ট্রাইব্যুনালে সাংসদ আউয়াল গোলাম আযমের জামিন আবেদন-সাঈদী পাঁচ তহবিলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন
পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে বলেছেন, একাত্তরে পিরোজপুরের পারেরহাটে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা লুটের মালামাল দিয়ে পাঁচ তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করেছিল। সাঈদী ওই পাঁচ তহবিলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। যুদ্ধকালীন গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তিনি এ কথা শুনেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১২তম সাক্ষী হিসেবে আউয়াল গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী গতকাল ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন জমা দিয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আউয়াল জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পিরোজপুর মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পিরোজপুরের পিটিআই মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে তিনি প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে জানা যায়, পাকিস্তানি সেনারা বরিশাল দখল করেছে ও ঝালকাঠি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, তারা পিরোজপুরে চলে আসতে পারে। ওই সংবাদ পেয়ে প্রশিক্ষণরত ব্যক্তিরা ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যান। তিনি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের জিউদানা গ্রামে চলে যান। কিছুদিন পর সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় এবং তাঁরা সুন্দরবনে চলে যান।
ট্রাইব্যুনালে সাংসদ বলেন, সুন্দরবনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বড় আকার ধারণ করলে এটিকে সাব-সেক্টরে উন্নীত করা হয়। তিনি ওই সাব-সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্সের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় বেসামরিক মানুষের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়। চিথলিয়া গ্রামের শহীদ উদ্দিন পসারি, রইজ উদ্দিন পসারি ও নূরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন।
একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানি সেনারা হুলারহাট হয়ে পিরোজপুর এবং সেখান থেকে পারেরহাটে আসে। মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা আসার পরে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠন করে। পারেরহাটে সেকান্দার আলী শিকদারের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি এবং পরে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। দানেশ মোল্লা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল। উর্দুভাষী পাকিস্তানি সেনাদের ভাষার সুবিধার জন্য পরে সাঈদীকে নেওয়া হয়েছিল। এই পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা মিলে পারেরহাটের একটি দোকান থেকে ২২ সের স্বর্ণ লুট করে। এ কারণে পারেরহাটের নাম হয় সোনারহাট।
সাংসদ আউয়াল গোয়েন্দাদের মাধ্যমে শুনেছেন, মদন মোহন সাহার যে ঘরটি লুট হয়েছিল, সাঈদী ওই ঘরটি নিজের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে তুলেছিলেন। চিথোলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, রইছউদ্দিন পসারি, সইজউদ্দিন পসারি, মানিক পসারিসহ হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের অনেক বাড়িঘর রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, পিরোজপুরের পাশে ডুমুরতলা, কদমতলা, টেংরাখালী, উমেদপুর গ্রামসহ অনেক এলাকা পাাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। তারা ওই এলাকায় লুট, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটায়। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত আউয়াল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষে দেড় ঘণ্টা যুক্তি-তর্ক: মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দুপুর দুইটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আবার শুরু হলে সাংসদ আউয়াল ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জবানবন্দি দেওয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় তাঁর দুটি বিষয় নজরে এসেছে। প্রথমটি হলো, তিনি বর্তমানে নির্বাচিত সাংসদ, এটা লেখা হয়নি। দ্বিতীয়, জবানবন্দির এক জায়গায় লেখা হয়েছে, মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা আসার পরে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে ‘মে মাসের প্রথম দিকে’ হবে।
ট্রাইব্যুনাল এ সময় বলেন, জবানবন্দিতে ওই কথার পাশে বিষয়টি নোট আকারে লিখে রাখার জন্য। কিন্তু এর বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জবানবন্দি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাক্ষীর বক্তব্য সংশোধনের সুযোগ নেই। পরে এ নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে যুক্তি-তর্ক চলে। শেষে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, জবানবন্দির শেষে ও জেরা শুরুর আগে এ বিষয়টি সাক্ষীর বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত থাকবে। একই সঙ্গে এর পাশে ‘আসামিপক্ষের তীব্র আপত্তিসহ’ এটিও উল্লেখ থাকবে। পরবর্তী সময়ে জবানবন্দি নিয়ে যুক্তি-তর্কের সময় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিকেল চারটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
