‘এখন তোমরা কোথায় কোন জঙ্গলে লুকিয়ে আছো’
সভায় জামায়াতের আমীর আরও বলেন, আমরা দাবি করি প্রত্যেকটা শহীদ পরিবারের থেকে কমপক্ষে একজনকে যাতে সম্মানজনক চাকরি দেয়া হয়। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে তাদেরও যাতে সম্মানজনক চাকরি দেয়া হয়। তারা যাতে কারও করুণার পাত্র হয়ে না থাকে। জাতির দায়িত্ব এখন এই পরিবার ও ব্যক্তিদের সম্মানিত করা। আমরা দল এবং ধর্মের ভেতর থেকে কোনো বিভাজন মানি না। কোনো মেজরিটি মাইনরিটি নাই।
আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। রাজনীতিতে কোনো ব্রাহ্মণগিরি চলবে না। রাষ্ট্রে আমরা সবাই সমান। এখন কথা হলো- যারা পালিয়ে গেলেন, লুকিয়ে গেলেন, গর্তে গেলেন, কলাপাতায় ঘুমিয়ে গেলেন তাদের কি হবে, তাদের প্রতি কোনো অবিচার হোক তা চাই না। কিন্তু যার ফাঁসি হওয়ার কথা ফাঁসি হোক। যার যাবজ্জীবন পাওনা সেটাই যেন পায়। তারাই বড় গলায় বলেছেন সবার জন্য সমান। আসেন এখন সমান আইনটা কেমন একটু দেখে যান। তারা বলেছেন স্বাধীন বিচার বিভাগ আমরা এখনো বলছি বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক।
মতবিনিময় সভাটি বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের সমাগমে বিশাল সমাবেশে পরিণত হয়। মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, ঢাকা অঞ্চল উত্তরাঞ্চল টিম সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, জেলা আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর সেক্রেটারি আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, প্রচার সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আইউবী, মমতা আফজাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জামায়াতের আমীর আরও বলেন, আমরা শহীদদের কোনো দলীয় ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। শহীদগণ জাতীয় সম্পদ। তাদেরকে ইজ্জতের চূড়ান্ত সীমায় রাখতে চাই, দেখতে চাই। এই শহীদ পরিবারগণের প্রতি রাষ্ট্রকে অবশ্যই নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। শহীদ পরিবারের লোকজন আমাদের অহংকারের পাত্র সম্মানের পাত্র। সরকারের কাছে দাবি জানাবো শহীদদের যেন সঠিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে তোমরা যাদের ওপর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ করেছো অত্যাচার নির্যাতন করেছো, তাদের একজনও এই দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। হাসিমুখে ফাঁসি বরণ করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। যারা অন্যায় অত্যাচার করেছে আল্লাহ তাদের খোলা আকাশের নিচে জায়গা দিয়েছেন। দেশ গঠনে আমরা জামায়াতে ইসলামী আপামর জনতার সহযোগিতা চাই।
জামায়াতের আমীর বলেন, দেশের স্বার্থে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। যত বিভাজন তা আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দিবো না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে আর ভাগ করার সুযোগ দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমরা আপসহীন।
তিনি বলেন, জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, তাদের সেবক হয়ে মালিক বনে গেলে কি পরিণতি হয় তা থেকে আমি, আমরা এবং জাতিকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আর কোনো স্বৈরাচার সরকার আসবে না যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণকে তাদের কেনা টাকায় বুলেট ছোড়ার দুঃসাহস করবে। এমন কোনো নতুন সন্ত্রাসী সরকার দেখতে চাই না।
কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে তাদের বিচারক হিসেবে চাই। যারা মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো বিচার করবে না। নীতি, নৈতিকতা ও সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দিবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে, সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহীদদের বিভক্তি চাই না। তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামীদিনের নাগরিকরা যেন জানে তাদের মুগ্ধ, সাঈদ ও রিয়ারা ছিল। এ সময় তিনি প্রত্যেক শহীদ পরিবারের সদস্যদের একজনকে সরকারি চাকরি দেয়ার দাবি করেন। সভার শুরুতে জামায়াতের আমীর শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
No comments