দক্ষিণাঞ্চলের নিজস্বতা নিয়ে দাঁড়াবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়-সাক্ষাৎকার by ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান
শিক্ষায় এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে শিক্ষায় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর অবস্থান সামনের সারিতে। শিক্ষার হার উচ্চ। বরিশাল জিলা স্কুল, বিএম স্কুল, গৈলা ও খলিশাকোঠা স্কুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান চলছে শতবর্ষের ঐতিহ্য ধারণ করে। ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বয়স ১২২ বছর। এমন একটি এলাকায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার কাজ কেন এত দেরিতে? ঢাকার কলাবাগান লেকসার্কাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অফিসে এ প্রশ্ন রেখেছিলাম অধ্যাপক হারুনর রশীদ খানের কাছে।
তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে পটুয়াখালীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কাজ শুরু করেছে ২০০২ সালে। এ হিসাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ এলাকার শিক্ষার যে বিস্তার তাতে আরও আগে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন গড়ে ওঠেনি, সে প্রশ্ন সঙ্গত। সত্তরের দশকের শেষ দিকে বরিশাল সার্কিট হাউসে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর কেবলই অপেক্ষা। জনগণ এজন্য রাজপথেও মুখর ছিল। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার কিছুদিন আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেফুলিয়ায় একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে, কিন্তু জাতীয় সংসদে পাস করা আইনে নাম দেওয়া হয় 'শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়'। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন স্থান নির্ধারিত হয় কাশীপুর এলাকায়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে কীর্তনখোলা তীরবর্তী কর্ণকাঠির অর্ধশত একরজুড়ে চূড়ান্ত হয় ক্যাম্পাসের স্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এ বছরের (২০১১) ২২ ফেব্রুয়ারি। এখন চলছে ভর্তি প্রক্রিয়া। কয়েক বছর ধরেই রংপুর, যশোর ও পাবনার পাশাপাশি বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বিষয়ে জোর তৎপরতা চলছিল। কিন্তু নানা কারণেই বরিশালের তুলনায় অন্যান্য স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ কিছুটা এগিয়ে গেছে। আমরা যেটুকু পিছিয়ে পড়েছি তা বাড়তি কাজ করে পুষিয়ে নিতে হবে। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি তো আর এগিয়ে আনার উপায় নেই। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আর যেন কোনো বাধা পিছিয়ে না দেয়।
জিলা স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্পাস
বরিশাল জিলা স্কুল স্থাপিত হয় ১৮২৯ সালে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্যায়ে এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে। এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের একটি অব্যবহৃত কলেজ ভবন রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের। বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে আরও প্রায় তিন বছর। এ সময় পর্যন্ত জিলা স্কুলের কলেজ ভবন কেন্দ্র করেই আমরা কাজ করব।
যাত্রা শুরু ৪০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে চারটি অনুষদে ভর্তি হবে ৪০০ ছাত্রছাত্রী। কলা, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে তারা ভর্তি হবে ৬টি বিভাগে_ ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ ও গণিত। ৬৫ থেকে ৭০ জন এক একটি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মান নির্ধারণ করে দিতে পারে, সে বিষয়ে আমরা যত্নবান। যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে, কেবল তাদের কাছ থেকেই দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অনলাইনে প্রায় চার হাজার আবেদন পড়েছে। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আরও অনেকে আবেদন করবে। বুঝতেই পারছেন, শুরুতেই মিলছে ব্যাপক সাড়া। লিখিত পরীক্ষা শেষে ৪০০ শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে এবং মেধার প্রশ্নে কোনো ছাড় আমরা দেব না। উপাচার্য বলেন, প্রথম ব্যাচে সেরা ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হলে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তার সুফল ভোগ করবে। তাদের মধ্য থেকেই বেছে নেওয়া যাবে শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জনে তাদের কাছ থেকে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা করতেই পারি।
শিক্ষক নিয়োগ
উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ হারুনর রশীদ খান বলেন, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি পর্যায়ের পরীক্ষায় থাকতে হবে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণী। কেবল ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে কিছুটা ছাড় দিতে হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন এমন কেউ কেউ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে তা কলেজের তুলনায় যথেষ্টই ভিন্ন এবং অবশ্যই উন্নত। আমাদের একটি সমস্যা হবে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগদান। এখন যারা ঢাকা কিংবা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আসবেন? তাছাড়া যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। পদ্মায় সেতু নির্মিত হলে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা-যাওয়া করা সম্ভব হবে। কিন্তু যতদিন যোগাযোগের সমস্যা থাকবে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগদান করে কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ভিজিটিং প্রফেসরও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। দেশের বাইরে খ্যাতি ও যশের সঙ্গে কাজ করছেন, এমন শিক্ষকদের বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করতে পারি। বরিশাল বিভাগের যারা বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করব। ভিজিটিং প্রফেসররা হয়তো ১৫ দিনের জন্য আসবেন এবং এ সময়ের মধ্যেই ২-৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করবেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু এ ধরনের উচ্চমানের শিক্ষক নিয়োগে যে ব্যয় পড়বে তা কে বহন করবে? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাড়তি ব্যয় ধরা ঠিক হবে না। তাদের ওপর পড়াশোনার চাপ পড়বে এবং সেটা নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকুক, এটা চাইব। নতুন একটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে বলেও মনে হয় না। আমি আশা করব যে, বরিশাল বিভাগের সচ্ছল ব্যক্তিরা এ জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তাদের কাছে আরও একটি বিষয়ে সহায়তা চাইব_ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান।
ছাত্রবৃত্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমে সহায়তা
অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হবে ৪০০ জন। তারা আসবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় তাদের আবাসন সমস্যা হবে প্রকট। শহরে বাসা ভাড়া করে তাদের থাকতে হবে, যা ব্যয়বহুল। শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেলে স্বস্তিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এমন একটি আদর্শ পরিস্থিতির কথা আমরা কি ভাবতে পারি না যে চারশ' বা ছয়শ' কিংবা আটশ'জন সচ্ছল ব্যক্তি এসব শিক্ষার্থীকে এককালীন কিংবা মাসে মাসে বৃত্তি প্রদান করবেন? বরিশাল জেলা শহর কিংবা আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন পরিবারেও ছাত্রছাত্রীদের স্বল্প ব্যয়ে কিংবা এমনকি কোনো অর্থ গ্রহণ ছাড়াই থাকার ব্যবস্থার কথাও ভাবা যায়। এভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা বরিশালের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বরিশালের মানুষ আপন করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
বরিশালের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চাখার_ শেরেবাংলার জন্মস্থান। সেখানে তার নামে রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যার প্রতিষ্ঠা ১৯৪০ সালে। এ কলেজের নামে রয়েছে অনেক ভূখণ্ড, যা স্থানীয়রা দান করেছেন। চাখারে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি রয়েছে এবং সে পদক্ষেপ নেওয়া যেতেই পারে। সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বা দুটি অনুষদ স্থাপনেও কোনো বাধা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমে যখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে, এ ধরনের সুযোগ তাতে নিশ্চিতভাবেই অবদান রাখবে। বরিশালবাসীর কাছে আমার আবেদন থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পূর্ণ রূপ দিতে তারা জমি দিয়ে কিংবা অন্য যেভাবে পারেন যেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এক বা একাধিক ব্যক্তি মিলে ছাত্রাবাস তৈরি করে দিতে পারেন। কিংবা অনেকে মিলেও এ কাজ করতে পারেন। যারা যেভাবে অবদান রাখবেন, অবশ্যই তার স্বীকৃতি দিতে আমরা কার্পণ্য করব না। গ্রন্থাগার ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনেও সহায়তা চাই। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ ক্লাস রুম স্থাপনও কেউ করে দিতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য শুরুতে ছাত্রাবাস না থাকায় তাদের যাতায়াতে কিছু সমস্যা হবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ এ জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করতে পারে। বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলোর সহায়তাও আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি দিয়ে অথবা আর্থিক ও অন্যান্যভাবে যারা সহায়তা করবেন তাদের সরকার কর-সুবিধা প্রদান করবে বলে আশা করব।
দক্ষিণাঞ্চলের স্বকীয়তা তুলে ধরতে চাই
