এই চাদর অন্যরকম

প্রচণ্ড শীতে উষ্ণতায় চাই পঞ্চ। চাদর এবং সোয়েটারের ফিউশনে তৈরি এ পোশাকের নামকরণ করা হয়েছে পঞ্চ, যা সাম্প্রতিক প্রয়োজনের সঙ্গে ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও পরিচিত হয়েছে। লিখেছেন জান্নাতুল এ্যানিশীতের কারণে পোশাকের সঙ্গে সোয়েটার, মাফলার, চাদর পরতে হচ্ছে_ যা খুবই জবরজং পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কিছু করারও থাকে না। শীত ঠেকাতে ফ্যাশনে তো একটু বিড়ম্বনা হবেই।


'পঞ্চ' এ দেশে বহুকাল আগে থেকে ব্যবহার হলেও ফ্যাশনের সঙ্গে এর তেমন একটা সম্পর্ক ছিল না। ইদানীং প্রয়োজনের খাতিরে হোক আর ফ্যাশনের কারণেই বলি, তরুণ প্রজন্ম 'পঞ্চ' নামক এ শীতবস্ত্রটি স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছে। এদেশে শীতের অনুভূতি সারাদিন একেক সময় একেক রকম থাকে। সকালে খুব ঠাণ্ডা আবার দুপুরে হালকা গরম আর সন্ধ্যার পর আবার শীতের তীব্রতা। এ সময় এমন একটি পোশাক প্রয়োজন যা শীতের সময় পুরো শরীর ঢেকে রাখবে। আবার দিনের কোনো এক সময় গরম পড়লে তা খুলে ভাঁজ করে রাখা যাবে। পঞ্চ এমনই একটি পোর্টেবল পোশাক, যা স্টাইলিশ লুক আনার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনও মেটায়।
সাদাকালোর ডিজাইনার তাহসিনা শাহীন বলেন, 'পঞ্চ সাধারণত উল দ্বারা তৈরি করা হতো; কিন্তু আমরা দেশি কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আর দেশি কাপড়ের মধ্যে খাদিকেই বেছে নিয়েছি। খাদি কাপড় বেশ ভারী হয়, যা শীত নিবারণে খুবই দরকার।' পঞ্চের মেটেরিয়ালসের ক্ষেত্রে যেমন পরিবর্তন এসেছে, ডিজাইনেও এসেছে বৈচিত্র্য। তিনি বলেন, 'পাঁচটি কোনা থাকত বলে এ পোশাকটির নাম রাখা হয়েছিল পঞ্চ। ধীরে ধীরে এর ডিজাইনে পরিবর্তন এসেছে। শাল যখন আমরা ড্রেসের মতো করে পরি, তখন আমরা তাকে পঞ্চ বলি।' পঞ্চ তৈরিতে খুব বেশি ঝামেলা নেই। কেউ যদি হাতে তৈরি করে নিতে চান তাহলে মেয়েদের জন্য আড়াই গজ এবং ছেলেদের জন্য তিন গজ কাপড় লাগবে। চাদরের জন্য সাধারণত এই মাপ লাগে। তবে পরার সময় এটি চাদরের স্টাইলে মুড়িয়ে পরা যাবে না। কাপড়ের খণ্ডটি কাঁধের ওপর থেকে দু'পাশে সমান মাপে ঝুলিয়ে জামার ঢঙে বোতাম বা চিকন ফিতা লাগিয়ে নিতে পারেন। এমনভাবে তৈরি করবেন, যাতে পরার পর মাথা থেকে একটু জায়গা থাকে। এ পোশাকটি পুরো শরীর ঢেকে রাখে।
সাধারণত শীতপ্রধান দেশগুলোতে সোয়েটারের ওপর এটি ব্যবহার করা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে তো আর এত ঠাণ্ডা পড়ে না। তাই শুধু পোশাকের ওপর পঞ্চ পরলে শীত লাগবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ধরনের পোশাকের সঙ্গে পঞ্চ পরা যায়। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পঞ্চ পরলে সত্যিই বেমানান লাগবে। এটি সাধারণত জিন্সের ওপর পরতে হয়। ওপরের টপসটি অবশ্যই ফুল স্লিভের পরবেন। কারণ পঞ্চে সোয়েটার স্টাইলে হাতা থাকে না। কিন্তু এর গঠনের কারণে পুরো হাত ঢেকে থাকে। তবুও ফুল স্লিভের টপস পরলে হাত ওঠানামা করলেও ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকবে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একইভাবে জিন্সের সঙ্গে পঞ্চ পরা উচিত। অনেক পঞ্চে হুড দেওয়া থাকে। ফলে বাড়তি করে মাফলারের প্রয়োজন হয় না। আবার অনেক পঞ্চের কাঁধের দু'দিকে দুই টুকরা কাপড় থাকে, যা মাফলারের মতো করে পেঁচিয়ে নিতে পারেন। পঞ্চে সামনের দিক থেকে বোতাম এমনভাবে লাগানো উচিত, যাতে ঠাণ্ডা না লাগে।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী লুনা বলেন, 'অনেক সময় সকালে ক্লাস থাকে। শীতের সময় তাড়াহুড়া করে সোয়েটার, চাদর, মাফলার একই সঙ্গে পরা সম্ভব হয় না। তাই এ সময় জিন্সের সঙ্গে পঞ্চ পরি, যা আমার শীতের প্রয়োজন আর স্টাইলে সমানভাবে কাজ করে।' পঞ্চের সঙ্গে পায়ে কনভার্স বা সি্নকারস পরতে পারেন। আর মেয়েরা চাইলে বিভিন্ন ধরনের শু পরতে পারেন। পঞ্চ পরার সময় মনে রাখতে হবে, খুব বেশি জবরজং করে পরা যাবে না। এটি সিম্পলভাবে পরলেই ভালো লাগবে। যেহেতু এর কোনো কাটিং নেই, সেহেতু এর ওপর অন্য কিছু পরতে গেলে বাড়তি মনে হবে। পঞ্চ পাওয়া যাবে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। দেশীদশে গিয়ে আপনি খোঁজ পেতে পারেন বিভিন্ন স্টাইলের পঞ্চের। এ ছাড়া আপনি টেইলার্সের কাছে গিয়েও নিজের পছন্দ এবং লেন্থ অনুযায়ী তৈরি করে নিতে পারেন পঞ্চ। এসব পঞ্চ ফ্যাশন হাউসগুলোতে কিনতে পাবেন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। দেশি কাপড়ের ফ্যাশনেবল এ পোশাকটি যে কোনো পার্টিতেও বেশ মানানসই।

No comments

Powered by Blogger.