সুন্দরবনকেন্দ্রিক জলদস্যু বাহিনী ফের বেপরোয়া by এম জসীম উদ্দীন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে গত এক বছরে ১৮ জলদস্যু নিহত হলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক সশস্ত্র জলদস্যু বাহিনীগুলোর অপতৎপরতা থামছে না। কমপক্ষে ১০ দস্যুবাহিনী বর্তমানে তৎপর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগরে দস্যুদের গুলিতে এক জেলে নিহত ও আটজন গুলিবিদ্ধ হন। এর আগে গত বছরের ২৭ জুলাই জাহাঙ্গীর নামের আরেক জেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে দস্যুরা।
এ ছাড়া গত ১১ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরের ঢালচর এলাকায় হাত-পা বাঁধা ১০-১২ জনের লাশ ভাসতে দেখেন জেলেরা। ৬ ডিসেম্বর পাথরঘাটা সংলগ্ন বলেশ্বর নদ থেকে হাত-পা বাঁধা আরও দুটি লাশ উদ্ধার হয়। দস্যুদের এমন বেপরোয়া তৎপরতায় দক্ষিণ উপকূলের ১০ জেলার প্রায় আড়াই লাখ জেলের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত ছয় মাসে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে সাড়ে ৮০০ ট্রলারে হানা দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকার মালামাল লুট ও দেড় হাজার জেলেকে অপহরণ করা হয়। এ সময় দস্যুদের হামলায় দুই জেলে নিহত ও কমপক্ষে ২৫০ জেলে আহত হয়।
কোস্টগার্ড পশ্চিমাঞ্চলের অপরেশনাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন এলাকায় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোস্টগার্ডের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর। তবে সমস্যা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক এসব ঘটনার খবর জানা যায় না বা ভুক্তভোগী জেলেরা তাদের জানান না। ফলে দস্যুতা দমনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ জানুয়ারি রাতে পাথরঘাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের গঙ্গামতি এলাকায় জলদস্যু জিয়া-রফিক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে কক্সবাজারের এফবি আসলি নামের একটি ট্রলারের জেলে গুড়া মিয়া (১২) নিহত হয়। ট্রলারের অপর চার জেলে গুলিবিদ্ধ ও এফবি জাভেদ নামে অপর একটি ট্রলারের সাত জেলে নিখোঁজ হন। দস্যুরা এ সময় ২৫টি মাছধরা ট্রলারে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার মাছ ও অন্য সরঞ্জাম লুট করে এবং ৩০ জেলেকে অপহরণ করে। ৪ জানুয়ারি পাথরঘাটা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বারো বাম এলাকায় অপর একটি জলদস্যু বাহিনীর হামলায় চার জেলে গুলিবিদ্ধ হন। দস্যুরা এ সময় তিনটি ট্রলারের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর মহিপুর ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ট্রলার মালিক সমিতির নেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে গামা, আল আমিন, রাজু, বাঘা, নাসির, সোহাগ ও রুস্তুম বাহিনী, জিয়া-রফিক নামে পরিচিত ১০টি বাহিনী এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আগে এসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুলফিকার ও মোতালেবসহ চার দস্যু নিহত হওয়ার পর তারা নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বর্তমানে জুলফিকার বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে তার ছোট ভাই আল আমিন ও মোতালেব বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান গামা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বাহিনী ইলিশ আহরণ মৌসুমের শুরুতেই জেলেদের ট্রলার ও নৌকাপ্রতি চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়। জলদস্যুদের স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ট্রলার ও নৌকাপ্রতি ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কথিত নিরাপত্তা পাস (টোকেন) সরবরাহ করে। যেসব জেলে টোকেন নেন না তাঁদের ট্রলার ও নৌকায় দস্যুরা হানা দিয়ে লুটপাট চালায় এবং জেলেদের অপহরণ করে মোটা অঙ্কের পণ আদায় করে।