পবিত্র কোরআনের আলো-কাফিরদের মোকাবিলা করতে মুসলমানদের প্রতি যুদ্ধে নামার নির্দেশ
৬৩. ওয়া আল্লাফা বাইনা ক্বুলূবিহিম; লাও আনফাক্বতা মা ফিল আরদ্বি জামীআ'ম্ মা আল্লাফ্তা বাইনা ক্বুলূবিহিম ওয়া লা-কিন্নাল্লা-হা আল্লাফা বাইনাহুম; ইন্নাহূ আ'যীযুন হাকীম। ৬৪. ইয়া-আইয়্যুহান নাবিয়্যু হাছবুকাল্লা-হু ওয়া মানিত তাবাআ'কা মিনাল মু'মিনীন।
৬৫. ইয়া-আইয়্যুহান নাবিয়্যু হার্রিদ্বিল মু'মিনীনা আ'লাল কি্বতা-ল; ইইঁয়্যাকুম্ মিনকুম ই'শরূনা সা-বিরূনা ইয়াগ্লিবূ মিআতাইনি; ওয়া ইইঁয়্যাকুম্ মিনকুম মিআতুন ইয়্যাগ্লিবূ আলফাম্ মিনাল্লাযীনা কাফারূ বিআন্নাহুম ক্বাওমুন লা- ইয়াফ্ক্বাহূন। ৬৬. আলআ-না খাফ্ফাফাল্লা-হু আ'নকুম্ ওয়া আ'লিমা আন্না ফীকুম দ্বা'ফা-; ফাইঁয়্যাকুম্ মিনকুম্ মিআতুন সা-বিরাতুন ইয়্যাগ্লিবূ মিআতাইনি; ওয়াইঁয়্যাকুম্ মিনকুম্ আলফুন ইয়্যাগ্লিবূ আলফাইনি বিইয্নিল্লা-হি; ওয়াল্লা-হু মাআ'স্ সা-বিরীন।
[সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৬৩-৬৬]
অনুবাদ : ৬৩. আর তিনি তাদের (মুমিনদের) হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। আপনি যদি পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতেন, তবু তাদের হৃদয়ে এই সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি তাদের অন্তরে এমন সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। ৬৪. হে নবী! আপনার জন্য এবং মুমিনদের মধ্যে যারা আপনার অনুসরণ করে, তাদের জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট।
৬৫. হে নবী! মুমিনদের যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। আপনাদের মধ্যে যদি ২০ জন ধৈর্যশীল লোক থাকে, তাহলে তারা ২০০ জনের ওপর জয়ী হবে। তোমাদের যদি ১০০ জন থাকে, তবে তারা এক হাজারজন কাফিরের ওপর বিজয়ী হবে। কেননা তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোনো বিবেকবুদ্ধি নেই। ৬৬. এখন আল্লাহ তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কিছু দুর্বলতা আছে। সুতরাং (এখন থেকে) তোমাদের মধ্যে যদি ধৈর্যশীল ১০০ জন লোক থাকে, তাহলে তারা ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হবে, আর যদি তোমাদের এক হাজারজন থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর হুকুমে দুই হাজারজনের ওপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধকালের বিভিন্ন বিবেচ্য ও কর্তব্য বিষয়ে দিকনিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। ৬৩ ও ৬৪ নম্বর আয়াতে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতির যে আ@ি@@@ক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছিল, এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটা মুসলমানদের শক্তির উল্লেখযোগ্য দিক। মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আল্লাহর ওপর ভরসা তথা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আত্মনিবেদন_এ দুটিই ছিল মুসলমানদের বিজয়ের প্রধান কারণ। একটা ভাবাদর্শ সামনে নিয়ে এত গভীর ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনের নজির পৃথিবীতে বিরল। মক্কা থেকে যাঁরা নিজেদের বিষয়-সম্পত্তির মায়া পরিত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তাঁদের মদিনাবাসী মুসলমানরা নিজ নিজ সম্পদের সমান অংশ দিয়ে পরিবারভুক্ত হিসেবে বরণ করেছিলেন। মানবসমাজের ইতিহাসে এটা এক বিরল দৃষ্টান্ত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মক্কা থেকে মহানবী (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পরপরই মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর আগে মক্কায় সেটা ছিল ইসলামের প্রতি প্রতিষ্ঠিত সমাজের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং মুসলমানদের ওপর ঘরোয়া নিপীড়ন-নির্যাতন। হিজরতের পর থেকেই ইসলাম একটা শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে শুরু করে এবং বদরের যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে এটা পূর্ণাঙ্গ শক্তি হিসেবে বহির্জগতের কাছে আত্মপ্রকাশ করে।
৬৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে তাগিদ দিয়েছেন মুসলমানদের যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার। কারণ সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠিন বাধা সৃষ্টি করে যে শক্তি, সেটা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শক্তি প্রয়োগ ছাড়া সেটা অপসারণ করা সম্ভব হয় না, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা ও বাস্তবতা। এ কারণেই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ বা যুদ্ধ করার প্রয়োজন হয়েছিল। যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার মানে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করা নয়। বরং শত্রুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা, শত্রুপক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা। এই আয়াতে শত্রুর সংখ্যা ও শক্তি ১০ গুণ বেশি হলেও তা মোকাবিলা করার জন্য রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শত্রুর শক্তি দৃশ্যত মুসলমানদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হলেও মুসলমানদের পক্ষে বিজয় অর্জন করা সম্ভব। এর কয়েকটি কারণ আগে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ আয়াতে যে কারণটি বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, তারা বোঝে না, তাদের বিবেকবুদ্ধি নেই। তারা যদি সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের ফারাক বুঝত, তাহলে তো ইসলামই গ্রহণ করত। সুতরাং তাদের ১০ গুণ বেশি শক্তিকেও ভয় করার কারণ নেই। অর্থাৎ সে অবস্থায়ও পিছু হটা উচিত হবে না। এরপর ৬৬ নম্বর আয়াতে এই তুলনামূলক শক্তির বিষয়টা আরো কমিয়ে ১০ গুণের স্থলে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ শত্রুর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলে মোকাবিলা থেকে বিরত থাকা যেতে পারে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৬৩-৬৬]
