১৮ পয়েন্টে ঢুকছে মাদক by ইন্দ্রজিৎ সরকার

মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি থাকলেও সুফল মিলছে না। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা মাদকের চালান প্রতিদিনই ঢুকছে ঢাকায়। এক্ষেত্রে সড়ক, নৌ ও রেলপথের অন্তত ১৮টি পয়েন্ট শনাক্ত করেছেন গোয়েন্দারা। ওইসব পয়েন্টকে বলা হচ্ছে রাজধানীতে মাদকের গেটওয়ে। র‌্যাব-পুলিশের দাবি অনুযায়ী পয়েন্টগুলোয় পর্যাপ্ত চেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।


ফলে মাদকের অনেক চালানই ধরা পড়ছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করায় তাদের ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি নারিকেল, বার্মিজ জুতা, মিষ্টি কুমড়া, অ্যাম্বুলেন্স, কফিন ও তেলের ড্রামের ভেতরে লুকিয়ে আনা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান প্রতিরোধ দলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ঢাকায় মাদকদ্রব্য প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার কয়েকটি বাসায় মাদকদ্রব্যের চালান এনে রাখা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে দেওয়া হয় নানা কৌশলে। এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিনব কৌশল ব্যবহার করে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঢাকায় আনা হচ্ছে ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট, প্যাথেডিন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক। নৌপথে বছিলা, কামরাঙ্গীরচর, সদরঘাট, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, মিরপুর বেড়িবাঁধ ও আমিনবাজার দিয়ে সহজেই মাদকদ্রব্যের চালান ঢোকে রাজধানীতে। সড়কপথে গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরা, চিটাগাং রোড ও বাবুবাজারসহ কয়েকটি এলাকা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া রেলপথেও আসে মাদকদ্রব্য। তেজগাঁও, উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী রেলক্রসিং, মগবাজার ও টঙ্গী এলাকায় এসব মাদক ট্রেন থেকে নামানো হয়। মাদকদ্রব্য স্বল্প দূরত্বে হাতবদলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশু ও ধর্মীয় লেবাসধারী কতিপয় লোককে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম বলেন, চিহ্নিত এলাকাগুলোয় রাজনৈতিক কয়েক নেতাকর্মী মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছেন বলে তথ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদক ব্যবসায় ইমাম ও ডিআইজি! : ১ জানুয়ারি গাবতলীতে আড়াই হাজার বোতল ফেনসিডিলবোঝাই একটি ট্রাকসহ তৌফিক এলাহী ওরফে মিল্টন, খোকন চৌধুরী ওরফে ডিআইজি খোকন, ফারুক মিয়া, আবদুস সালাম ও ফারাজ মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ধর্মীয় লেবাসধারী আবদুস সালাম মসজিদের ইমাম ও তৌফিক এলাহী দিনাজপুর এলাকার এক সাংসদের ভাগ্নে পরিচয় দেয়।
আবদুস সালাম জানায়, সে ফরিদপুরের একটি মসজিদের ইমাম। দু'বছর ধরে সে ফেনসিডিলের ব্যবসা করে আসছে। মুখে দাঁড়ি ও গায়ে জোব্বা থাকায় তাকে কেউ সহজে সন্দেহ করত না।
দিনাজপুর থেকে তৌফিক এলাহী, ঝিনাইদহের ভাটইবাজার এলাকার পিরোজপুর গ্রামের শাজাহান, কুমিল্লা থেকে ডিআইজি খোকন ট্রাক অথবা অ্যাম্বুলেন্সে মাদকদ্রব্যের চালান উত্তরা অথবা আমিনবাজারের নির্দিষ্ট কয়েকটি বাসায় পেঁৗছে দিত। এরপর সে কখনও ট্রাক, কখনও অ্যাম্বুলেন্স, কখনও মিষ্টি কুমড়ার ভেতর লুকিয়ে মোহাম্মদপুরের বিহারিপট্টি, লালবাগের কয়েকটি সরকারি কোয়ার্টার, কামরাঙ্গীরচরের রসুলবাগসহ কয়েকটি এলাকা ও হাজারীবাগের সুইপার কলোনির মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চালান পেঁৗছানোর ব্যবস্থা করত। কামরাঙ্গীরচরের আনন্দ মুহুরী, লালবাগের সোর্স রব, মজু ওরফে গালকাটা মজু, হাজারীবাগের জামিলা ও সুন্দর বাবু এবং মোহাম্মদপুরের রাশেদ খলিফা তার কাছ থেকে ফেনসিডিল বুঝে নিত।
এদিকে আধুনিক পোশাকে থাকা খোকন চৌধুরী নিজেকে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বলে পরিচয় দিত। সে জানায়, ১২ বছর ধরে ফেনসিডিলের ব্যবসা করে আসছে। মাতুয়াইল উত্তরপাড়ার জঙ্গলবাড়ী এলাকার মাসুম ও শাহাদাত হোসেনের কাছে সে ফেনসিডিল পেঁৗছে দিত।
সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে গেণ্ডারিয়া থানায় নারিকেলের ভেতর ইয়াবা পাচারের সময় যুবক আবু তাহেরকে আটক করা হয়। গত বছরের মাঝামাঝি কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি তেলের ড্রামে ফেনসিডিল বহনের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় রাসেল ও বাবলা। গত আগস্টে কামরাঙ্গীরচর থানায় ইয়াবা ট্যাবলেটসহ শিশু জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিশুটি পুলিশকে জানায়, মাদক বহনের জন্য সে সামান্য কিছু টাকা পায়। তবে ব্যবসায়ীদের সে চেনে না। নভেম্বরের শুরুতে বার্মিজ জুতার ভেতর ইয়াবা পরিবহনের সময় তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.