বেশি বেশি দুধ খান

মানুষের সুস্থ জীবনযাপন এবং দেহ, মন ও মস্তিষ্কের উপযুক্ত বিকাশের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। দুধ একটি সুষম খাদ্য। কারণ, দেহের প্রয়োজনীয় সব উপাদানই এর মধ্যে রয়েছে। এ জন্য দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। আজ ১১ জানুয়ারি, দুগ্ধ দিবস। দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবারের উপকারিতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য দিনটি পালন করা হয়।


এছাড়াও জীবনধারণের জন্য মূল্যবান এ খাদ্য উপকরণ দীর্ঘদিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধভাবে ব্যবহারের জন্যও মানুষকে ধারণা দেওয়া হয়। ১৮৭৮ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গাভীর তরল দুধকে সঠিক প্রক্রিয়ায় বোতলজাত অবস্থায় সরবরাহের পদ্ধতি চালু হয়। এটিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে ব্যবহারের জন্য শুষ্ক অবস্থায় রূপান্তর করা হয়, যা গুঁড়া দুধ হিসেবে পরিচিত। গুঁড়া দুধ হলো বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত দুগ্ধজাত পণ্য, যা তরল দুধকে বাষ্পায়িত করে শুষ্ক আকারে তৈরি করা হয়। এর একটা বিশেষ সুবিধা হলো, সংরক্ষণ করা। তরল দুধের চেয়ে এটা অনেক বেশিদিন ভালো অবস্থায় পাত্র বা বিশেষ ধরনের প্যাকেটে আবদ্ধ করে রাখা যায়। নিম্ন-আদ্রতাসম্পন্ন এ গুঁড়া দুধ হিমাঙ্ক বা ফ্রিজিং ছাড়াই সাধারণ তাপমাত্রায় বহুদিন রাখা যায়। আয়তন কমে যায় বলে পরিবহনেও সুবিধা। গুঁড়া দুধ উদ্ভাবনের আগে সাধারণ তরল দুধ রোদে শুঁকিয়ে ঘন পেস্টের মতো বানানো হতো। এভাবে এটা কিছুদিন ভালো রাখা যেত। বিশ্বের কিছু দেশ, যেমন_ অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ডে স্বাস্থ্যবান গাভী থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ উৎপন্ন হয় এবং তাদের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত দুধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুষ্ক আকারে গুঁড়া দুধে রূপান্তর করে সংরক্ষণ ও অন্যান্য দেশে রফতাানি করা হয়।
টি.এস. গ্রিমওয়েড প্রথম বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় শুষ্ক দুধ তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে গুঁড়া দুধ সাধারণভাবে ননফ্যাট ক্রিম মিল্ক বা পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ হিসেবে স্প্রে ড্রাইং পদ্ধতিতে তৈরি হয়। প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া দুধ শিশুদের খাবার উপযোগী করে বিশেষ ফরমূলায় উৎপাদনের পর বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমের্ স্বোচ্চ খাদ্যমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাজারে ছাড়া হয়। গুঁড়া দুধের সঙ্গে এ্যামিনো এসিড, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান মিশ্রিত থাকে। আদর্শ মাত্রা অনুসারে এ দুগ্ধজাত পণ্যের সঙ্গে ৩৬ ভাগ প্রোটিন, ৫২ ভাগ কার্বো-হাইড্রেট, ১.৩ ভাগ ক্যালসিয়াম, ১.৮ ভাগ পটাশিয়াম এবং বাকিটুকুতে অন্যান্য উপাদান থাকে।
দুধ থেকে নানা ধরনের সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার তৈরি করা হয়, যা আবালবৃদ্ধবনিতা সবার কাছেই প্রিয়। বিস্কুটের মতো শুকনো খাবার ছাড়াও কেক, পেস্টি, চকলেটসহ গোলাপজাম, চমচম, রসগোল্লা, সন্দেশসহ মিষ্টি জাতীয় নানা ধরনের খাবার তৈরিতে এর প্রচলন রয়েছে। এছাড়ও বাড়িতে চা, ক্ষীর, পায়েস ইত্যাদি তৈরিতেও দুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে দুগ্ধজাত খাবারের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। আমরা বলে থাকি_ 'মাছে-ভাতে বাঙালি' প্রচলিত এ উক্তির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। তবে অতীতেও আমাদের দেশে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখনও আছে। কথিত আছে, বাঙালিরা দুধ দিয়ে ৬ হাজার ৬শ' ৩৬ ধরনের খাবার তৈরি করতে জানত। এ থেকেই অতীতে আমাদের দেশে অর্থাৎ বাঙালি সমাজে দুধের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এম.এ. ওহাব

No comments

Powered by Blogger.