বিডিআর বিদ্রোহে খালেদা জিয়া জড়িত ছিলেন কিনা খতিয়ে দেখতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয় খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওই বিদ্রোহের আগেই বিরোধীদলীয় নেতা কেন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন? কেন পরের তিন দিন তার খোঁজ ছিল না? এ বিদ্রোহের খবর তিনি আগে থেকেই জানতেন, নাকি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনিও জড়িত ছিলেন_ এর জবাব তাকেই দিতে হবে।


আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের পাশে নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা দেশের গণতন্ত্র হরণ করতে চান। মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চান। যারা দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশ্বাস করে না, হত্যা-গুম-খুন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাট ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের বিরুদ্ধে
দেশবাসীকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে এদিন ঢাকাসহ সারাদেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয় সকাল ৯টায়। অথচ সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যেই বিরোধীদলীয় নেতা কালো কাচের গাড়িতে করে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। যেখানে বেলা ১২টার আগে তার ঘুমও ভাঙে না, সেখানে সেদিন অত সকালে উঠে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন? পরের তিন দিনও তিনি কোন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন? বিদ্রোহের পরবর্তী দেড় মাসও তিনি সেনানিবাস থেকে বের হননি কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতিটি কর্মকর্তাকেও এটা ভেবে দেখতে বলব, সব দল যেখানে বিডিআর বিদ্রোহে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা কেন পালিয়ে গেলেন? বিদ্রোহ চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীরা যে মিছিল বের করেছিল এবং সেখানে যেসব স্লোগান দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে।
সংসদে এসে সব বিষয়ে কথা বলতে বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাসে আগুন জ্বালিয়ে ও বোমাবজি করে মানুষ হত্যার চেষ্টা করবেন না। জনগণ এটা মেনেও নেবে না। বিএনপির রোডমার্চকালে চট্টগ্রামের জনসভায় খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর কথায় কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। মিথ্যাচারই তাদের অভ্যাস, চরিত্র।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কথায় ভারতবিরোধী হলেও কাজেকর্মে ভারতের পদলেহী। ক্ষমতায় থাকতে ভারতের প্রতি প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসা বেড়ে যায়। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে গেলেই তিনি ভারতবিরোধী হয়ে যান। এখন কথায় কথায় ভারতের বিরোধিতা করলেও ক্ষমতায় থাকতে ভারতে গিয়ে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয় তুলে ধরতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। শুল্ক কমিয়ে দেশের বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব করেছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে ভারতে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছি। সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি। বর্ডারে হত্যাও কমিয়েছি।
তিনি বলেন, আবারও ক্ষমতায় গেলে নাকি তিনি দেশে সুশাসন দেবেন। দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেবেন। দুই বার ক্ষমতায় থাকতে তারা কী সুশাসন দিয়েছেন? জনগণের ভোটচুরি আর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই তাদের লক্ষ্য। মানুষের অর্থ-সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন, মানি লন্ডারিং করেছেন।
বিরোধীদলীয় নেতার চট্টগ্রামের জনসভায় এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছিয়াশির নির্বাচনের আগে ১৫ ও ৭ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও খালেদা জিয়া জনসভা করে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের ডাক দিয়ে নিজেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলেই সেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম, যাতে সামরিক শাসন প্রত্যাহার হয়। আমরা গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলাম। আর তিনি চেয়েছিলেন ষড়যন্ত্রের পথে ক্ষমতায় যেতে। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের ডাক দেওয়া অপরাধ নয়; আর নির্বাচনে গেলেই অপরাধ হয়ে গেল!
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জিয়া হত্যার পর এরশাদ একটি বাক্স দেখিয়ে সেখানে জিয়ার লাশ আছে বলেছিলেন। এরশাদও নিশ্চয় একদিন স্বীকার করবেন, ওই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না। আর সেদিন সংসদ ভবনের সামনে কী দাফন করা হয়েছিল!
তিনি বলেন, সেদিন খালেদা জিয়া ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেস দেখিয়ে এরশাদের কাছ থেকে গুলশানের বাড়ি, ভাতা ও নানা সুযোগ-সুবিধা নিলেও তার বিরুদ্ধে কথা বলেননি। অথচ সাত্তার সাহেবের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পরই এরশাদকে স্বামীর হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
গত নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের একদলীয় নির্বাচনের চেষ্টা ও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, উনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছেন। ভাবছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলেই তাকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু এখন তো তার পক্ষে ভোটচুরির কেউ নেই। কাজেই সংসদে আসুন। যা বলার সেখানেই বলুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সরকার কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি। কুমিল্লার নির্বাচনের আগে বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতা ও তাদের প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছিল। অথচ তার (খালেদা জিয়া) প্রার্থী সাক্কুই সেখানে ছক্কা মেরেছেন। এখন তিনি কী বলবেন! সাক্কু মানি কিন্তু নির্বাচন মানি না।
জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটসহ মুক্তি সংগ্রামে তার অবদান তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় পূর্ণতা পেয়েছিল। সেদিনই দেশের মানুষ প্রথম বিজয় উৎসব করতে পেরেছিল।
মহাজোট সরকারের তিন বছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলব_ এই হোক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের শপথ। আমরা অবশ্যই ২০২১ সালের মধ্যে আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও দেশসেবার আদর্শ নিয়ে সরকারের এই প্রতিশ্রুতি পূরণে সহযোগিতার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। কবিতা আবৃত্তি করেন দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

No comments

Powered by Blogger.