বিএনপি নেতার নাম ভাঙিয়ে কলেজে প্রবেশের চেষ্টা, ব্যারিস্টার অসীম বললেন, চিনিই না অধ্যক্ষকে by পিয়াস সরকার
কয়েক বছর ধরেই তার স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বুধবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেদিন হঠাৎ লোকজন নিয়ে উদয় হন তিনি। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুইঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ এসে তালা ভেঙে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্ত করেন। ব্যারিস্টার অসীম আরও বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমার কোথাও কোনো যোগাযোগ নেই। আমি তার কাছে জানতে চাইবো কেন আমার নাম ব্যবহার করেছেন। ধানমণ্ডি এলাকায় আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঝামেলা রয়েছে। সেগুলোতেও আমি জড়াইনি। এসব বিষয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধান হোক- এটাই আমি চাই। এরপরও সমাধান না হলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ দীন মোহাম্মদ খানের বিষয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে সাত বছর অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী ছয় মাসের বেশি যা তিনি করতে পারেন না। এই সিন্ডিকেটের কবলে গত ১৬ বছর শিক্ষকরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।
তথ্যমতে, তার তিন স্ত্রী। যার মধ্যে একজন কলেজটির শিক্ষিকা। এরপরও কলেজের আরেকজন শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তার কারণে শিক্ষিকা এবং ছাত্রীরা প্রতিনিয়তই শঙ্কার মধ্যে থাকেন। কারণ ছাড়াই তিনি বিভিন্ন সময় মিটিংয়ের নাম করে বিভিন্ন শিক্ষিকাকে তার রুমে স্কুল ছুটির পরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন। এসব কাজে কেউ বাধা দিলে সাবেক মেয়র তাপসের গুণ্ডাবাহিনীর ভয় দেখাতেন। এমনকি অনেক অভিভাবক বুধবারের মানববন্ধনে বলেন, দীন মোহাম্মদ খান প্রিন্সিপাল থাকলে আর মেয়েকে পাঠাবেন না।
দীন মোহাম্মদ খান গত ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকেই পলাতক থাকার কারণে বেতন উত্তোলনসহ কলেজের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। যার কারণে শিক্ষকরা বিভাগীয় কমিশনারের শরণাপন্ন হন। এরপর কমিশন থেকে যাচাই-বাছাই করে ৮ই আগস্ট অধ্যক্ষ পলাতক জেনে মোরশেদা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়।
গত বুধবার হঠাৎ করেই তিনি আদালতের রিট পিটিশনের কাগজ ও কিছু বহিরাগতকে নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। রিট পিটিশনের কপিটি তিনি ব্যানার করে প্রতিষ্ঠানটির সামনে ঝুলিয়ে দেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাস্টার্সের ভুয়া সার্টিফিকেট, এইচএসসি পাস করা ছেলেকে কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা নেয়া, শিক্ষক নিয়োগে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ, কোনো রসিদ ছাড়াই ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন, পরীক্ষার ফি, ভর্তির ফি আদায় করতেন, যার অধিকাংশই যেত অধ্যক্ষের পকেটে। ৫ই আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন এবং কলেজ শাখা থেকে ভর্তি ফি, ডায়েরি, পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য বাবদ প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা আয় হয়। আগস্ট পর্যন্ত স্কুলের ব্যয় দেখানো হয় ৮৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা স্কুলের হিসাবে নেই। প্রভিডেন্ট ফান্ডে রয়েছে মাত্র ১১ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী এই টাকার পরিমাণ এক কোটির বেশি হওয়ার কথা।
এছাড়াও কলেজের এফডিআর’র মুনাফার টাকা আত্মসাৎ, কলেজের জমিসহ একটি ঘর বিক্রি করে তার অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেন। সাবেক মেয়র তাপস এবং শেখ হাসিনার আত্মীয় কলেজের চেয়ারম্যান থাকার কারণে কখনো কোনো হিসাব তাকে আর দিতে হয়নি। কলেজের ভবন তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন ভাউচার দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। নিজের আত্মীয়কে দিয়ে তিনি কলেজের নির্মাণ কাজ এবং এসি, লিফ্টসহ সকল মালামাল ক্রয় করিয়েছেন এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। স্কুলের বই, খাতা, ইউনিফর্ম সহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় এবং বিক্রয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। করোনাকালীন সময় আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউ কোনো বেতন পাইনি। কিন্তু অধ্যক্ষ তার স্ত্রী এবং চেয়ারম্যান সেলিমা বেগমের অনুগত শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত বেতন পেতেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিকাল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষকরা।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ দীন মোহাম্মদ খান বলেন- আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট। এই কলেজটির জায়গা নিয়ে একটা মামলা চলমান ছিল। আমি যোগদানের পর এই মামলায় জিতে যাই। যারা এই মামলায় হেরে যায় তাদের লোকেরাই এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমাকে উৎখাত করতে পারলেই তারা জায়গা দখলে নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনোটাই করি না। আমার নিজের একটা দলীয় পরিচয় আছে। আমি জাকের পার্টির সঙ্গে যুক্ত। আমি কখনো লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করিনি।
No comments