জিমন্যাস্টিকসের চার আক্তার by মাহফুজ রহমান
বৃষ্টির সঙ্গে দেখা করার আগে এক পসলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। জল-কাদা মাড়িয়ে ঢাকার উত্তরার ফ্যামিলিস ফর চিলড্রেন নামের এতিমখানার সিঁড়ির দোরগোড়ায় পা রেখেছি আমরা। প্রায় হুড়মুড় করেই নেমে এলেন বৃষ্টি! বৃষ্টি বলতে অনিতা আক্তার বৃষ্টি। গত বছরের ২৮ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় হয়ে গেল ‘সুলতানা কামাল চতুর্থ দক্ষিণ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস’ প্রতিযোগিতা । সেখানে দলগতভাবে একটি রুপা এবং একটি ব্রোঞ্জ জিতেছেন বাংলাদেশের চার মেয়ে।
অনিতা আক্তার তাঁদেরই একজন। বাকি তিনজন—ফারজানা আক্তার, মুশফিকা আক্তার ও সাথী আক্তার। চারজনের নামের মধ্যে তো মিল আছেই, আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেলাতেও। তাঁরা সবাই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) শিক্ষার্থী।
সদ্যই বিকেএসপি থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন অনিতা। এ বছর ডিঙিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের ঘর। ফলাফলও বেশ ভালো, জিপিএ ৪ দশমিক ৯০। ভালো করেছিলেন নিম্ন মাধ্যমিকেও। অনিতা যে এমন ফলাফল করবেন, বন্ধুরা মনে হয় আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। কারণ, বেশ অনেক আগে থেকেই অনিতার নামের সঙ্গে ওরা যোগ করেছে ‘অলরাউন্ডার’ শব্দটি। অলরাউন্ডার অনিতার বেড়ে ওঠা এতিমখানায়ই। বলছিলেন নিজের কথা, ‘একদম ছোট থেকেই এখানে আমি। বিকেএসপিতে গিয়ে ভর্তি হই চতুর্থ শ্রেণীতে। তার আগে এখানে আমাদের দুই বড় ভাইয়ের কাছে জিমন্যাস্টিকসের হাতেখড়ি। বিকেএসপিতে গিয়ে শুরু হলো পুরোদমে প্রশিক্ষণ। সেটা ২০০০ সালের কথা। ২০০৭ সালে প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। সেখানে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে আমি হই ব্যক্তিগতভাবে রানারআপ। জিতে নিই একটা সোনা, দুটি রুপা আর একটি ব্রোঞ্জ। এরপর ২০১০ সালে সিনিয়র লেভেলেও একটি সোনা, তিনটি রুপা জিতেছিলাম।’ এতিমখানা থেকে বিকেএসপি, সেখান থেকে জাতীয় দলের হয়ে নাম লেখানো। অনিতার এই বেড়ে ওঠা একদম কাছ থেকে দেখেছেন ফ্যামিলিস ফর চিলড্রেনের পরিচালক জোতিন্দ্র কুমার দাস। অনিতাকে নিয়ে তাঁর গর্বের শেষ নেই, ‘অনিতাকে একদম জন্মের পরই এখানে নিয়ে আসি। কে ওর মা, কে বাবা, কিছুই জানা নেই। মেয়েটা আমাকেই বাবা ডাকে। ও আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আর কদিন বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে অনিতা। ওর জন্য শুভকামনা।’
বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে নামী খেলোয়াড় হবে। কিন্তু গাজীপুরের মুশফিকা যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হলো, বাবা তখন না-ফেরার দেশে! বাবার স্বপ্নটাকে নিজের করে নিয়ে সামনে ছুটছে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এই খেলোয়াড়। স্বপ্নটা আরও ডালপালা মেলেছে মুশফিকার মনের আকাশে, ‘আমাদের সুযোগ-সুবিধা আর প্রশিক্ষণের অভাব ছিল। তার পরও সর্বশেষ প্রতিযোগিতাটিতে বেশ ভালো করেছি আমরা। সামনে আরও বেশি বেশি খেলার সুযোগ পেলে ফলাফল নিশ্চয়ই আরও ভালো হবে। আর জিমন্যাস্টিকসকে জনপ্রিয় করে তুলতে, বিশেষ করে মেয়েদের আগ্রহী করে তুলতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য জিমন্যাস্টিকস যে বেশ উপযোগী একটা খেলা, এটা বোঝা গেল এই চার কন্যার গর্বিত কোচ কাজী আকরাম আলীর কথায়, ‘আমাদের দেশে তো জিমন্যাস্টিকস ততটা জনপ্রিয় খেলা নয়। এর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় গুটি কয়েক জায়গায়। আছে অনেক সীমাবদ্ধতা। তার পরও বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। বিশেষ করে মেয়েরা। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে আরও অনেক মেয়ে জিমন্যাস্টিকসে আসতে পারে। জিমন্যাস্টিকসে ভালো করার দারুণ সুযোগ আছে বাংলাদেশের মেয়েদের।’
কিশোরগঞ্জের ফারজানার মতামত, স্কুলপর্যায়েও পৌঁছে দেওয়া হোক জিমন্যাস্টিকস। বিকেএসপির দশম শ্রেণীর এই ছাত্রীর স্বপ্ন, জিমন্যাস্টিকস চালিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য কিছু একটা করার অপেক্ষায় আছে সে।
অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে সোনা জেতার অপেক্ষায় আছে সাথী আক্তার। দলগতভাবে তো ছিলই, সুলতানা কামাল চতুর্থ দক্ষিণ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে সাথী ব্যক্তিগতভাবে জিতেছে একটা ব্রোঞ্জ পদক। নারায়ণগঞ্জের সাথী বলল তার স্বপ্নের কথা, ‘স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের অনেক অনেক মেয়ে জিমন্যাস্টিকসে আসছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সবাই ভালো করছি আমরা। আর স্বপ্ন দেখি, অলিম্পিকের আসরে আমার গলায় ঝুলছে একটা সোনার মেডেল!’
সদ্যই বিকেএসপি থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন অনিতা। এ বছর ডিঙিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের ঘর। ফলাফলও বেশ ভালো, জিপিএ ৪ দশমিক ৯০। ভালো করেছিলেন নিম্ন মাধ্যমিকেও। অনিতা যে এমন ফলাফল করবেন, বন্ধুরা মনে হয় আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। কারণ, বেশ অনেক আগে থেকেই অনিতার নামের সঙ্গে ওরা যোগ করেছে ‘অলরাউন্ডার’ শব্দটি। অলরাউন্ডার অনিতার বেড়ে ওঠা এতিমখানায়ই। বলছিলেন নিজের কথা, ‘একদম ছোট থেকেই এখানে আমি। বিকেএসপিতে গিয়ে ভর্তি হই চতুর্থ শ্রেণীতে। তার আগে এখানে আমাদের দুই বড় ভাইয়ের কাছে জিমন্যাস্টিকসের হাতেখড়ি। বিকেএসপিতে গিয়ে শুরু হলো পুরোদমে প্রশিক্ষণ। সেটা ২০০০ সালের কথা। ২০০৭ সালে প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। সেখানে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে আমি হই ব্যক্তিগতভাবে রানারআপ। জিতে নিই একটা সোনা, দুটি রুপা আর একটি ব্রোঞ্জ। এরপর ২০১০ সালে সিনিয়র লেভেলেও একটি সোনা, তিনটি রুপা জিতেছিলাম।’ এতিমখানা থেকে বিকেএসপি, সেখান থেকে জাতীয় দলের হয়ে নাম লেখানো। অনিতার এই বেড়ে ওঠা একদম কাছ থেকে দেখেছেন ফ্যামিলিস ফর চিলড্রেনের পরিচালক জোতিন্দ্র কুমার দাস। অনিতাকে নিয়ে তাঁর গর্বের শেষ নেই, ‘অনিতাকে একদম জন্মের পরই এখানে নিয়ে আসি। কে ওর মা, কে বাবা, কিছুই জানা নেই। মেয়েটা আমাকেই বাবা ডাকে। ও আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আর কদিন বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে অনিতা। ওর জন্য শুভকামনা।’
বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে নামী খেলোয়াড় হবে। কিন্তু গাজীপুরের মুশফিকা যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হলো, বাবা তখন না-ফেরার দেশে! বাবার স্বপ্নটাকে নিজের করে নিয়ে সামনে ছুটছে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এই খেলোয়াড়। স্বপ্নটা আরও ডালপালা মেলেছে মুশফিকার মনের আকাশে, ‘আমাদের সুযোগ-সুবিধা আর প্রশিক্ষণের অভাব ছিল। তার পরও সর্বশেষ প্রতিযোগিতাটিতে বেশ ভালো করেছি আমরা। সামনে আরও বেশি বেশি খেলার সুযোগ পেলে ফলাফল নিশ্চয়ই আরও ভালো হবে। আর জিমন্যাস্টিকসকে জনপ্রিয় করে তুলতে, বিশেষ করে মেয়েদের আগ্রহী করে তুলতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য জিমন্যাস্টিকস যে বেশ উপযোগী একটা খেলা, এটা বোঝা গেল এই চার কন্যার গর্বিত কোচ কাজী আকরাম আলীর কথায়, ‘আমাদের দেশে তো জিমন্যাস্টিকস ততটা জনপ্রিয় খেলা নয়। এর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় গুটি কয়েক জায়গায়। আছে অনেক সীমাবদ্ধতা। তার পরও বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। বিশেষ করে মেয়েরা। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে আরও অনেক মেয়ে জিমন্যাস্টিকসে আসতে পারে। জিমন্যাস্টিকসে ভালো করার দারুণ সুযোগ আছে বাংলাদেশের মেয়েদের।’
কিশোরগঞ্জের ফারজানার মতামত, স্কুলপর্যায়েও পৌঁছে দেওয়া হোক জিমন্যাস্টিকস। বিকেএসপির দশম শ্রেণীর এই ছাত্রীর স্বপ্ন, জিমন্যাস্টিকস চালিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য কিছু একটা করার অপেক্ষায় আছে সে।
অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে সোনা জেতার অপেক্ষায় আছে সাথী আক্তার। দলগতভাবে তো ছিলই, সুলতানা কামাল চতুর্থ দক্ষিণ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে সাথী ব্যক্তিগতভাবে জিতেছে একটা ব্রোঞ্জ পদক। নারায়ণগঞ্জের সাথী বলল তার স্বপ্নের কথা, ‘স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের অনেক অনেক মেয়ে জিমন্যাস্টিকসে আসছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সবাই ভালো করছি আমরা। আর স্বপ্ন দেখি, অলিম্পিকের আসরে আমার গলায় ঝুলছে একটা সোনার মেডেল!’
No comments