বরিশাল অনেক কৃতী পুরুষের জন্মস্থান। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার, কবি জীবনানন্দ দাশ, বেগম সুফিয়া কামাল, মনসা মঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্ত, দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর_ তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। তাদের মতো আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির জীবন ও কর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হবে। গবেষণা, সেমিনার-ওয়ার্কশপে তারা প্রতিনিয়ত স্মরণে থাকবেন। বরিশালের ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত রাখা হবে। সাগরতীরের অর্থনীতি এবং সমাজ জীবনও থাকবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতেই এ পর্যন্ত উপকূল অঞ্চলের অর্থনীতি তেমন গুরুত্ব পায়নি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হতে পারে। বরিশাল বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা সাগরবিধৌত। এখানকার কুয়াকাটা সৈকতে অবস্থান করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। পটুয়াখালীতে একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বরিশাল শহর হবে রাজধানীর সবচেয়ে কাছের বিভাগীয় শহর। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বরিশাল বিভাগ একটি সম্ভাবনার নাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে সচেষ্ট রাখবে। আমরা এ অঞ্চলের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা যেমন ধারণ করব, তেমনি তা আরও বিকশিত করায় কাজ করে যাব। মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ অবদানের কথাও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিল আতঙ্কের। এখানকার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও আমাদের গবেষণা-সেমিনার-ওয়ার্কশপের বিষয়বস্তু হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা নয়, বরং সংশ্লিষ্ট দিবস সম্পর্কে কীভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে আমরা এখন থেকেই বিবেচনা করতে শুরু করেছি।
সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাসে স্বাগতম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে আকর্ষণীয়। পঞ্চাশ একর জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ভবন গড়ে উঠছে। তিন বছরের মধ্যে যাবতীয় নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। নির্মাণ কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের স্থাপত্যশৈলীকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। একটু দূর থেকে সব ভবনকেই মনে হবে একই ধরনের। কীর্তনখোলা নদী থেকে ক্যাম্পাসটি দেখতে অপরূপ লাগবে, এমনটিই বলছেন ডিজাইনাররা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবন থেকে মুগ্ধ চোখ পড়বে জীবনানন্দের রূপসী বাংলার এ নদীতে। এ নদীর ওপরে নির্মিত হয়েছে দুটি সেতু। সেখান থেকেও দেখা যাবে চোখজুড়ানো দৃশ্য। রাতের সৌন্দর্য নিশ্চিতভাবেই হয়ে উঠবে মায়াভরা। তবে আবারও বলছি, কেবল সৌন্দর্যে সেরা হবে না, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হিসেবে বেড়ে উঠবে, এমন প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এবং তা সফল হবেই। এ কাজে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি মানুষের সক্রিয় সহায়তা আশা করছি। তারা প্রত্যেকে যেন এ প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করতে পারেন সে জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাদের তরফে যে কোনো পরামর্শকেই স্বাগত জানানো হবে এবং যথাযথ গুরুত্বসহ তা হবে বিবেচিত।
এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রালগ্নে আমি সংবাদপত্র, টেলিভিশন-বেতারের সার্বিক সহায়তাও প্রত্যাশা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় জানার জন্য যে কেউ িি.িনধৎরংধষঁহরা.বফঁ.নফ ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরিশেষে, সমকাল কর্তৃপক্ষ এবং পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।
জিলা স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্পাস
বরিশাল জিলা স্কুল স্থাপিত হয় ১৮২৯ সালে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্যায়ে এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে। এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের একটি অব্যবহৃত কলেজ ভবন রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের। বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে আরও প্রায় তিন বছর। এ সময় পর্যন্ত জিলা স্কুলের কলেজ ভবন কেন্দ্র করেই আমরা কাজ করব।
