আবাদি জমি, সড়ক হুমকিতে ফেলে বালু তোলা হচ্ছে

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় মানাস নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে এলাকার আবাদি জমি ও সড়ক ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক বছর ধরে দুলু মিয়া নামের স্থানীয় একজন ব্যক্তি শ্রমিক দিয়ে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুলু মিয়ার বাড়ি উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের জয়দেব এলাকার কাগজিপাড়া গ্রামে। তিনি নদের পাড়ে শ্যালোযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলে তা বিক্রি করছেন।


এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কাগজিপাড়া গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সময় বালু তোলা হচ্ছে। অবাধে বালু তোলার কারণে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদের পাশের একমাত্র পাকা সড়কটি এবং অনেকের আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এখনই বালু তোলা বন্ধ না করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব জমি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বালুমহাল ইজারা দেওয়া এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে করা আইনের ৪-এর খ ধারায় উল্লেখ করা আছে—সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, বাঁধ, নদী, সড়ক, বন ও রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা বা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এখানে এ আইন লঙ্ঘন করে বালু তুলছেন দুলু মিয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালু তুলে তা ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুলু মিয়ার ভয়ে গ্রামের লোকজন এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।
তবে যাঁদের জমি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কৃষক আনুছ মিয়া বলেন, ‘প্রায় এক বছর থাকি বালু উত্তোলন করা হইতাছে। এমন করি বালু তুললে হামার জমি হয়তো একসময় এই নদীত (নদে) চলি যাইবে।’
কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হামার জমি থাকি গেল বছর কিছু মাটি সরি গেইছে। ফসল একটা ভালো হয় নাই। কায় শোনে কার কথা। জোর যার, মুল্লুক তার।’ কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এর অগোত হামরা মেলা কয়া আসছি বালু না তোলার জন্য। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানেরে বিষয়টি জানানো হইছে। এর পরও কোনো কাজ হয় নাই।
এলাকাবাসী জানান, এখানে বেশ কয়েকটি পরিবারের চার থেকে পাঁচ একর আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
গজঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বালু না তুলতে দুলু মিয়াকে মৌখিকভাবে বলেছি। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি।’
দুলু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে স্থান থাকিয়া বালু তোলা হইতাছে, এর আশপাশ এলাকার জমিগুলো হামারই। এ ছাড়াও জমি ভাঙিয়া এই নদীত (নদে) হামারও কিছু জমি গেইছে। সেটা থাকি এই বালু তোলা হইতাছে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলার সহকারী সহকমিশনার (ভূমি) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.