গোলাম আযমের জামিন আবেদন: জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। গোলাম আযমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী তাজুল ইসলাম গতকাল রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এই আবেদন জমা দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেন। ওই দিন গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য জামায়াতের আটক নেতাদের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান আবদুর রাজ্জাককে নির্দেশ দেওয়া হয়। গোলাম আযম আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করবেন।
ট্রাইব্যুনালে সাংসদ বলেন, সুন্দরবনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বড় আকার ধারণ করলে এটিকে সাব-সেক্টরে উন্নীত করা হয়। তিনি ওই সাব-সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্সের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় বেসামরিক মানুষের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়। চিথলিয়া গ্রামের শহীদ উদ্দিন পসারি, রইজ উদ্দিন পসারি ও নূরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন।
একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানি সেনারা হুলারহাট হয়ে পিরোজপুর এবং সেখান থেকে পারেরহাটে আসে। মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা আসার পরে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠন করে। পারেরহাটে সেকান্দার আলী শিকদারের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি এবং পরে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। দানেশ মোল্লা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল। উর্দুভাষী পাকিস্তানি সেনাদের ভাষার সুবিধার জন্য পরে সাঈদীকে নেওয়া হয়েছিল। এই পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা মিলে পারেরহাটের একটি দোকান থেকে ২২ সের স্বর্ণ লুট করে। এ কারণে পারেরহাটের নাম হয় সোনারহাট।
সাংসদ আউয়াল গোয়েন্দাদের মাধ্যমে শুনেছেন, মদন মোহন সাহার যে ঘরটি লুট হয়েছিল, সাঈদী ওই ঘরটি নিজের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে তুলেছিলেন। চিথোলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, রইছউদ্দিন পসারি, সইজউদ্দিন পসারি, মানিক পসারিসহ হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের অনেক বাড়িঘর রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, পিরোজপুরের পাশে ডুমুরতলা, কদমতলা, টেংরাখালী, উমেদপুর গ্রামসহ অনেক এলাকা পাাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দেয়। তারা ওই এলাকায় লুট, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটায়। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত আউয়াল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষে দেড় ঘণ্টা যুক্তি-তর্ক: মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দুপুর দুইটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আবার শুরু হলে সাংসদ আউয়াল ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জবানবন্দি দেওয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় তাঁর দুটি বিষয় নজরে এসেছে। প্রথমটি হলো, তিনি বর্তমানে নির্বাচিত সাংসদ, এটা লেখা হয়নি। দ্বিতীয়, জবানবন্দির এক জায়গায় লেখা হয়েছে, মে মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা আসার পরে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানে ‘মে মাসের প্রথম দিকে’ হবে।
ট্রাইব্যুনাল এ সময় বলেন, জবানবন্দিতে ওই কথার পাশে বিষয়টি নোট আকারে লিখে রাখার জন্য। কিন্তু এর বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, জবানবন্দি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাক্ষীর বক্তব্য সংশোধনের সুযোগ নেই। পরে এ নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে যুক্তি-তর্ক চলে। শেষে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, জবানবন্দির শেষে ও জেরা শুরুর আগে এ বিষয়টি সাক্ষীর বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত থাকবে। একই সঙ্গে এর পাশে ‘আসামিপক্ষের তীব্র আপত্তিসহ’ এটিও উল্লেখ থাকবে। পরবর্তী সময়ে জবানবন্দি নিয়ে যুক্তি-তর্কের সময় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিকেল চারটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
গোলাম আযমের জামিন আবেদন: জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। গোলাম আযমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী তাজুল ইসলাম গতকাল রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এই আবেদন জমা দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও স্বাস্থ্যগত কারণে জামিন আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পর্যালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেন। ওই দিন গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য জামায়াতের আটক নেতাদের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান আবদুর রাজ্জাককে নির্দেশ দেওয়া হয়। গোলাম আযম আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করবেন।
No comments