অসহনীয় যানজট, দুর্ভোগ

পবিত্র রমজানের বিকালে রাজধানীতে অসহনীয় যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। অফিস শেষে ঘুরমুখো মানুষের চাপে প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কেই সময় কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সড়কের এই যানজটের চাপ পড়ে মেট্রোরেলেও। বিকালে মেট্রোতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা। লাইনে দাঁড়িয়ে এক বা একাধিক ট্রেন যাওয়ার পর যাওয়ার সুযোগ মিলে। পবিত্র রমজান মাসে সরকারি অফিসের নতুন সময় অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া বাকি পাঁচদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলে। সরকারি ছাড়াও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও এই সময়সূচি অনুযায়ী অফিস করে। এতে করে বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকেই ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে শুরু করেন নগরের বাসিন্দারা। ইফতারের ১৫-২০ মিনিট আগ পর্যন্তও সড়কে তীব্র চাপ দেখা যায় পরিবহনের। এতে বিকাল সাড়ে ৩টার আগে থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা অসহনীয় যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। এই সময় সড়কের যানজট গিয়ে ঠেকে ফ্লাইওভারেও। রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজটের এই চিত্র দেখা  যায়। অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে গণপরিহনগুলোতেও যাত্রীদের চাপ থাকে অনেক। ইফতারের আগে বাদুরঝুলা হয়েও বাসায় ফিরতে হচ্ছে অনেককে। গুলিস্তান থেকে কাওরান বাজার আসা মেহেদী নামের একজন যাত্রী বলেন, গুলিস্তান জিপিওর সিগন্যাল পার হতে না হতেই আবার পল্টনে সিগন্যাল পড়ে। সেখান থেকে আবার মৎস্য ভবন, শাহবাগের সিগন্যালে পড়তে হয়। এই ২০ মিনিটের রাস্তায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ইফতারের আগে অসহনীয় হয়ে উঠছে যানজট। নতুন বাজার থেকে বৌদ্ধমন্দির আসা সাজ্জাদ নামে বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, অফিস শেষ করে বিকাল ৪টায় বের হই। তখন থেকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকে। বাসও খালি পাওয়া যায় না। কোনো রকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। প্রতিটা সিগন্যালেই গাড়ি দাঁড়ায়। রবিন হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, বিকালে যে যানজট থাকে তা সহ্য করার মতো না। রোজা রেখে বাসে যানজট আর গরমের মধ্যে বসে থাকতে অসহ্য লাগে। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারেও যানজটের চাপ পড়ছে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে দুপুরের পর থেকে তীব্র যানজট লেগে থাকে। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাত্রীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারেরে উপরেই দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। আবার ফ্লাইওভার থেকে নেমে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়।

সড়কের তীব্র যানজটের কারণে ইফতারের আগে অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটেও রওনা দেন গন্তব্যে। জাহিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কাওরান বাজার থেকে মগবাজার যাবো। রাস্তায় প্রচুর যানজট। বাসের চেয়ে হেঁটে গেলেই কম সময় লাগবে। তাই হেঁটেই যাচ্ছি। কাওরান বাজারে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রোজায় আসরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকে। সব অফিস কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই শেষ হয়। সবাই চায় ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাতে। তাই এমন যানজট। আমরাও দ্রুত সিগন্যাল ছেড়ে রাস্তা গতিশীল করার চেষ্টা করছি। আশা করি সবাই ইফতারের আগেই বাসায় যেতে পারবেন। ইফতারের মুহূর্তে পুরো রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়।

এদিকে যারা মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন তাদের জন্যও বিকালে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় প্ল্যাটফরমের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী প্রতিটি স্টেশনেই যাত্রীদের চাপ থাকে। মেট্রোরেলে চলাচল করা যাত্রীরা জানিয়েছেন, বিকালে সব অফিস প্রায় একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় সবাই একই সময়ে মেট্রোরেলে ভিড় করেন। গাদাগাদি করে মেট্রোর ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আরিফুল ইসলাম নামের একজন যাত্রী জানান, পল্টনের অফিস থেকে নিয়মিত উত্তরা যাতায়াত করেন। অফিস শেষে সচিবালয় স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। বিকালে এত ভিড় হয় যে, লাইনে দাঁড়ানোর পর প্রথম ট্রেনে ওঠা যায় না, দ্বিতীয় ট্রেনে উঠতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও কাওরান বাজার স্টেশনেও এমন চিত্র দেখা যায়।

তামিম ইসলাম নামের এক মেট্রো যাত্রী বলেন, ইফতারের আগে সবারই বাসায় যাওয়ার তাড়া থাকে। তাই এই সময় ভিড় বেশি থাকে। একটু চাপাচাপি করেই যেতে হয়। সিয়াম নামের আরেক যাত্রী বলেন, আট মিনিট পর পর মেট্রোরেল আসে। তাও যাত্রীর চাপ কমে না। আগের ট্রেনটা ধরতে পারিনি। একবার মেট্রোতে কষ্ট করে উঠতে পারলেই হলো। কিন্তু রাস্তায় আরও খারাপ অবস্থা। মেট্রোরেলে একটু চাপাচাপি হলেও ভালো। দ্রুত পৌঁছানো যায়।

গতকাল থেকে যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে দুইজন করে এমআরটি পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত এমআরটি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এমআরটি পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, সম্প্রতি মেট্রোরেলে পকেটমার বেড়ে গেছে। প্রায়ই যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। অনেক যাত্রী অবৈধ মালামাল নিয়ে মেট্রোতে ওঠেন। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ট্রেনে দুইজন করে পুলিশ থাকবে। তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, এখন রমজান ও সামনে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেশি। এরমধ্য মেট্রোর যেসব কোচে বেশি চাপ থাকবে, সেগুলোতে প্রতি স্টেশন নেমে কোচ পরিবর্তন করবেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, এখন ৬টি কোচের একটি ট্রেনে মোট ২ জন করে এমআরটি পুলিশ সদস্য থাকবেন। সেই হিসেবে চলমান ১০টি ট্রেনে ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সকাল থেকে দুপুর ও দুপুর থেকে রাত; এই ২ শিফটে তারা কাজ করবেন। এ ছাড়া স্টেশনগুলোতে যেসব এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন, তারাও থাকবেন।

mzamin
ইফতারের আগে অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষ যানজটে অসহায়। ছবিটি রামপুরা ইউলুপের। -মানবজমিনের নিজস্ব ছবি

No comments

Powered by Blogger.