খামার থেকে পচা ডিম যায় বেকারিতে
মাদারীপুরে সাড়ে ১২ হাজার পচা ডিমসহ নেয়ামতউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও পরে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ডিমগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেকারিতে সরবরাহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশকে জানান। আর সাংবাদিকদের জানান, তিনি নিয়মিত বিভিন্ন খামার থেকে এসব পচা ডিম সংগ্রহ করে সরবরাহ করেন বিভিন্ন বেকারিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবদুল বারি জানান, ডিম পচে গেলে স্বাভাবিকভাবে তার মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এই ডিম বা ডিম দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার খেলে ডায়রিয়া-আমাশয়সহ পেটের পীড়া হয়। দীর্ঘদিন খেলে বড় ধরনের পেটের সমস্যায় পড়তে হবে। এ ছাড়া এর দীর্ঘমেয়াদি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাবও আছে।
মাদারীপুর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, শিবচর উপজেলার কাওরাকান্দি ফেরিঘাটে খুলনা থেকে চট্টগ্রামগামী শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসের ছাদ থেকে শনিবার ভোরে ওই ডিমগুলো আটক ও নেয়ামতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরের কাজী ফার্মস নামের একটি মুরগির খামার থেকে ওই ডিম নেওয়া হয়। গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইনস মোড় থেকে ডিমগুলো ওই বাসের ছাদে ওঠানো হয়। নেয়ামতউল্লাহর বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার গোয়ালারা গ্রামে। এ ঘটনায় কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপক ও নেয়ামতউল্লাহসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে’ শিবচর থানায় মামলা হয়েছে।
নেয়ামতউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ডিম কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে যান তিনি। গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও ও রাজবাড়ীতেও এই সরবরাহ হয়। প্রতিটি খামারে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিমগুলো তা দেওয়া হয়, যেটা ভালো তাতে বাচ্চা ফোটে। বাকি নষ্ট ডিমগুলো ধ্বংস করার কথা। কিন্তু তা গোপনে বিক্রি করা হয়। ফার্ম থেকে এক টাকা থেকে এক টাকা ১০ পয়সা দামে কিনে বেকারিতে দুই থেকে আড়াই টাকা দামে বিক্রি করা হয় এই ডিম।
বিভিন্ন খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রয়লার মুরগির জন্য যে ডিমে তা দেওয়া হয় তার শতকরা ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ পচে যায় বা নষ্ট হয়। এই ডিমগুলোতে পানি জমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। খামারের নিয়োজিত ব্যক্তিরা অবৈধভাবে এই ডিম বিক্রি করে দেন। এই সময় তাঁরা পণ্য কেনার রসিদ (ক্যাশ মেমো) দেন না। অনেক কারখানায় সপ্তাহে এক থেকে দেড় লাখ ডিম আসে। এসব গোপনে বিক্রি করা হয়। প্রায় সময়ই মালিকপক্ষ জানে না।
নেয়ামতউল্লাহ পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ডিমের ব্যবসা করেন তিনি। চট্টগ্রামে পাহাড়তলী এলাকায় তাঁর গুদাম আছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বেকারিতে বণ্টন করা হয়। বেকারির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি আছে। তিনি চট্টগ্রামের নামীদামি কয়েকটি বেকারির নাম বলেন।
নেয়ামতউল্লাহ আরও জানান, গোপালগঞ্জের নেয়ামতপুরে কাজী ফার্মসের বড় একটি মুরগির খামার আছে। গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুরের পলাশ ও আরিফের মাধ্যমে ওই খামারের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে কেনা হয় সাড়ে ১২ হাজার ডিম।
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য এনায়েত হোসেন নান্নু বলেন, এটি একটি জঘন্য অপরাধ। এই পচা ডিম দিয়ে বানানো কেক, বিস্কুট, ড্রাইকেকসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হতো। আমি যতদূর জানি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের খসড়া হয়েছে, কিন্তু তা পাস হয়নি।
No comments