অর্থনৈতিক মন্দা-মোকাবিলায় দৃঢ়তা চাই
অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সরকারকে টাকা না ছাপানোর পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমাতে বলেছে। কমিটির মতে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অর্থনীতির স্বার্থে প্রয়োজনে সরকারকে অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আমরাও একমত যে এ ব্যাপারে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন নিকটবর্তী অবস্থায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
অর্থনীতির অবস্থা তখন আরো খারাপের দিকে যাবে। আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে যথেষ্ট চাপের মুখে রয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, ব্যাংকিং খাত থেকে বহির্বাণিজ্য_সব ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ক্রমহ্রাসমান ধারা চলছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, ব্যাংকে তারল্য সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো ঘটনার পেছনে ১৫টি কারণ কাজ করছে বলে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, তার সারবত্তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, কতটা চাপ সয়ে চলেছে আমাদের অর্থনীতি।
২০১০ সালের তুলনায় ২০১১-এর জুলাই-নভেম্বর সময়ে পরিমাণগত দিক থেকে আমাদের রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও আমরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। দেখা গেছে, এই প্রান্তিকে কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি মাত্রা অর্জন করতে আরো ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি আয় করার প্রয়োজন ছিল। এদিকে চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি বৃদ্ধি করতে হয়েছে। পরিসংখ্যান বলে, উপরিউক্ত সময়ে ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ আমদানি বেড়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। গত এক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১৫০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন কারণে। আমদানি ও রপ্তানিতে অনাকাঙ্ক্ষিত বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারণে যে আঘাত লেগেছে মজুদে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমদানি খাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের কারণে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করার জন্য সরকারকে জ্বালানি তেলভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে যে প্রচুর পরিমাণে তেল আমদানি করতে হয়েছে, তার জন্য স্বাভাবিক কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর আঘাত পড়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও প্রত্যাশিত বৈদেশিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি এ সময়ে। ফলে রিজার্ভে হাত পড়েছে। সরকারের ঘন ঘন ব্যাংকঋণ গ্রহণের কারণেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল, সেসব পূরণ করা এসব কারণেই সম্ভব হচ্ছে না। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত কারণে মানুষকে ব্যয় সংকোচননীতি গ্রহণ করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতা হলেও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সেই ধারণা কতটা স্পষ্ট, তা যে কেউ বুঝতে পারে। তাই অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য যদি গণ-অসন্তোষ তৈরি হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে কামনা থাকবে সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখবে সব কিছু। নাগরিক বিক্ষোভ যেন অস্থিতিশীলতা ডেকে না আনে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে সরকারকে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিকে যেন কেউ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে।
No comments