সওজের টাকা দুই হাতে লুটপাট by রাশেদ মেহেদী ও জাফর আহমেদ
দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগে দুই হাতে টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। ৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের সমুদয় অর্থ সরকারিভাবে সময়মতো ছাড় করার পরও ছয় বছরের প্রকল্প শেষ করতে ১৬ বছর পার করার মতো ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি রয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার। এ ছাড়া ভুয়া বিল তোলার নজিরও রয়েছে। যে মাসে একটি সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে সেই মাসেই একই সড়কের পুনর্বাসন ও সংস্কারে নেওয়া হয়েছে নতুন প্রকল্প।
এ ধরনের অনেক দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে খোদ সরকারি তদন্তে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুুল কুদ্দুস সমকালকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি। পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি পর্যায়ক্রমে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সরেজমিন তদন্ত করছে। এরই অংশ হিসেবে পাঁচটি প্রকল্প সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক ও জনপথের প্রকল্প নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে, গত দশ বছরে বেশিরভাগ সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বরিশাল অঞ্চলের একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে দেখা যায়_ সরকারিভাবে সমুদয় অর্থ সময়মতোই ছাড় করা হয়েছে। অথচ ছয় বছরের ওই প্রকল্প শেষ হয়েছে ১৬ বছরে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ৪০ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে ১৬ বছর ধরে যে সড়কটি নির্মাণ করা হয়, কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি হয়ে যায় চলাচলের অযোগ্য। লক্ষ্মীপুরের অন্য
একটি সড়কের ক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মাসেই সেটি পুনর্বাসন ও সংস্কারে ১৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৪ সালে 'বরিশাল-ভোলা ও লক্ষ্মীপুর সড়ক নির্মাণ' প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তিন বছর পর ১৯৯৭ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ২০১০ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ছাড় করা হয় অনুমোদিত অর্থ। মেয়াদ শেষে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন সংস্থা গিয়ে দেখে, এক মাসের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশ দেবে এবং ফেটে গেছে। বিটুমিন স্তর উঠে গেছে। পরে সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রী এবং কাজের প্রকৌশলগত মান পর্যেবেক্ষণ করে দেখা যায়, সড়কে পাথর, বালু এবং বিটুমিনের পরিমাণ সঠিকভাবে মেশানো হয়নি। কাগজ-কলমের চেয়ে অনেক কম পরিমাণ বিটুমিন এবং পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বালুর পরিমাণ দেওয়া হয়েছে বেশি। এ ছাড়া বিটুমিনাস মিক্সচারের তাপমাত্রাও নির্মাণকালে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। ফলে ১৬ বছর সময় নিয়ে সড়ক নির্মাণের পর এক মাসও চলাচলের উপযোগী থাকেনি।
প্রতিবেদনে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অসঙ্গতি উঠে এসেছে। দেখা যায়, প্রকল্পের মধ্যমেয়াদি ব্যয় সংশোধনের সময় ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ব্যয় দেখানো হয় ৫০ কোটি টাকা। অথচ এক বছর পর প্রকল্পের মূল বিলে ব্যয় দেখানো হয় ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে এ বিষয়টি মূল্যায়ন করে বলা হয়, সাধারণত আগের বছরের চেয়ে পরের বছরে ব্যয় বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকা কম দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করার কারণে প্রকৃত ব্যয় অনেক কম হয়েছে। পরে যে বিলটি দেওয়া হয়েছে সেখানে ভুয়া ভাউচার দিয়ে ব্যয় বাড়ানো হয়। আর ভুয়া ভাউচারকে ম্যানেজ করার জন্যই আগের বছরের চেয়ে ব্যয় কম দেখানো হয়েছে।
'লক্ষ্মীপুর-চর আলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী' সড়ক প্রকল্প নামে আরও একটি প্রকল্পে দেখা যায়_ প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয় করে ৭৩ কিলোমিটারের একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প কিছুদিন আগে শেষ হয়। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর আইইডির তদন্ত দল পরিদর্শনে গিয়ে দেখে রাস্তার ৮০ শতাংশই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাটিতে এত বেশি নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে যে এখনই ওপরের বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাটির মাঝ বরাবর থেকে দুই অংশই দেবে গেছে।
গত ঈদুল ফিতরের আগে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া সড়কগুলোর জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেসব প্রকল্পে নবনির্মিত রাস্তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ১৮ দশমিক ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি সেতুর মাত্র ৬০ মিটার সংযোগ সড়কের মেরামত কাজ শেষ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী তদন্ত দলকে বলেছেন, আরও কমপ্যাক্ট হওয়ার পর সংযোগ সড়কের কার্পেটিং করা হবে। কমপ্যাক্ট হওয়ার জন্য চার থেকে পাঁচ বছর সময় নেওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বরিশাল অঞ্চলের একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে দেখা যায়_ সরকারিভাবে সমুদয় অর্থ সময়মতোই ছাড় করা হয়েছে। অথচ ছয় বছরের ওই প্রকল্প শেষ হয়েছে ১৬ বছরে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ৪০ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে ১৬ বছর ধরে যে সড়কটি নির্মাণ করা হয়, কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি হয়ে যায় চলাচলের অযোগ্য। লক্ষ্মীপুরের অন্য
একটি সড়কের ক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মাসেই সেটি পুনর্বাসন ও সংস্কারে ১৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৪ সালে 'বরিশাল-ভোলা ও লক্ষ্মীপুর সড়ক নির্মাণ' প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তিন বছর পর ১৯৯৭ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ২০১০ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ছাড় করা হয় অনুমোদিত অর্থ। মেয়াদ শেষে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন সংস্থা গিয়ে দেখে, এক মাসের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশ দেবে এবং ফেটে গেছে। বিটুমিন স্তর উঠে গেছে। পরে সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রী এবং কাজের প্রকৌশলগত মান পর্যেবেক্ষণ করে দেখা যায়, সড়কে পাথর, বালু এবং বিটুমিনের পরিমাণ সঠিকভাবে মেশানো হয়নি। কাগজ-কলমের চেয়ে অনেক কম পরিমাণ বিটুমিন এবং পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বালুর পরিমাণ দেওয়া হয়েছে বেশি। এ ছাড়া বিটুমিনাস মিক্সচারের তাপমাত্রাও নির্মাণকালে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। ফলে ১৬ বছর সময় নিয়ে সড়ক নির্মাণের পর এক মাসও চলাচলের উপযোগী থাকেনি।
প্রতিবেদনে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অসঙ্গতি উঠে এসেছে। দেখা যায়, প্রকল্পের মধ্যমেয়াদি ব্যয় সংশোধনের সময় ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ব্যয় দেখানো হয় ৫০ কোটি টাকা। অথচ এক বছর পর প্রকল্পের মূল বিলে ব্যয় দেখানো হয় ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে এ বিষয়টি মূল্যায়ন করে বলা হয়, সাধারণত আগের বছরের চেয়ে পরের বছরে ব্যয় বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকা কম দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করার কারণে প্রকৃত ব্যয় অনেক কম হয়েছে। পরে যে বিলটি দেওয়া হয়েছে সেখানে ভুয়া ভাউচার দিয়ে ব্যয় বাড়ানো হয়। আর ভুয়া ভাউচারকে ম্যানেজ করার জন্যই আগের বছরের চেয়ে ব্যয় কম দেখানো হয়েছে।
'লক্ষ্মীপুর-চর আলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী' সড়ক প্রকল্প নামে আরও একটি প্রকল্পে দেখা যায়_ প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয় করে ৭৩ কিলোমিটারের একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প কিছুদিন আগে শেষ হয়। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর আইইডির তদন্ত দল পরিদর্শনে গিয়ে দেখে রাস্তার ৮০ শতাংশই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাটিতে এত বেশি নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে যে এখনই ওপরের বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাটির মাঝ বরাবর থেকে দুই অংশই দেবে গেছে।
গত ঈদুল ফিতরের আগে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া সড়কগুলোর জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেসব প্রকল্পে নবনির্মিত রাস্তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ১৮ দশমিক ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি সেতুর মাত্র ৬০ মিটার সংযোগ সড়কের মেরামত কাজ শেষ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী তদন্ত দলকে বলেছেন, আরও কমপ্যাক্ট হওয়ার পর সংযোগ সড়কের কার্পেটিং করা হবে। কমপ্যাক্ট হওয়ার জন্য চার থেকে পাঁচ বছর সময় নেওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments