বিভক্ত হচ্ছে ডিসিসি-নাগরিক সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত হবে তো?

বশেষে ভাগ করা হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি)। উত্তর ও দক্ষিণ_এ দুই ভাগে সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক হাজার ৫৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিশাল নগরীর ব্যবস্থাপনা একটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না_এমন অজুহাতেই ভাগ করে ফেলা হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে। ৯২টি ওয়ার্ডের একদিকে থাকছে ৫৬টি ওয়ার্ড, অন্যদিকে ৩৬টি। একটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলেই সিটি করপোরেশন দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে।


ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা ১২৩। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৪ মে এই সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর গত চার বছরেও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়নি। ফলে সিটি করপোরেশনের সেবা ব্যপস্থাপনায় এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক ওয়ার্ডে মৃত্যু এবং অন্যান্য কারণে কাউন্সিলরের পদ শূন্য হলেও সেসব পদে নির্বাচন হয়নি। সিটি করপোরেশন ভাগ করা হবে_এ চিন্তা থেকেই এত দিন নির্বাচন হয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাস। এর ভোটারসংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৯০। মহানগরীর এই দেড় কোটি মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেই দায়িত্ব কতটা পালন করতে পেরেছে, সে প্রশ্নটাই এখন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকার ৮০ শতাংশ রাস্তা ভালো থাকলেই সেটাকে নাগরিক সেবা বলা যাবে না; নাগরিক সেবা আরো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। এই নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বেশির ভাগটাই সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তালেও অনেক কিছুর জন্য আবার সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। ঢাকা মহানগরীর সমস্যা অনেক। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়। যেহেতেু নাগরিক সেবা নির্ভর করে অন্যদের ওপর, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সমন্বয় না থাকলে ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী মানুষের কাছে সব সেবা সঠিকভাবে পেঁৗছানো যাবে না। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও যানজটের সমস্যা থেকে মহানগরীর মানুষ মুক্তি পাবে না। এই সেবা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজউকের প্ল্যানিং সেক্টরকেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ একবার মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের একটি ধারণাও দিয়েছিলেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিক সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করা। এই নাগরিক সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করার কাজটি সবার আগে করতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে সেবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি। ঢাকা সিটি করপোরেশনে বসবাসকারী মানুষের জন্য নাগরিক সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত হোক, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সুসমন্বয় গড়ে উঠুক_এটাই আমাদের চাওয়া। সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর কোনো অজুহাতে যেন নির্বাচন বন্ধ হয়ে না যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ বা নতুন সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়তো সহজ হবে, কিন্তু তাতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ ব্যাহত হয়।

No comments

Powered by Blogger.