গুমের শিকার ৩৩০ জনের ফেরার আশা ক্ষীণ

গুমের শিকার ৩৩০ ব্যক্তির ফেরার আশা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল রাজধানীর গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের যে তালিকা পাওয়া গেছে সেখানে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা- মিলিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তুলে ধরেন মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ভারত এক হাজার ৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুম সংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরও দিবে।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি। ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২শে ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে।

গুম কমিশনের প্রধান বলেন, কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।

তিনি আরও বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা আগেও বলেছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে বলে তুলে ধরেন তিনি। পুলিশ লাইনেও গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

বগুড়া পুলিশ লাইন এ বন্দিশালা পাওয়া গেছে দাবি করে কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। যেটি একেবারেই অ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও বন্দিশালা পাবো।

এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কিনা-এক সাংবাদিদের এ প্রশ্নে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।

গুমের অপরাধের দায় ব্যক্তির, এ দায় কোনো বাহিনীর নয় মন্তব্য করে কমিশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সকল সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে কমিশন। কেউ কেউ আশংকা করছেন যে, গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। কারণ অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বিচার কখনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর উপর বর্তায় না মন্তব্য করে গুম কমিশনের প্রধান বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতাদের দায় আছে। তাদের সংখ্যাও অনেক। প্রত্যেক বাহিনীতে নির্দেশদাতা ও গোপন বন্দিশালা ছিল।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.