কার্যকর হয়নি সরকারের বেঁধে দেয়া দাম

বাজারে স্বস্তি ফেরাতে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদক পর্যায়ে ডিম, মুরগির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ১৯ দিন পেরোলেও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকারের বেঁধে দেয়া দাম। আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার-সোনালি মুরগি। সরকারি দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশিতে ব্রয়লার আর ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। খুচরা বাজারে এক ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকা উঠেছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা বেশি। আর পাড়া-মহল্লায় ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। এতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে এই কম দামের পুষ্টি। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্রই দেখা গেছে।

এদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে আরও বেড়েছে সবজির দাম। চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। আর পিয়াজের দাম সামান্য কমতে দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম একদম অস্থিতিশীল। দুই-তিন সপ্তাহ ধরেই ডিম কিনতে কষ্ট হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। এখন ডিমের দাম শুনে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। বাজারে খুচরায় প্রতিটি ডিম ১৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৫ই সেপ্টেম্বর এক আদেশে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসেবে ডিমের হালি খুচরা পর্যায়ে ৪৭ টাকা ৪৮ পয়সায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ এখন প্রতি হালি কিনতে হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। হালিতে ১১ থেকে ১২ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে।
এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩১০ টাকা, কক কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও শুধু ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। বাকিগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা নির্ধারণ করে দেয়া দামের চেয়ে ১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ টাকা, যা নির্ধারণ করে দেয়া দামের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

ওদিকে বেশ কয়েক মাস ধরে চড়া রয়েছে আলু ও পিয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত পিয়াজ রপ্তানিতে শর্ত শিথিল ও শুল্ক কমানোর পর দেশের পিয়াজের দাম অল্প কিছুটা কমেছে। আগে যেটি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, সে পিয়াজ এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশকিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমেছে। অনেক সবজি ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া এখন গ্রীষ্মের মৌসুমের সবজিগুলো সরবরাহ শেষ দিকে, আর শীত মৌসুমের আগাম সবজির সরবরাহ কম। দুই মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এখন দাম বাড়ছে।

সবজি বিক্রেতা মো. আলী বলেন, গ্রীষ্মের মৌসুম শেষে, শীতের মৌসুম শুরুর আগের এই সময়টি প্রতি বছর সবজির দাম একটু বেশিই থাকে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পেঁপে ছাড়া বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। তাও ৬০ থেকে ৭০ টাকায় শুধু পটোল মিলছে। ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কচুরমুখী বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, কাঁকরোল, করলা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শীতের আগাম সবজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। প্রতি পিস ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.