জুবায়ের হত্যার বিচার হতে হবে-বেপরোয়া ছাত্রলীগ

‘ভিসি তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। ভিসি মানে ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য), দেশের উচ্চতম পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান পদ। কিন্তু কিসের ভয় তাঁর? রাজপথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী? যাঁরা তাঁকে এমন উচ্চনিনাদে বরাভয় দিচ্ছেন, তাঁরাই বা কারা?   জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রের হাতে নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন,


তখন অন্য একদল ছাত্র ভবনটির তালা ভেঙে উপাচার্য ও অন্যদের মুক্ত করে ওই স্লোগান দেন। অভিনব স্লোগান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘাতের পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি স্থগিত করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে অবস্থার হেরফের ঘটেনি; ছাত্রলীগের নামে কতিপয় ‘ছাত্রনেতা’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বময় কর্তৃত্ব চালাচ্ছেন। যাঁরা উপাচার্যকে দেখেশুনে রাখছেন, বিপদ-মুসিবত থেকে উদ্ধার করছেন এবং অভয় দিচ্ছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের ওই স্থগিত কমিটিরই একাংশের নেতা-কর্মী। অভিনব বিষয়, এই ছাত্রলীগ নামধারীরা কোনো নেতার নামে পরিচিত নয়, ‘ভিসি গ্রুপ’ নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের হাতে নির্মমভাবে নিহত জুবায়ের আহমেদও ছিলেন ছাত্রলীগেরই কর্মী। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তিনি বছর দেড়েক আগে ছাত্রলীগের ওই ‘ভিসি গ্রুপের’ এক সদস্যকে মেরেছিলেন। এখন তিনি প্রতিশোধের নির্মম শিকার হলেন। কী অর্থ হয় এমন মৃত্যুর?
শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, ছাত্রলীগ আর ছাত্রলীগ নামধারীদের দৌরাত্ম্য সারা দেশেই। রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ছয় মাসে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে ১৯ বার, আর প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনসহ অন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে ১০ বার। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এক মাস ধরে বন্ধ আছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির কারণে। কয়েক দিন আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের বার্ষিক ভোজকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ছেলেরা এমন বিশৃঙ্খলা করেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই সরকারের তিন বছর ধরেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষসহ নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। একসময় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ছাত্রলীগের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সংগঠনটির আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি এই কারণে যে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কেউ কোনো অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়নি। একটা ঘটনা ঘটলে সংগঠনের কমিটি বাতিলই যথেষ্ট নয়, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
আশুলিয়া থানায় জুবায়ের হত্যার মামলা হয়েছে, একজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা জরুরি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশেরই বিচার হয় না। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। হত্যাকারীদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.