কারখানায় ক্লোরিন নিঃসরণ-ডুবো পর্বতের ভাসমান চূড়া
জনবসতি এলাকায় কারখানা পরিচালনা কতটা ভয়াবহ হতে পারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ক্লোরিন নিঃসরণের অঘটনেই তা প্রথম প্রমাণ হলো না। প্রকৃত বিপদের পূর্ণ চিত্রও নয়। এটাকে বরং বলা চলে বিপজ্জনক ডুবো পর্বতের ভাসমান চূড়ামাত্র। নজরদারির অভাবে গত কয়েক দশকে বিভিন্ন বসতি অঞ্চলে যেভাবে কারখানা গড়ে উঠেছে, তা ঝুঁকির স্থায়ী উৎস। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এসব কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ বাড়তি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
আমাদের মনে আছে, গত বছর জুন মাসে রাজধানীর নিমতলীতে রাসায়নিক কারখানার গুদাম থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে শতাধিক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। সেদিক থেকে এবার আমরা খানিকটা সৌভাগ্যবান যে, কারখানা শ্রমিক, স্থানীয় অধিবাসী, দমকল ও পুলিশ বাহিনীর শতাধিক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রাণহানি ঘটেনি। কিন্তু সময়মতো উদ্ধার অভিযান না চালালে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারত। এও কম উদ্বেগজনক নয়, বিপজ্জনক গ্যাস ব্যবহার করা হলেও গ্গ্নোবাল হেভি কেমিক্যালসে এর সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। পুলিশ ও দমকল কর্মীরা যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, তা সাধুবাদযোগ্য। পরিবেশ অধিদফতরও ধন্যবাদ পেতে পারে যে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করেছে। ক্লোরিন গ্যাস নিঃসরণে অসুস্থদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে দণ্ডই শেষ কথা হতে পারে না। এলাকাবাসীর এই দাবি যৌক্তিক কারখানাটি সরিয়ে নিতে হবে। এর বিকল্পও নেই। বস্তুত জনবসতিতে যে কোনো কারখানা সবসময়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নেও কারখানা স্থাপিত হতে হবে নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিতেও বিষয়টি নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জনবসতি এলাকায় কারখানাগুলো বহাল তবিয়তে মূলত প্রশাসনিক নির্লিপ্ততার কারণেই। বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে যে, এক একটি দুর্ঘটনার পরই কেবল খানিকটা নড়াচড়া হয় এবং তা থেমে যেতেও খুব বেশি সময় লাগে না। নিমতলী অগি্নকাণ্ডের প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সম্পূর্ণ সরানো হয়নি। কেরানীগঞ্জে এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। জনবসতিতে থাকা অন্যান্য কারখানাও অবিলম্বে সরিয়ে ফেলতে হবে। আরেকটি দুর্ঘটনার আগেই।
No comments