রামে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গড়ে তোলার কাজ করেন এবং ওই মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের অন্যতম প্রধান কারিগর হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়। সেই আমলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে।
২০০৫ সালের সেই মর্মান্তিক দিনের পর অবশ্যই বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমাদের বাবার হত্যাকাণ্ডের সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে বিদায় নেয়। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন রয়েছে সেই আওয়ামী লীগ, আমাদের বাবা যে দলটিকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সেবা করে গেছেন। কিন্তু অনেক কিছু বদলালেও অনেক কিছু বদলায়নি। তার পরও আমাদের এখনো সেই হত্যাকাণ্ডের একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য হাপিত্যেশ করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো সুবিচারের অপেক্ষায়।
২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মামলাটি নিয়ে সিআইডি একটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। তাতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাসহ ১০ জনের নাম আসে। এর পরও মূল যে স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ, সেই হত্যার উদ্দেশ্য বা মোটিভ এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না।
সুবিচার পাওয়ার সংকল্প থেকে আমরা সেই অভিযোগপত্রের বিরোধিতা করি। অবশেষে, গত সপ্তাহের আগে সংবাদপত্রের খবরের মাধ্যমে আমাদের জানতে হলো, সিআইডি একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিতে যাচ্ছে, তাতে ১৪ জন আসামির নাম রয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, প্রস্তাবিত অভিযোগপত্রও কিছু গুরুতর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে; বিশেষ করে বলা যায়, কে ছিল এই হামলার পরিকল্পনাকারী বা হোতা? একজন মানুষ, যিনি তাঁর মৃত্যুর সময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকাঠামোয় কোনো আনুষ্ঠানিক দায়িত্বে ছিলেন না, যাঁকে এমনকি দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদস্য বলেও ভাবা হতো না, তাঁকে হত্যার জন্য এত আয়োজন কে করল? কী ছিল তার কারণ, তাদের উদ্দেশ্য? আনুষঙ্গিক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া তদন্তকাজ পূর্ণাঙ্গ বলে দাবি করা যায় না। সে জন্যই আমরা এখনো সুবিচারের প্রত্যাশায় আছি।
বেশ কিছু সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, সম্ভাব্য অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে যে ১৪ জনের নাম এসেছে, তাঁদের বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে অন্য মামলার আসামি হিসেবে কারাবন্দী রয়েছেন। এতে আছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নাম। অভিযোগ আছে, তিনি গ্রেনেড নিক্ষেপকারীদের আশ্রয়দানের অনুমতি দিয়েছিলেন, যেখানে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের নাম ও অন্যান্য হুজি-সংশ্ল্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, এঁরা সরাসরি হামলায় জড়িত ছিলেন অথবা সে বিষয়ে জানতেন। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য ভারতীয় নাগরিক আবু ইউসুফ বাট ওরফে মজিদ বাটের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, এই ১৪টি নাম উপস্থাপনের পাশাপাশি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১০ ব্যক্তির বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মামলার এই অবস্থায় আমাদের এবং আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দূরে থাক, বরং আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীরি জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের আলোকে এই মামলার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কি তদন্ত করা হয়েছে? তা ছাড়া অভিযোগ অনুসারে হুজি এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করলেও এটা বোঝা যায়, তাদের ভূমিকা ছিল ‘ভাড়াটে খুনির’। তাহলে তারা কাদের হুকুম তামিল করেছিল?
আমরা এও জানতে পেরেছি, সে সময় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককে কখনোই এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কেন তা করা হয়নি? তদন্তকারীরা কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে সত্যি সত্যিই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন? অথচ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল, এ ঘটনায় হারিছ চৌধুরীরও একটা ভূমিকা ছিল। (সূত্র: ডেইলি স্টার, ১৩-১১-২০০৯)
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, হারিছ চৌধুরী ও আবদুস সালাম পিন্টু দুজনই সে সময় সত্য আড়াল করা এবং ঘাতকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা বাবরের মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
হারিছ চৌধুরী এখন লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। তদন্ত কর্মকর্তা কি যুক্তরাজ্য সফর করে হারিছের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন? সে সময় সংসদের স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারও কেন সেদিন (২৭ জানুয়ারি) সব যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন? যেমন তিনি বলেছিলেন, আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনতে তিনি কোনো হেলিকপ্টার পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন না?