যাত্রা শুরু ৪০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে চারটি অনুষদে ভর্তি হবে ৪০০ ছাত্রছাত্রী। কলা, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে তারা ভর্তি হবে ৬টি বিভাগে_ ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ ও গণিত। ৬৫ থেকে ৭০ জন এক একটি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মান নির্ধারণ করে দিতে পারে, সে বিষয়ে আমরা যত্নবান। যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে, কেবল তাদের কাছ থেকেই দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অনলাইনে প্রায় চার হাজার আবেদন পড়েছে। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আরও অনেকে আবেদন করবে। বুঝতেই পারছেন, শুরুতেই মিলছে ব্যাপক সাড়া। লিখিত পরীক্ষা শেষে ৪০০ শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে এবং মেধার প্রশ্নে কোনো ছাড় আমরা দেব না। উপাচার্য বলেন, প্রথম ব্যাচে সেরা ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হলে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তার সুফল ভোগ করবে। তাদের মধ্য থেকেই বেছে নেওয়া যাবে শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জনে তাদের কাছ থেকে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা করতেই পারি।
শিক্ষক নিয়োগ
উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ হারুনর রশীদ খান বলেন, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি পর্যায়ের পরীক্ষায় থাকতে হবে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণী। কেবল ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে কিছুটা ছাড় দিতে হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন এমন কেউ কেউ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে তা কলেজের তুলনায় যথেষ্টই ভিন্ন এবং অবশ্যই উন্নত। আমাদের একটি সমস্যা হবে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগদান। এখন যারা ঢাকা কিংবা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আসবেন? তাছাড়া যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। পদ্মায় সেতু নির্মিত হলে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা-যাওয়া করা সম্ভব হবে। কিন্তু যতদিন যোগাযোগের সমস্যা থাকবে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগদান করে কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ভিজিটিং প্রফেসরও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। দেশের বাইরে খ্যাতি ও যশের সঙ্গে কাজ করছেন, এমন শিক্ষকদের বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করতে পারি। বরিশাল বিভাগের যারা বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করব। ভিজিটিং প্রফেসররা হয়তো ১৫ দিনের জন্য আসবেন এবং এ সময়ের মধ্যেই ২-৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করবেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু এ ধরনের উচ্চমানের শিক্ষক নিয়োগে যে ব্যয় পড়বে তা কে বহন করবে? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাড়তি ব্যয় ধরা ঠিক হবে না। তাদের ওপর পড়াশোনার চাপ পড়বে এবং সেটা নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকুক, এটা চাইব। নতুন একটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে বলেও মনে হয় না। আমি আশা করব যে, বরিশাল বিভাগের সচ্ছল ব্যক্তিরা এ জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তাদের কাছে আরও একটি বিষয়ে সহায়তা চাইব_ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান।
ছাত্রবৃত্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমে সহায়তা
অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হবে ৪০০ জন। তারা আসবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় তাদের আবাসন সমস্যা হবে প্রকট। শহরে বাসা ভাড়া করে তাদের থাকতে হবে, যা ব্যয়বহুল। শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেলে স্বস্তিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এমন একটি আদর্শ পরিস্থিতির কথা আমরা কি ভাবতে পারি না যে চারশ' বা ছয়শ' কিংবা আটশ'জন সচ্ছল ব্যক্তি এসব শিক্ষার্থীকে এককালীন কিংবা মাসে মাসে বৃত্তি প্রদান করবেন? বরিশাল জেলা শহর কিংবা আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন পরিবারেও ছাত্রছাত্রীদের স্বল্প ব্যয়ে কিংবা এমনকি কোনো অর্থ গ্রহণ ছাড়াই থাকার ব্যবস্থার কথাও ভাবা যায়। এভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা বরিশালের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে। বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বরিশালের মানুষ আপন করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
বরিশালের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চাখার_ শেরেবাংলার জন্মস্থান। সেখানে তার নামে রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যার প্রতিষ্ঠা ১৯৪০ সালে। এ কলেজের নামে রয়েছে অনেক ভূখণ্ড, যা স্থানীয়রা দান করেছেন। চাখারে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি রয়েছে এবং সে পদক্ষেপ নেওয়া যেতেই পারে। সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বা দুটি অনুষদ স্থাপনেও কোনো বাধা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রমে যখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে, এ ধরনের সুযোগ তাতে নিশ্চিতভাবেই অবদান রাখবে। বরিশালবাসীর কাছে আমার আবেদন থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পূর্ণ রূপ দিতে তারা জমি দিয়ে কিংবা অন্য যেভাবে পারেন যেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এক বা একাধিক ব্যক্তি মিলে ছাত্রাবাস তৈরি করে দিতে পারেন। কিংবা অনেকে মিলেও এ কাজ করতে পারেন। যারা যেভাবে অবদান রাখবেন, অবশ্যই তার স্বীকৃতি দিতে আমরা কার্পণ্য করব না। গ্রন্থাগার ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনেও সহায়তা চাই। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ ক্লাস রুম স্থাপনও কেউ করে দিতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য শুরুতে ছাত্রাবাস না থাকায় তাদের যাতায়াতে কিছু সমস্যা হবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ এ জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করতে পারে। বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলোর সহায়তাও আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি দিয়ে অথবা আর্থিক ও অন্যান্যভাবে যারা সহায়তা করবেন তাদের সরকার কর-সুবিধা প্রদান করবে বলে আশা করব।
দক্ষিণাঞ্চলের স্বকীয়তা তুলে ধরতে চাই
বরিশাল অনেক কৃতী পুরুষের জন্মস্থান। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার, কবি জীবনানন্দ দাশ, বেগম সুফিয়া কামাল, মনসা মঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্ত, দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর_ তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। তাদের মতো আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির জীবন ও কর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হবে। গবেষণা, সেমিনার-ওয়ার্কশপে তারা প্রতিনিয়ত স্মরণে থাকবেন। বরিশালের ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত রাখা হবে। সাগরতীরের অর্থনীতি এবং সমাজ জীবনও থাকবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতেই এ পর্যন্ত উপকূল অঞ্চলের অর্থনীতি তেমন গুরুত্ব পায়নি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হতে পারে। বরিশাল বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা সাগরবিধৌত। এখানকার কুয়াকাটা সৈকতে অবস্থান করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। পটুয়াখালীতে একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বরিশাল শহর হবে রাজধানীর সবচেয়ে কাছের বিভাগীয় শহর। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বরিশাল বিভাগ একটি সম্ভাবনার নাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে সচেষ্ট রাখবে। আমরা এ অঞ্চলের স্বকীয়তা ও নিজস্বতা যেমন ধারণ করব, তেমনি তা আরও বিকশিত করায় কাজ করে যাব। মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ অবদানের কথাও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিল আতঙ্কের। এখানকার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও আমাদের গবেষণা-সেমিনার-ওয়ার্কশপের বিষয়বস্তু হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা নয়, বরং সংশ্লিষ্ট দিবস সম্পর্কে কীভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে আমরা এখন থেকেই বিবেচনা করতে শুরু করেছি।
সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাসে স্বাগতম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে আকর্ষণীয়। পঞ্চাশ একর জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ভবন গড়ে উঠছে। তিন বছরের মধ্যে যাবতীয় নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। নির্মাণ কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের স্থাপত্যশৈলীকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। একটু দূর থেকে সব ভবনকেই মনে হবে একই ধরনের। কীর্তনখোলা নদী থেকে ক্যাম্পাসটি দেখতে অপরূপ লাগবে, এমনটিই বলছেন ডিজাইনাররা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবন থেকে মুগ্ধ চোখ পড়বে জীবনানন্দের রূপসী বাংলার এ নদীতে। এ নদীর ওপরে নির্মিত হয়েছে দুটি সেতু। সেখান থেকেও দেখা যাবে চোখজুড়ানো দৃশ্য। রাতের সৌন্দর্য নিশ্চিতভাবেই হয়ে উঠবে মায়াভরা। তবে আবারও বলছি, কেবল সৌন্দর্যে সেরা হবে না, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হিসেবে বেড়ে উঠবে, এমন প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এবং তা সফল হবেই। এ কাজে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি মানুষের সক্রিয় সহায়তা আশা করছি। তারা প্রত্যেকে যেন এ প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করতে পারেন সে জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাদের তরফে যে কোনো পরামর্শকেই স্বাগত জানানো হবে এবং যথাযথ গুরুত্বসহ তা হবে বিবেচিত।
এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রালগ্নে আমি সংবাদপত্র, টেলিভিশন-বেতারের সার্বিক সহায়তাও প্রত্যাশা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় জানার জন্য যে কেউ িি.িনধৎরংধষঁহরা.বফঁ.নফ ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরিশেষে, সমকাল কর্তৃপক্ষ এবং পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।
No comments