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, এবার ইলিশ মৌসুমে লাভের মুখ দেখা হয়নি। প্রত্যেক জেলে ও মহাজন এখন দেনায় জর্জরিত। এখন শীত মৌসুমে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার মতো নিরাপত্তা নেই। দস্যুদের সাম্প্র্রতিক প্রতিশোধমূলক অপতৎপরতায় তাঁরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ ধরনের তাণ্ডব অব্যাহত থাকলে পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জলদস্যুদের অপতৎপরতায় দক্ষিণ উপকূলের কয়েক লাখ জেলে ও ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন। এমন কোনো ট্রলার নেই যে এবার জলদস্যুদের হামলা, লুণ্ঠন ও অপহরণের শিকার হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে র্যাব-৮ উপ-পরিচালক লে. কমান্ডার নুর-উজ্জামান বলেন, জলদস্যুদের দমনে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৮ জলদস্যু নিহত ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৮ এর আওতাধীন এলাকায় এখন আর কোনো সক্রিয় জলদস্যু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত ছয় মাসে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে সাড়ে ৮০০ ট্রলারে হানা দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকার মালামাল লুট ও দেড় হাজার জেলেকে অপহরণ করা হয়। এ সময় দস্যুদের হামলায় দুই জেলে নিহত ও কমপক্ষে ২৫০ জেলে আহত হয়।
কোস্টগার্ড পশ্চিমাঞ্চলের অপরেশনাল কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন এলাকায় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোস্টগার্ডের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর। তবে সমস্যা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক এসব ঘটনার খবর জানা যায় না বা ভুক্তভোগী জেলেরা তাদের জানান না। ফলে দস্যুতা দমনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ জানুয়ারি রাতে পাথরঘাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের গঙ্গামতি এলাকায় জলদস্যু জিয়া-রফিক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে কক্সবাজারের এফবি আসলি নামের একটি ট্রলারের জেলে গুড়া মিয়া (১২) নিহত হয়। ট্রলারের অপর চার জেলে গুলিবিদ্ধ ও এফবি জাভেদ নামে অপর একটি ট্রলারের সাত জেলে নিখোঁজ হন। দস্যুরা এ সময় ২৫টি মাছধরা ট্রলারে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার মাছ ও অন্য সরঞ্জাম লুট করে এবং ৩০ জেলেকে অপহরণ করে। ৪ জানুয়ারি পাথরঘাটা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বারো বাম এলাকায় অপর একটি জলদস্যু বাহিনীর হামলায় চার জেলে গুলিবিদ্ধ হন। দস্যুরা এ সময় তিনটি ট্রলারের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর মহিপুর ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ট্রলার মালিক সমিতির নেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে গামা, আল আমিন, রাজু, বাঘা, নাসির, সোহাগ ও রুস্তুম বাহিনী, জিয়া-রফিক নামে পরিচিত ১০টি বাহিনী এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আগে এসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুলফিকার ও মোতালেবসহ চার দস্যু নিহত হওয়ার পর তারা নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বর্তমানে জুলফিকার বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে তার ছোট ভাই আল আমিন ও মোতালেব বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান গামা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানান, এসব বাহিনী ইলিশ আহরণ মৌসুমের শুরুতেই জেলেদের ট্রলার ও নৌকাপ্রতি চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়। জলদস্যুদের স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ট্রলার ও নৌকাপ্রতি ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কথিত নিরাপত্তা পাস (টোকেন) সরবরাহ করে। যেসব জেলে টোকেন নেন না তাঁদের ট্রলার ও নৌকায় দস্যুরা হানা দিয়ে লুটপাট চালায় এবং জেলেদের অপহরণ করে মোটা অঙ্কের পণ আদায় করে।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, এবার ইলিশ মৌসুমে লাভের মুখ দেখা হয়নি। প্রত্যেক জেলে ও মহাজন এখন দেনায় জর্জরিত। এখন শীত মৌসুমে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার মতো নিরাপত্তা নেই। দস্যুদের সাম্প্র্রতিক প্রতিশোধমূলক অপতৎপরতায় তাঁরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ ধরনের তাণ্ডব অব্যাহত থাকলে পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জলদস্যুদের অপতৎপরতায় দক্ষিণ উপকূলের কয়েক লাখ জেলে ও ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন। এমন কোনো ট্রলার নেই যে এবার জলদস্যুদের হামলা, লুণ্ঠন ও অপহরণের শিকার হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে র্যাব-৮ উপ-পরিচালক লে. কমান্ডার নুর-উজ্জামান বলেন, জলদস্যুদের দমনে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৮ জলদস্যু নিহত ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৮ এর আওতাধীন এলাকায় এখন আর কোনো সক্রিয় জলদস্যু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
No comments