সেনা-মৌমাছি আবিষ্কার
আপনারা সেনা পিঁপড়ার কথা শুনে থাকবেন। এটির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, অনাহূতদের হাত থেকে তাদের আবাসস্থলকে রক্ষা করা। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন প্রজাতির এক সেনা আবিষ্কার করেছেন। এরা হচ্ছে মৌমাছি জগতের। অথচ মৌমাছিরা পিঁপড়ার তুলনায় অনেক কম লড়িয়ে প্রাণী। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স ইউনিভার্সিটির একটি দল গবেষণা করে দেখেছে, জাতাই প্রজাতির কিছু মৌমাছি একেবারে যাকে বলে জাত যোদ্ধা। তাদের গবেষণার ফল পিএনএএস সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো গবেষণাপত্রে এটাই প্রথম সেনা মৌমাছির উল্লেখের ঘটনা।
পিঁপড়া ও উইপোকার জগতে সুনির্দিষ্ট জাতিভেদ ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন আকারের ও আকৃতির পতঙ্গ নির্ধারিত ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মৌমাছির ভূমিকা সে তুলনায় স্বল্পস্থায়ী।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাসেক্স ইউনিভার্সিটির গবেষক অধ্যাপক ফ্রান্সিস র্যাটনিয়েক্স বলেন, ‘শ্রমিক মৌমাছি বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন কাজ করে। তারা বাসা পরিষ্কার করা দিয়ে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা শূককীটকে খাওয়ায়...খাবারের অন্ব্বেষণ করে এবং একটি বয়সে শূককীটের নিরাপত্তা দেয়।’
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বেশির ভাগ সাধারণ প্রহরী মৌমাছি মাত্র এক দিন এ দায়িত্ব পালন করলেও জাতাই মৌমাছি তাদের বাসার মোমের তৈরি প্রবেশদ্বারে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পাহারা দেয়। মৌমাছির রাজ্যে তুলনামূলকভাবে এটি অনেক বড় সময়।
বাসার প্রবেশদ্বারের কাছে ভেসে বেড়ানো ও বসে থাকা মৌমাছিগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য গবেষকেরা রঙের ফোঁটা ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা দেখতে পান, ওই প্রহরীরা বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করে।
অধ্যাপক র্যাটনিয়েক্স বলেন, কয়েকটি সেনা মৌমাছি নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণা করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সেনা জাতাই মৌমাছি কেবল আচরণের দিক দিয়েই আলাদা নয়, গড়ন ও আকারের দিক থেকেও তারা শ্রমিক জাতাই মৌমাছির চেয়ে পৃথক। জাতাই সেনারা শ্রমিক মৌমাছির চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বড়।
গবেষক দলটি বলেছে, সম্ভবত ক্ষুদ্র জাতাই মৌমাছির সঙ্গে তাদের সবচেয়ে মারাত্মক শত্রু রবার বা দস্যু মৌমাছির বিবর্তনগত প্রতিযোগিতার ফলে জাতাই সেনার সৃষ্টি হয়েছে। দস্যু মৌমাছি জাতাইয়ের অনেক বড়। তবে জাতাইরা দৃশ্যত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করতে একা একা বের হওয়া দস্যু মৌমাছিকে কাবু করে নিজেদের ঘর বাঁচায়। এটি পরীক্ষা করতে গবেষকেরা দুটি প্রজাতির মৌমাছির মধ্যে লড়াইয়ের ব্যবস্থাও করেন। এতে সাহসের সঙ্গে লড়েও পরাজিত হয় জাতাই মৌমাছি। বিবিসি।
No comments