বহুল আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও কিবরিয়া হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখন পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা অসম্পূর্ণ তদন্তের এসব ফলাফল প্রত্যাখ্যান করি। সব তদন্ত দলকেই রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ফরেনসিক বিষয়ে তদন্ত করায় তাঁদের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অনুসন্ধানের সামর্থ্য না থাকার জন্যও বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়নি।
সাম্প্রতিক কালে দেশে আরও কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সেসব ঘটনার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁরাও সুবিচারের সন্ধানে আমাদের প্রচেষ্টার বিফলতা দেখে হতাশ হচ্ছেন।
আমাদের মা আসমা কিবরিয়া প্রায়ই হতাশার সঙ্গে বলেন, কখনোই আমরা হয়তো পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দেখতে পারব না। এ ব্যাপারে কি আসলেই কোনো রাজনৈতিক অনীহা রয়েছে? বর্তমান অভিযোগপত্রে একই সঙ্গে বেশ কিছু দিক যেমন উঠে এসেছে, আবার অনেক কিছু রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। এসব থেকে মনে হওয়া কঠিন, নতুন তদন্তে সত্যিকারভাবে কিছু অর্জিত হয়েছে। বরং এটাই মনে হয়, সবকিছু একটা অচলাবস্থায় এসে পতিত হয়েছে। তদন্তকারী ব্যক্তিরা মনে হয় তাঁদের সব সামর্থ্য ও সম্পদ খরচ করে ফেলেছেন।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে আমরা আহ্বান জানাই, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল নিয়োজিত করুন।
নাজলী কিবরিয়া ও রেজা কিবরিয়া: শাহ এ এম এস কিবরিয়ার কন্যা ও পুত্র।
২০০৫ সালের সেই মর্মান্তিক দিনের পর অবশ্যই বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমাদের বাবার হত্যাকাণ্ডের সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে বিদায় নেয়। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন রয়েছে সেই আওয়ামী লীগ, আমাদের বাবা যে দলটিকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সেবা করে গেছেন। কিন্তু অনেক কিছু বদলালেও অনেক কিছু বদলায়নি। তার পরও আমাদের এখনো সেই হত্যাকাণ্ডের একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য হাপিত্যেশ করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো সুবিচারের অপেক্ষায়।
২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মামলাটি নিয়ে সিআইডি একটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। তাতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাসহ ১০ জনের নাম আসে। এর পরও মূল যে স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ, সেই হত্যার উদ্দেশ্য বা মোটিভ এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না।
সুবিচার পাওয়ার সংকল্প থেকে আমরা সেই অভিযোগপত্রের বিরোধিতা করি। অবশেষে, গত সপ্তাহের আগে সংবাদপত্রের খবরের মাধ্যমে আমাদের জানতে হলো, সিআইডি একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিতে যাচ্ছে, তাতে ১৪ জন আসামির নাম রয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, প্রস্তাবিত অভিযোগপত্রও কিছু গুরুতর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে; বিশেষ করে বলা যায়, কে ছিল এই হামলার পরিকল্পনাকারী বা হোতা? একজন মানুষ, যিনি তাঁর মৃত্যুর সময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকাঠামোয় কোনো আনুষ্ঠানিক দায়িত্বে ছিলেন না, যাঁকে এমনকি দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদস্য বলেও ভাবা হতো না, তাঁকে হত্যার জন্য এত আয়োজন কে করল? কী ছিল তার কারণ, তাদের উদ্দেশ্য? আনুষঙ্গিক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া তদন্তকাজ পূর্ণাঙ্গ বলে দাবি করা যায় না। সে জন্যই আমরা এখনো সুবিচারের প্রত্যাশায় আছি।
