বিডিআর বিদ্রোহ ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: ‘সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্যদের মধ্যে খুব একটা শোকের ছায়া দেখলাম না’
সম্প্রতি ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ’ ইউটিউব চ্যানেলে এক আলোচনায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে সময়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এরকম একটা বিদ্রোহের ঘটনায় যে রিঅ্যাকশন হওয়ার কথা ছিল সেটা হয় নাই। আমি যখন কমিশনের সদস্য হলাম তখন দেখলাম ঘটনাটি পুরোপুরি ভিন্ন। এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’।
হাসান নাসির বলেন, ‘২৬ তারিখ বিকেলে বিদ্রোহ শেষ ঘোষণা করা হলো। তখন আমরা জানতে পারলাম ডিএডি তৌহিদ তখন পিলখানায় ছিলেন, তার সঙ্গে ২০০ বিডিআর সদস্য ভেতরে ছিলেন। পরদিন সকালে আমি জানতে পারি যে, তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে, এটার আমি সদস্য। ২৭ তারিখ বেলা ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথম সভা হবে। মিটিংয়ের আগে জানতাম না আর সদস্য কারা। সেখানে গিয়ে দেখি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী(সাবেক) সাহারা খাতুন, আইন প্রতিমন্ত্রী(সাবেক) অ্যাডভোকেট কামরুল। এরকম একটা দুর্ঘটনার পর আমরা আলাপে বসেছি, কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে খুব একটা শোকের ছায়া দেখলাম না। আমি সাহারা খাতুনকে প্রশ্ন করি, মাননীয় মন্ত্রী এটা কী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি নাকি জাতীয় পর্যায়ের? তখন তিনি একটা বিরক্তির স্বরে বললেন, কেনো আপনি জানেন না এটা জাতীয় কমিশন! আমি পাল্টা প্রশ্ন করি তাহলে আপনি এবং অ্যাডভোকেট কামরুল ২৫ তারিখ রাতে ১২টার পরে দীর্ঘ সময় পিলখানায় ছিলেন। তাহলে জাতীয় কমিশনকে বলতে হবে আপনারা ঐ সময় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, অফিসার ও তাদের পরিবারদের রক্ষা করা, যে ক্ষতি হয়েছে এটা বন্ধের জন্য আপনি কী অবদান রেখেছেন? সাথে সাথে পরিবেশ পাল্টে গেলো। ওখানে সচিব ছিলেন গোলাম হোসেন, উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, চলেন আমরা পিলখানায় যাই। এরপর আমরা পিলখানায় গেলাম। পিলখানা ভিজিট শেষে পরদিন সাড়ে ১০টা, ১১টার দিকে ফোন আসলো যে এই কমিশন বাতিল। ১টার দিকে আবার ফোন আসলো, জানলাম নতুন কমিশন হয়েছে, কিন্তু আমি নাই। ২টার দিকে আবার ফোন। আমাকে জানানো হলো যে, স্যার আপনাকে কমিটিতে না রাখার কারণে আমরা কমিটি মানি নাই। আবার কমিটি করা হয়েছে আপনাকে রাখা হয়েছে। ২৮ তারিখ বিকেলে পিলখানায় যে মিটিং হবার কথা ছিল সেটা চেঞ্জ হয়ে গেছে, সেটা হবে না। তৃতীয় কমিটিতে সাহারা খাতুন ও অ্যাডভোকেট কামরুলকে বাদ দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সচিব আনিসুজ্জামানকে সভাপতি করা হলো। বাকী সদস্যরা একই থাকলেন’।
তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যই ছিল একটা গল্প লেখা হবে তাতে সবাই সই করবে, শেষ। প্রথমে সাহারা খাতুনকে দেখেই আমার সন্দেহ হয়। এরপর টার্মস অব কন্ডিশন দেখেও আমার সন্দেহ হয়। প্রতিদিন অফিস শেষে ৩টার দিকে বিডিআর’র অফিসার্স মেসে বসতাম। ম্যাক্সিমাম সময়ে দেখতাম আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা গল্প আড্ডা চা খাওয়াতেই চলে যেতো। কার্যক্রমের মধ্যে কোনো সিরিয়াসনেস দেখতে পাই নাই। এরপর আমরা নিজেরা নিজেরা আলাদাভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। সেসময় র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই’র অনেকেই চাচ্ছিল সুষ্ঠু তদন্ত হোক। প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসুক। তরুণ অফিসাররা তথ্য দেয়া শুরু করে। সিনিয়র লেভেলে তখন চেঞ্জ হয়ে যায়। কিন্তু জুনিয়র লেভেলে কোনো পরিবর্তন তখনো হয় নাই। আমরা জানলাম জেনারেল মঈন ভারত থেকে আসার পর থেকেই সেনাবাহিনী পর্যায়ে একটা এডজাস্টমেন্ট চলছিল। এই হত্যাকাণ্ড উপলক্ষে র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই থেকে লিস্টেট করে আইন ভেঙে তাদের বিডিআর’এ পোস্টিং করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে বলতে আমি বলছি, এটা একটা সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী রেগুলার ইউনিটের বাইরে চাকরি করলে এরপর রেগুলার ইউনিটে ফেরত আসতে হবে। ডেপুটেশনে আসলেও আমাকে ফেরৎ যেতে হবে আর্মিতে। আমরা দেখলাম সেকশন অব অফিসারকে র্যাব, ডিজিএফআই থেকে বিডিআর’এ নিয়ে আসা হলো ছয় মাসের মধ্যে। পরে যখন আমরা দেখলাম এমনো লোক আছে ২৩ তারিখে যোগদান করানো হয়েছে। সিভিল থেকে পোশাক বানিয়ে এনে ২৫ তারিখ তাদের দরবার হলে হাজির করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে কর্নেল গুলজার, ক্যাপ্টেন তানভিরসহ অনেকে ছিলেন। আমি যাদের একমাস আগে বিদায় দিছি তাদেরও ডেথ লিস্ট দেখতে হয়েছে’।
হাসান নাসির বলেন, ‘কমিশনে কিছু কিছু তথ্য আমি পাচ্ছিলাম। আমার রিকুয়েস্ট ছিলো কমিশন এটাকে ফোরিফাই করুক। জুনিয়র অফিসারদের তথ্য কমিশনের পছন্দ হচ্ছিল না। জুনিয়ররা ইন্ট্রাক্ট করা শুরু করে, কল রেকর্ড মনিটর করা শুরু করছে। বিএনপির নেতা পিন্টুর নামে একটা বেনামে চিঠি আসে যে, তিনি নদী পারাপারে সহযোগিতা করেছিল বিদ্রোহীদের। যে আমাকে চিঠিটা দিয়ে যায় সে আমাকে কানে কানে বলে যায়, স্যার এটা কিন্তু আমার অফিসে টাইপ করা। কয়েকদিন পর সিআইডি থেকেও একই বেনামি চিঠি আসে। পিন্টুকে গ্রেপ্তার করার কারণ কিন্তু এই বেনামি চিঠি। তারপর তাকে জেলে মরতে হলো। তোরাব আলীকে আমরা পেলাম যিনি বড় আকারে ইনভলভ। রিটায়ার্ড সুবেদার। তার ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটন। এরা দুজন ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে ক্লোজ ছিল। সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে লিংক ছিলো যে তোমরা তাপসকে ভোট দিবা। তাপস জয় পাইলে তোমাদের বেতন ভাতাসহ যতো দাবি আছে সব মেনে নেবে। তোরাব আলীর একটা কল রেকর্ড আমার কাছে আসে। সুবেদারের কাছে ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে একটা মিসডকল ও চারটা কল হয়। ভারত থেকেও চারটা কল হয়। সেই সময়ে সে অলরেডি জেলে। আমি জেলে থাকা বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে এবং তোরাব আলীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। অন্য সবার সঙ্গে কথা বলার পর তোরাব আলীর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। আমি তোরাব আলীকে জিজ্ঞাসা করলাম আত্মীয়, স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব কেউ বিদেশে আছে? সে বলল, না। তখন আমি কল রেকর্ডটা বের করে ফোন নাম্বারটা চেক করি। নাম্বারটা তার বলার পর আমি বলি, এই নয়টা কল বিদেশ থেকে আসছে। এই কথা বলার পরই সে চুপ। এসব ঘটনার পরই আমাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়। এরপর ৩০০ কল যদি থাকে পেপার ওয়ার্কে দেখানো হয় ১০০ কল। বিদেশি কলসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হওয়া কল ডিলিট করে দেয়া হলো। ভারতের সঙ্গে কল, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কল, কিলাররা চট্টগ্রামে প্রথম ধরা পড়লো ওদের স্টেটমেন্ট চলে এসেছিলো আমার কাছে। আমি যেসব তথ্য পাচ্ছিলাম সেগুলো যাচাই না করে উল্টো আমাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা হলো। একটা পর্যায়ে দুজন রক্ষীবাহিনীর লোক আলাদা আলাদা তারিখে আসেন। তারা আপার বেড রুমে আলাপের বিষয়ে কথা বলেন। আমি বলি কোন আপা, বলে কেনো প্রধানমন্ত্রী(সাবেক) শেখ হাসিনা। তখন বলা হলো, একলা চলাফেরা করো, ভাবি-বাচ্চারা একলা চলাফেরা করে কী দরকার। আওয়ামী লীগ খুব খারাপ। আপার সঙ্গে কথা হইছে এটা প্রমোশন নাও, সই করো। যেকোনো দেশের এম্বাসেডর হয়ে যেতে পারবা। দেশে আর রাখবে না। আমার মৃত্যু পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু যেখানে লেখা আছে সেখানেই হবে। আমি অফারটা নিলাম না’।
তিনি বলেন, ‘এতো বড় আকারের একটা হত্যাকাণ্ড। যেটার মাধ্যমে শুধু বিডিআর না বাংলাদেশের পুরো সশস্ত্র বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০৯ সালে যে স্বৈরাচার শাসনের শুরু হলো সেটা এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিয়ে। আইসিটিকে আমরা কনভিন্স করতে পারছি যে, তারা পোশাকে থাকলেও তারা সিভিলিয়ন হিসেবে গিয়েছে কথা শুনতে। যদি ব্যাটল যুদ্ধরত অবস্থায় হতো তাহলে জেনেভা কনভেনশন আসতো। এটা শতভাগ ষড়যন্ত্র। লিস্ট আউট করে পোস্টিং করা হয়েছে। এক গ্রুপকে দেখামাত্র গুলি করা হয়েছে। নিকট আত্মীয় বা আওয়ামী লীগ পরিবারের তাদের কোয়ার্টার গার্ডে রাখা হয়েছে। যারা জড়িত তারা সরাসরি সৈনিকদের সঙ্গে থাকছে এবং এরপর বেরিয়ে চলে এসেছে। সব সংস্থার অফিসারদের সম্পৃক্ততা না হলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব হতো না'।
পোস্টিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এই পোস্টিং শুরু হয়েছে জেনারেল মঈনের ভারত সফরের পর থেকেই। যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা যেন বিডিআর’এ জয়েন করেন। এমনকি ছুটি বাতিল করেও জয়েন করানো হয়েছে। র্যাব থেকে আর্মিতে যাওয়ার কথা সে সরাসরি বিডিআর’এ আসছে। পোশাক বানিয়ে পরদিন হাজির করছে। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৪০ ব্যাটেলিয়ান আর্মস তার অধিনায়ক কর্নেল শামস, তার অধীনস্থ আরও তিনজন অফিসার বীরের মতো বের হয়ে চলে আসছে। শামস ওখান থেকে যমুনায় গেছে। সেখান থেকে নিয়োগ পরিবর্তন হয়ে এসএসএফ’এ যায়। এটার আইনের পরিপন্থি। শামস এখন পর্যন্ত কোনো বিচারের আওতায় আসে নাই। বিশ্বের কোথাও এমন কিছু হয় নাই যে ব্যাটেলিয়ান বিদ্রোহ করে তার প্রধানকে দায়ী করা হয় নাই। হাইকোর্ট থেকে রায় এলো এদের বিচার ক্রিমিনাল কোর্টে হবে। এতে কিন্তু কর্নেল শামস আসামি নয় সাক্ষী’।
তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের জন্য একটা দাবি দাবার ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল। এখন দাবির একটা সিজন চলছে। সবার দাবি আছে এরকম বিডিআর এরওতো দাবি থাকতে পারে। তখন একটা ট্রেন্ড ছিল বিডিআর পুলিশ, আনসার সবাই আর্মির সমান সুবিধা চায়। ডাল ভাতের যে অভিযোগ আছে কোন একটা বিষয় সাপ্লাই দিতে হবে সে পরিচিত একজনকে বলছে। এই দোকানগুলো চালাইতে হবে এটার মধ্যেই দুর্নীতি। মূল দুর্নীতি হলো ৩০০ কোটি টাকার চাল বরাদ্দ দেয়। ১০ শতাংশ কমিয়ে সরকারকে ফেরৎ দিতে হবে। অর্থাৎ ২৭০ কোটি টাকা। কিন্তু জমা হয়েছিল ৩১০ কোটি টাকা। তারা টাকা জমা দিতে দিতে আর হিসেব করেনি। দুর্নীতি হলেতো ২০০ কোটি টাকা জমা হতো। বরং অন্যান্য পণ্যের লাভের টাকাটাও এখানে যোগ হয়েছে’।
জওয়ানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৯টার সময় গোলাগুলি শুরু হলো। ১০টার সময় এসে মুন্নি সাহা এতো গল্প কী করে জানলো? এটাও একটা তদন্তের বিষয়। নিউজ হেডদের ডাকা হয়েছিল। ওরা সবাই এসে একটা কমন বক্তৃতা দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো মুন্নি সাহা একজন বিদ্রোহীর সঙ্গে কথা বলছে কিন্তু সামরিক বাহিনীর কেউ কেনো পারছে না। রাজনৈতিক নেতা একটা সাদা রুমাল নিয়ে কীভাবে চেলে গেলো ভেতরে? ইন্টেলিজন্সের দায়িত্ব ছিল তথ্য দেয়া। এটাই তাদের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তারা একটা ব্লাংক লুক দিলো। হেড অব দ্য ইন্টেলিজেন্স মামুন খালেদ, আম্বালা সুইটস এ ২৫ তারিখ সকাল ১০টা থেকে ২৬ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলো। কিন্তু সে কোনো তথ্যই দিলো না। ১৪ জন যখন যমুনার গেটে গেলো এটা ওরা দেখেছে। ভিডিও ফুটেজ থাকার কথা। কোনো কিছুই রেকর্ড নাই। ১৪ জন খুনি যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসা তার আগেই খবর বেরিয়েছে তিনজন মারা গেছে। তারা তিনটার সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে। দুটার সময় কিন্তু দুটা ডেড বডি পাওয়া গেছে। তারা যেয়ে বলল তিন বাহিনীর প্রধান থাকলে আমরা কথা বলবো না। প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানকে বের করে দিলেন। হওয়া উচিত ছিল কি এই ১৪ জনকে আটকে রেখে বলা আমার অফিসারদের ছাড়ো, পরিবারের লোকদের ছাড়ো তারপর তোমাদের ছাড়ব। যাদের প্রতিহত করার কথা তারাইতো এটার সঙ্গে জড়িত। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী জড়িত। দুজন মহিলা ভেতরে নির্বিঘ্নে চলে গেলো। গোলাগুলি হচ্ছে ৫/৬টা এমপি ঢুকলো বির্বিঘ্নে। সোহেল তাজ কোথায় ছিল কেউ জানে না। ২৪ তারিখ রাতে নীলক্ষেত মোড়ে একটা প্রেট্রোল পাম্প আছে সেটার মালিক ডিজি জেনারেল শাকিলকে সরাসরি ফোন দেয়। তিনি বলেন, ২৫ তারিখ যে দরবার হওয়ার কথা আছে আপনি সেখানে যাবেন না আপনাকে মেরে ফেলা হবে। এই কথা বলার ১০/১৫ মিনিট পরই ওই মালিককে একটা মাইক্রোবাস এসে উঠায় নিয়ে যায়। ২৬ তারিখ বা ২৭ তারিখ রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মালিককে হাজির করা হয় না। কি হয়েছে একটা টেলিফোন কনভারসেশন হয়েছে। তারমানে ডিজির ফোন কন্টিনিউয়াস মনিটরিংয়ে ছিল। ডিজিএফআই, এনএসআই কোনো ডিজিকেই আনা যায় নাই কমিশনে। নানক, তাপস, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট কামরুলকে বলা হলো ওনাদের ইন্টারভিউ নেয়া হবে কিন্তু আনা গেলো না। ওই পাম্প মালিককে আনা গেলেও কিন্তু জানা যেতো কী ঘটনা ঘটছে।
বিডিআর এর একটি লিফলেট ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে ছাড়া হয়। একটা অসন্তোষ ছিল এটা জানতাম। দুই বছরের কেয়ারটেকার সরকারের সময় বিডিআর সপ্তাহটাও হয় নাই। ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী প্যারেডে যোগ দেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ অনেকেই ছিলেন। ২৩ তারিখে তিনটা এসএমজি হারানো যায়। এটা অস্বাভাবিক বিষয়। প্রধান অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগের দিন তিনটা অস্ত্র হারালো অনুষ্ঠানই হবার কথা নয়। তিন এজেন্সি যারা আছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে প্রশ্ন রাখি... প্রধানমন্ত্রী যাবার আগে একটা সিকিউরিটি সার্ভে হয়। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদাভাবে করে। কিন্তু তাদের রিপোর্ট দেখলাম রুটিন, সব ঠিক আছে। ২৫ তারিখ রাতে একটা বিডিআর’র ডিনার হয় এটা ট্র্যাডিশন। ওইটা উনি না করে দিয়েছিলেন। শুধু তিনটা প্রতিষ্ঠানের তিনটা অফিসারের ডিউটি দেয়া হয় অস্ত্রের ওখানে'।
তিনি বলেন, ‘আর্মি অ্যাক্ট ৩১। এতে বলা হয়, বিদ্রোহের কোনো ঘটনার তথ্য আসলে আমার ক্ষমতা থাকলে আমি রেজিস্ট করব। এই ঘটনার পর কিন্তু সেনাবাহিনী জেনেছেন। তিনি কিন্তু সরাসরি আদেশ দিতে পারতেন যে, যাও তোমরা বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনো। তিনি করলেন না। দ্বিতীয়ত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী যখন ওখানে গেলো গুলিতে একজন সৈনিক নিহত হলেন এবং আরেকজন মারাত্মক আহত হলেন। এখানেও আর্মি রিয়্যাক্ট করে নাই। ৯.৫০ এ র্যাব যখন যায় তখন তাদের বলা হয় কোনো অ্যাকশনে যাবা না। সেনাবাহিনী গেলেও তাদের একই কথা বলা হয়। র্যাব থেকে না করছিলেন ডিডিজি রেজা নূর। সে বাহাউদ্দীন নাসিমের কাজিন সে। সে বলে, যাবা না। ইচ্ছা করলেই যাওয়া যেতো। একটু পর যখন ইনসিস্ট করেছে তখন বলা হয়েছে তোমরা নিরাপদ দূরত্বে চলে যাও। প্রথমে যদি ঢুকতে দেয়া হতো তাহলে অনেক হত্যাকাণ্ডই হতো না। সাহারা খাতুন রাতে ভেতরে ছিলেন। তার থেকে ৫০ মিটার দূরে একজন বেরিয়ে আসছে তাকে মারা হয়েছে। ওনাকে বলা হলো গুলির শব্দ শুনেছেন উনি বললেন, শুনি নাই। পরে জানা গেলো তার খুব কাছ থেকে একজনকে মারা হয়েছে। আগের কমিশনে যেহেতু ব্রিগেডিয়ার রশিদ আমাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন। শুধু সাইন করার সময় হলে তিনি সাইন করতে ডাকেন। পরে আমি ডিজঅ্যাগ্রি করি। আমি রিজেক্ট করি। আমার ধারণা অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এটা পুর্নতদন্ত হবে। যেহেতু এটা সবার দাবি। দাবি উঠলেও কাজ হলো না। হাইকোর্ট থেকে বলা হলো, কমিশন গঠন করতে হবে এবং শহীদ দিবস পালন করতে হবে। কোর্টে একজন বলতেছেন কমিটি কমিটি। আমিতো জানি কমিটি আর কমিশন আলাদা। কমিশন একটা কোর্ট। তারা যেকোনো কাউকে ডাকতে পারে। একজন অ্যাডভোকেট হাইকোর্টে দৌড়াদৌড়ি করতেছে বলতেছে কমিটি তাই আমরা আর পরবর্তী হেয়ারিংয়ে গেলাম না। পরে স্বরাষ্ট্রে জানিয়ে দেয় যে আপাতত কোনো কমিটি হবে না। পরে আমাদের সন্দেহ হয় কমিশন যাতে না হয় এজন্যই এই রিটটা করা হয়েছে। এরপর আমরা শহীদ পরিবারদের নিয়ে একটা দাবি করি এরপর কমিশন গঠন করে দেয়া হয়’।
ফরেন এলিমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবারের একজন বলেছেন আমার বাসায় যে ১০/১২ জন সৈনিক ঢুকেছে তাদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলেছে। আরো জানতে পারি বিভিন্ন জায়গায় হিন্দিতে কথা বলা সৈনিক ছিলো। আরো অনেক সৈনিক পেয়েছি যাদের মুখ বাধা ছিল তারা নিজেদের লুকাচ্ছিল। আর বিডিআররা কিন্তু নিজেদের লুকায়নি। ওই দিন সকালে একটা ট্রাক যে ট্রাকে ন্যাশনাল লেবেলের খেলোয়াড়রা খোলা মাঠে যায়, আবার ফিরে আসে। ধারণা করা হয় এই ট্রাকে একটা গ্রুপ ঢুকে পরে। তাদের ড্রেস বাইরে সিভিলে বানানো হয়। ২৫ তারিখ রাত আটটার দিকে চারটা অ্যাম্বুলেন্স কোনো ধরনের মার্কিং নেই দ্রুতবেগে ভেতরে গেলো। কেউ তাদের চ্যালেঞ্জ করলো না। তারা আবার ভর্তি হয়ে বের হলো কেউ তাদের চেক করলো না। এরকম ঘটনায় ঢোকা এবং বাইর হবার সময় চেক হবে। কোনো ধরনের চেক হলো না। কোনো নম্বরও ছিল না গাড়িতে। এগুলো যে প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণ্ড না হলে এতো সহজে হতো না। পরদিন ঢাকা এয়ারপোর্টে একটা ফ্লাইট দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে ফ্লাই করলো। ধারণা করা যায় ওই ফ্লাইটে কিছু কিলার বেরিয়ে যায়।
কিলাররা দেশে ঢুকলো কীভাবে? এটা আমাদের আওতার বাইরে ছিল। এটা নিয়ে আমরা ইনভেস্টিগেশন করতে পারি নাই। সিআইডি, ডিজিএফআই, এনএসআই এদের ইনভেস্টিগেশন করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা করে নাই। কমিশনের স্টেটমেন্ট দেখে মনে হবে সাধারণ একজন জনতা সেখানে ছিলো। পরে মামুন খালিদ একটু পরিবর্তন করেন। ৩ মার্চ একটা স্টেটমেন্ট দেয় এরপর ২৩শে মার্চ আরেকটা স্টেটমেন্ট দেয়। তার স্টেটমেন্ট হওয়া কথা ছিল অনেক বেশি। কে কোথায় বৈঠক করেছে, কে কে ছিলো এসব বিষয় থাকার কথা ছিলো। কিন্তু কিছুই সেখানে ছিলো না। আমরা ডিজি ডিজিএফআইকে কিন্তু খুঁজে পাই নাই। অনেকের ধারণা দুবাইতে যেয়ে কিলারদের পেমেন্ট করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি দুই বাংলার মিলনমেলা হলো বেনাপোল বর্ডারে। ১০ হাজার মিষ্টি আসলো দেশে। মিষ্টির একটা অংশ ঢাকায় আসলো। ওই সময় কোনো পাসপোর্ট ভিসার ব্যাপার ছিলো না। ওপেন বর্ডার করে দেয়া হয়। ঢাকায় যে মিষ্টিগুলো নিয়ে এসেছে এরাই খুনি। হতে পারে তারা ট্রাডিশনাল কিলার। সাধারণত দুই দেশের বর্ডারে এরকম কখনও হয় না। দুই দেশের মিষ্টি বিতরণ। কে আসলো কি আসলো কিছুই জানি না'।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার থেকে আমাকে কমিশনের প্রধান করার প্রস্তাব আসে। আমি অস্বীকৃতি জানাই। এটাতেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে। আগের কমিশনের রিপোর্টে আমি নোট অব ডিসেন্ট দিলাম। মানে আগের কমিশনের রিপোর্ট প্রশ্নবিদ্ধ। এখন নতুন কাউকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয়। আমি নোট অব ডিসেন্ট দিলাম এখন আমি তদন্ত করলে অবশ্যই বিতর্ক হবে। বলা হবে আওয়ামী লীগকে বা ভারতকে টার্গেট করার জন্যই এই তদন্ত করা হয়েছে। এজন্য আমি ডিজএগ্রি করেছি'।
No comments