কংগ্রেস-তৃণমূল দ্বন্দ্ব চরমে, দুই পক্ষের বাগ্যুদ্ধ

শ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র আট মাসের মধ্যেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের শরিকি দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে এই দুই দলের মধুচন্দ্রিমা। এখন দুই দলই একে অন্যের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এখন তৃণমূল আর ছেড়ে কথা বলছে না কংগ্রেসকে। চলছে এখন ‘ভাষাসন্ত্রাস’ আর কুরুচিকর মন্তব্যের লড়াই। সোমবার কলকাতার ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে যুব তৃণমূল কংগ্রেস আহূত এক সমাবেশে তৃণমূল নেতারা একহাত নেন জাতীয় কংগ্রেসকে। আর এখানেই চলে কংগ্রেসকে উদ্দেশ করে কুরুচিকর নানা মন্তব্য।


তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শিশির অধিকারী বলেন, ‘মানুষের দাঁত খিঁচুনি সহ্য করা যায়, কিন্তু বাঁদরের দাঁত খিঁচুনি সহ্য করা যায় না। চুলকাবেন না। চুলকে দেব। জঙ্গলমহল ও নন্দীগ্রামে আমাদের ভালো ভালো ডাক্তার আছে, ওষুধ দিয়ে দেব।’
পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কংগ্রেসের সাংসদ দীপা দাসমুন্সিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘উনি যদি সতী সাবিত্রী হতেন, তাহলে অসুস্থ স্বামীর সেবা করতেন। তা না করে এসব করে বেড়াচ্ছেন।’ প্রসঙ্গত, দীপা দাসমুন্সির স্বামী ভারতের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি তিন বছর ধরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আর একধাপ এগিয়ে তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের সাংসদ দীপা দাসমুন্সিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘শুধু লাল টিপ পরে কেন, হাতে একটা লাল ঝান্ডা নিলেই তো হয়।’ আরেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দেখি মমতার ছবি ছাড়া কীভাবে নির্বাচনে জিতে আসতে পারেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘কংগ্রেস সাপের মুখে চুমু খাচ্ছে, আবার ব্যাঙের মুখেও। কংগ্রেসকে বলতে হবে তারা সিপিএমের সঙ্গে আছে কি না।’
মন্ত্রী সৌগত রায় বলেন, ‘মমতার দয়ায় তাঁরা মন্ত্রিসভায় এসেছেন। তাঁদের ছাড়া তৃণমূল একাই মন্ত্রিসভা গড়তে পারত।’ তৃণমূলের সাংসদ সুব্রত বকসি বলেন, কংগ্রেস ‘পাজি’র দল।
এদিন এর পাল্টা জবাবও দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ কাম্য নয়। দীপা দাসমুন্সি বলেছেন, ‘যিনি প্রিয়বাবু সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, তাঁর জীবনের প্রথম চাকরিটা কিন্তু প্রিয়বাবুর সৌজন্যেই হয়েছিল।’ দীপা আরও বলেছেন, মমতার ছবি নিয়ে তিনি জেতেননি। জিতেছেন ইন্দিরা আর সোনিয়ার ছবি নিয়ে।’
কংগ্রেসের নেতা আবদুল মান্নান প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘এতই যদি শক্তি থাকে তবে বিধানসভা ভেঙে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে নতুন করে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসে দেখাক না। দিক না রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। দেখি কত ক্ষমতা আছে ওদের।’
একই দিন কেন্দ্রীয় শ্রমিকসংগঠনের ডাকে ধর্মতলায় আহূত এক জনসভায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন শ্রমিকসংগঠন ইনটাকের কেন্দ্রীয় সভাপতি কংগ্রেসের সাংসদ জি সঞ্জীব রেড্ডি মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বার্থপর, দাম্ভিক ও অহংকারী মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হবে। একমাত্র ভগবানই তাঁকে বাঁচাতে পারেন। আমরা চাই তাঁর শুভবোধের উদয় হোক।’

No comments

Powered by Blogger.