বেশ কিছু সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, সম্ভাব্য অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে যে ১৪ জনের নাম এসেছে, তাঁদের বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে অন্য মামলার আসামি হিসেবে কারাবন্দী রয়েছেন। এতে আছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নাম। অভিযোগ আছে, তিনি গ্রেনেড নিক্ষেপকারীদের আশ্রয়দানের অনুমতি দিয়েছিলেন, যেখানে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের নাম ও অন্যান্য হুজি-সংশ্ল্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, এঁরা সরাসরি হামলায় জড়িত ছিলেন অথবা সে বিষয়ে জানতেন। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য ভারতীয় নাগরিক আবু ইউসুফ বাট ওরফে মজিদ বাটের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, এই ১৪টি নাম উপস্থাপনের পাশাপাশি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১০ ব্যক্তির বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মামলার এই অবস্থায় আমাদের এবং আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দূরে থাক, বরং আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাশ্মীরি জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের আলোকে এই মামলার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কি তদন্ত করা হয়েছে? তা ছাড়া অভিযোগ অনুসারে হুজি এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করলেও এটা বোঝা যায়, তাদের ভূমিকা ছিল ‘ভাড়াটে খুনির’। তাহলে তারা কাদের হুকুম তামিল করেছিল?
আমরা এও জানতে পেরেছি, সে সময় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককে কখনোই এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কেন তা করা হয়নি? তদন্তকারীরা কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে সত্যি সত্যিই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন? অথচ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল, এ ঘটনায় হারিছ চৌধুরীরও একটা ভূমিকা ছিল। (সূত্র: ডেইলি স্টার, ১৩-১১-২০০৯)
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, হারিছ চৌধুরী ও আবদুস সালাম পিন্টু দুজনই সে সময় সত্য আড়াল করা এবং ঘাতকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা বাবরের মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
হারিছ চৌধুরী এখন লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। তদন্ত কর্মকর্তা কি যুক্তরাজ্য সফর করে হারিছের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন? সে সময় সংসদের স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারও কেন সেদিন (২৭ জানুয়ারি) সব যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন? যেমন তিনি বলেছিলেন, আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনতে তিনি কোনো হেলিকপ্টার পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন না?
বহুল আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও কিবরিয়া হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখন পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা অসম্পূর্ণ তদন্তের এসব ফলাফল প্রত্যাখ্যান করি। সব তদন্ত দলকেই রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ফরেনসিক বিষয়ে তদন্ত করায় তাঁদের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অনুসন্ধানের সামর্থ্য না থাকার জন্যও বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়নি।
সাম্প্রতিক কালে দেশে আরও কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সেসব ঘটনার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁরাও সুবিচারের সন্ধানে আমাদের প্রচেষ্টার বিফলতা দেখে হতাশ হচ্ছেন।
আমাদের মা আসমা কিবরিয়া প্রায়ই হতাশার সঙ্গে বলেন, কখনোই আমরা হয়তো পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দেখতে পারব না। এ ব্যাপারে কি আসলেই কোনো রাজনৈতিক অনীহা রয়েছে? বর্তমান অভিযোগপত্রে একই সঙ্গে বেশ কিছু দিক যেমন উঠে এসেছে, আবার অনেক কিছু রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। এসব থেকে মনে হওয়া কঠিন, নতুন তদন্তে সত্যিকারভাবে কিছু অর্জিত হয়েছে। বরং এটাই মনে হয়, সবকিছু একটা অচলাবস্থায় এসে পতিত হয়েছে। তদন্তকারী ব্যক্তিরা মনে হয় তাঁদের সব সামর্থ্য ও সম্পদ খরচ করে ফেলেছেন।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে আমরা আহ্বান জানাই, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল নিয়োজিত করুন।
নাজলী কিবরিয়া ও রেজা কিবরিয়া: শাহ এ এম এস কিবরিয়ার কন্যা ও পুত্র।
No comments