অনুবাদ : ৬৩. আর তিনি তাদের (মুমিনদের) হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। আপনি যদি পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতেন, তবু তাদের হৃদয়ে এই সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি তাদের অন্তরে এমন সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। ৬৪. হে নবী! আপনার জন্য এবং মুমিনদের মধ্যে যারা আপনার অনুসরণ করে, তাদের জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট।
৬৫. হে নবী! মুমিনদের যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। আপনাদের মধ্যে যদি ২০ জন ধৈর্যশীল লোক থাকে, তাহলে তারা ২০০ জনের ওপর জয়ী হবে। তোমাদের যদি ১০০ জন থাকে, তবে তারা এক হাজারজন কাফিরের ওপর বিজয়ী হবে। কেননা তারা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের কোনো বিবেকবুদ্ধি নেই। ৬৬. এখন আল্লাহ তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কিছু দুর্বলতা আছে। সুতরাং (এখন থেকে) তোমাদের মধ্যে যদি ধৈর্যশীল ১০০ জন লোক থাকে, তাহলে তারা ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হবে, আর যদি তোমাদের এক হাজারজন থাকে, তাহলে তারা আল্লাহর হুকুমে দুই হাজারজনের ওপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধকালের বিভিন্ন বিবেচ্য ও কর্তব্য বিষয়ে দিকনিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। ৬৩ ও ৬৪ নম্বর আয়াতে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতির যে আ@ি@@@ক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছিল, এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটা মুসলমানদের শক্তির উল্লেখযোগ্য দিক। মুসলমানদের পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং আল্লাহর ওপর ভরসা তথা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি আত্মনিবেদন_এ দুটিই ছিল মুসলমানদের বিজয়ের প্রধান কারণ। একটা ভাবাদর্শ সামনে নিয়ে এত গভীর ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনের নজির পৃথিবীতে বিরল। মক্কা থেকে যাঁরা নিজেদের বিষয়-সম্পত্তির মায়া পরিত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তাঁদের মদিনাবাসী মুসলমানরা নিজ নিজ সম্পদের সমান অংশ দিয়ে পরিবারভুক্ত হিসেবে বরণ করেছিলেন। মানবসমাজের ইতিহাসে এটা এক বিরল দৃষ্টান্ত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মক্কা থেকে মহানবী (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পরপরই মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর আগে মক্কায় সেটা ছিল ইসলামের প্রতি প্রতিষ্ঠিত সমাজের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং মুসলমানদের ওপর ঘরোয়া নিপীড়ন-নির্যাতন। হিজরতের পর থেকেই ইসলাম একটা শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে শুরু করে এবং বদরের যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে এটা পূর্ণাঙ্গ শক্তি হিসেবে বহির্জগতের কাছে আত্মপ্রকাশ করে।
৬৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে তাগিদ দিয়েছেন মুসলমানদের যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার। কারণ সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠিন বাধা সৃষ্টি করে যে শক্তি, সেটা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শক্তি প্রয়োগ ছাড়া সেটা অপসারণ করা সম্ভব হয় না, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা ও বাস্তবতা। এ কারণেই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ বা যুদ্ধ করার প্রয়োজন হয়েছিল। যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার মানে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করা নয়। বরং শত্রুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা, শত্রুপক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা। এই আয়াতে শত্রুর সংখ্যা ও শক্তি ১০ গুণ বেশি হলেও তা মোকাবিলা করার জন্য রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শত্রুর শক্তি দৃশ্যত মুসলমানদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হলেও মুসলমানদের পক্ষে বিজয় অর্জন করা সম্ভব। এর কয়েকটি কারণ আগে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ আয়াতে যে কারণটি বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, তারা বোঝে না, তাদের বিবেকবুদ্ধি নেই। তারা যদি সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের ফারাক বুঝত, তাহলে তো ইসলামই গ্রহণ করত। সুতরাং তাদের ১০ গুণ বেশি শক্তিকেও ভয় করার কারণ নেই। অর্থাৎ সে অবস্থায়ও পিছু হটা উচিত হবে না। এরপর ৬৬ নম্বর আয়াতে এই তুলনামূলক শক্তির বিষয়টা আরো কমিয়ে ১০ গুণের স্থলে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ শত্রুর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলে মোকাবিলা থেকে বিরত থাকা যেতে পারে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments