বিমানবন্দরে একের পর এক মামলা ধামাচাপা by শহিদুল আলম

যরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ধরা পড়া সজল দাসগুপ্ত ও কামাল হোসেনের কাছ থেকে অর্থের জোগানদাতাদের নাম জানতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েও নেপথ্য নায়কদের ব্যাপারে কোনো তথ্য বের করতে পারেননি। ফলে বিমানবন্দরের অন্যান্য মুদ্রা পাচার মামলার মতো চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিও ধামাচাপা পড়ার উপক্রম হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২১ ডিসেম্বর বোর্ডিং ব্রিজ এলাকা থেকে সজল দাসগুপ্ত ও কামাল হোসেনকে আটক করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে মুদ্রা পাচার আইনে একটি মামলা করেন। এরপর আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে থানাহাজতে নিয়ে আসা হয়।
রিমান্ডের ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, তাদের দেওয়া কিছু তথ্য তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত অন্য কেউ বা টাকার মালিককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এভাবে বিমানবন্দরে কোটি কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা পাচারকালে মাঝে মাঝে দু'একটি চালান ধরা পড়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের হাতে। এ অবৈধ অর্থের সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের আসামি করে বিমানবন্দর থানায় মুদ্রা চোরাচালান আইনে মামলা করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মুদ্রার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতরা শুধু বহনের দায়িত্ব পালন করে। আর মুদ্রার উৎস বা চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় তা তাদের অজানা থাকে।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মুদ্রাসহ গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকে অর্থের জোগানদাতা ও গন্তব্যের খোঁজ বের করা। তবে আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নজির খুবই কম। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার অর্ধকোটি টাকার মুদ্রাসহ ধরা পড়া নাইজেরিয়ার নাগরিক এম্বসিকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও অন্যদের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান জানান, তিন দিনের রিমান্ডে এম্বসির কাছ থেকে অর্থের জোগানদাতা ও গন্তব্য কোথায় তা জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বিমানবন্দরে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মুদ্রার চালানসহ আটককৃতদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে নামমাত্র। প্রায় সব মামলার ক্ষেত্রেই তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। এসব ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন করে পার পেয়ে যাওয়ার একটি প্রচলনও চলে আসছে থানা-পুলিশ ঘিরে। ডিএমপির গুলশান জোনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে গডফাদারসহ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গেলে তদন্ত কর্মকর্তার হাতে অবৈধ অর্থ চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। প্রভাবশালীরা নানাভাবে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার জোর তদবির চালায়। এসব ক্ষেত্রেই ঘটনার আড়ালে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে মামলার তদন্ত করলে অনেক রহস্যই উদ্ঘাটন করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এসএ নেওয়াজী সমকালকে জানান, মুদ্রা পাচার মামলা সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তা। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। তিনি দাবি করেন, রিমান্ডে বিমানবালা তুতুলের দেওয়া তথ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.