ধরাছোঁয়ার বাইরে একরামপুত্র সাবাব by মারুফ কিবরিয়া
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯শে জুন মহাখালী ফ্লাইওভারে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর সময় সেলিম নামের এক চালক ঘটনাস্থলে মারা যান। সেই ঘটনায় কাফরুল থানায় মামলা হয়। কিন্তু মামলায় রহস্যজনকভাবে সাবাবকে আসামি করেনি পুলিশ। সম্প্রতি অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে আদালতে। কাফরুল থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এই মামলা তদন্তকালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে আরেক প্রভাবশালী সাবেক এমপি হাজী সেলিম পরিবারের আত্মীয়তা। এ ছাড়া একরাম চৌধুরীও প্রভাব বিস্তার করেছেন। সবমিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সাবাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ ছিল না।
ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর মহাখালী উড়ালসড়কে গাড়িচাপা দিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় দায়ী গাড়িটিকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-১৩-৭৬৫৫। আর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িটির মালিক কামরুন্নাহার শিউলি। তিনি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান। তবে ওই দুর্ঘটনার পর গাড়িটি দ্রুত এসে সংসদ ভবনের উল্টো দিকের ন্যাম ফ্ল্যাটে যখন ঢোকে, তখন সেটিকে অনুসরণ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী ও আরেকজন প্রাইভেটকার আরোহী। তারা জানিয়েছেন, গাড়িটি ওই ভবনে ঢোকার পর একজন তরুণ গাড়ি থেকে নামেন। ভবনটির আনসার ও প্রহরীরা জানিয়েছেন, ওই তরুণের নাম সাবাব চৌধুরী। তিনি কামরুন্নাহার শিউলি ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। গাড়িটি সাবাবই চালাচ্ছিলেন।
বাবার ক্ষমতার জোরে সুবর্ণচরের জনপ্রতিনিধি সাবাব তার বাবা একরামুল করিম চৌধুরীর ক্ষমতার জোরেই নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। অভিযোগ রয়েছে, সেই ভোটেও কারচুপির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারানো হয়েছে। এ ছাড়া গত মে মাসে হয়ে যাওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকায় উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন একরামুল করিম চৌধুরী। পরে জোর করে সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েই পরাজিত প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠে সাবাবের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি নোয়াখালীতে সরজমিন ঘুরে জানা যায়, একরামপুত্র সাবাব বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু দেশে বাবা একরাম ও মা শিউলির সঙ্গে অপরাজনীতিতে নাম লেখান। বাবা-মায়ের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেও বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীতে একরাম পরিবারের নামে যেসব চাঁদা উঠতো তার বেশির ভাগই পাচার করা হয় বিদেশে। ভিয়েতনামে একরামের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন তারই ছেলে সাবাব চৌধুরী। বাবার অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভিয়েতনামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবাবের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
No comments