এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত হচ্ছে না

আগের সরকারের শেষ সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা চলছিল। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়া পদ্মা ব্যাংককে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে এক্সিম ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা দুর্বল অবস্থায় থাকা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না। ব্যাংক দু’টির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগের সরকারের আমলে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কেউই আর একীভূত হতে চাচ্ছে না। বিশেষ করে, বিভিন্ন কারণে তারল্য সংকটে পড়া এক্সিম ব্যাংক এখন পদ্মা ব্যাংকের দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ। আবার পদ্মা ব্যাংকও বলছে, একীভূত নয়- ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা।
এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই অনেকটা জোর করে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে কোনো মতামতও চাওয়া হয়নি।
এদিকে দুর্দশায় পড়া পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চলতি বছরের ১৮ই মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মূলত এটা হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। সরকার পরিবর্তনের পর দু’টি ব্যাংকই এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাচ্ছে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে পদ্মা ব্যাংক আমানত সংগ্রহ কার্যত বন্ধ আছে। নতুন ঋণ দিচ্ছে না। পুরনো ঋণ তদারকি এবং শাখা পর্যায়ে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে।
এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার এক মাস পরেই পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগ করে চলে যান। সমপ্রতি তিনি বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন। তারল্য জোগান দেয়ার কারণে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদে বসতেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সোনালী ব্যাংক থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত আরও তিন ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ শূন্য হওয়ায় পদ্মা ব্যাংক থেকেও তারা পরিচালক পদ হারিয়েছেন। একসঙ্গে চার পরিচালক হারিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। এখন ব্যাংকটি পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকও করতে পারছে না।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি সবমহলেই বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে সমস্যায় ব্যাংকটিতে এখন তৈরি হয়েছে তারল্য সংকট।
জানা গেছে, জুলাই মাসের শেষদিকে নামে-বেনামে এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা তুলে নেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করার দায়ে যাত্রাবাড়ী থানায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। সেই মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নতুন গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর ১১ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে পর্ষদ পুনর্গঠন করে। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকও রয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদদের সদস্যরা ব্যাংকের নানা সমস্যা তুলে ধরেন গভর্নরের কাছে। চান তারল্য সহায়তা। ইতিমধ্যে অর্থ সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কাজী মো. তালহা বলেন, আমরাও এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একত্রিত হতে চাই না। আমার বিশ্বাস, একটু সহায়তা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
অপরদিকে পদ্মা ব্যাংককে সঙ্গে নিতে চাচ্ছে না এক্সিম ব্যাংকও। এটার সঙ্গে পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলেও জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন। গত সোমবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষ এক্সিম ব্যাংকে প্রচুর আমানত রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংক দু’টি একীভূত হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের ব্যাংকিং টাস্কফোর্স। তারা ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা করে দেখবে এবং কোন সমস্যার কী সমাধান তার সুপারিশ করবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

No comments

Powered by Blogger.