৩০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা
সোমবার তারা বলেছে, ইরেজ ক্রসিং দিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ত্রাণবাহী ৩০টি লরি। গাজায় দুই সপ্তাহ ধরে ত্রাণ পাঠানো বন্ধ রাখার পর এই সরবরাহ দেয়া হয়। জাতিসংঘ এ সময় অভিযোগ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে কোনো খাদ্য সরবরাহ দেয়া যায়নি। সেখানে চার লাখ ফিলিস্তিনির জন্য তাদের অত্যাবশ্যক সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অব্যাহতভাবে জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে গাজা। দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান অ্যান্টনি রেনার্ড বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলো শুধুমাত্র সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো ছাড়া তাদের খাদ্য পাওয়ার কার্যত আর কোনো উৎস নেই। ইসরাইলের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিমান, গাইডেড বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এসব অস্ত্র দিয়ে তারা গত এক বছর ধরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। এমন অবস্থায় ইসরাইলি সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো চিঠির খবর প্রথম প্রকাশ করে অনলাইন অ্যাক্সিওস। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
এতে বলা হয়েছে, গাজায় যে অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের লিখছি। আপনাদের সরকারকে এ মাসেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি অন্য হবে। এতে আরও বলা হয়, ইসরাইলের নির্দেশে গাজার সংকীর্ণ উপকূলীয় এলাকা আল মাওয়াসিতে জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ১৭ লাখ মানুষকে। সেখানে অতিমাত্রায় গাদাগাদি করে অবস্থানের কারণে প্রাণঘাতী সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি আছে এসব মানুষের। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো রিপোর্টে বলেছে, এসব মানুষের বেঁচে থাকার সরবরাহ পূরণ করা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র তার চিঠিতে বলেছে, ইসরাইলি সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে আছে বাণিজ্যিক আমদানি বন্ধ করে দেয়া। সেপ্টেম্বরে উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় অস্বীকার করা হয়েছে অথবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানবিক সহায়তা। ক্রমাগত (গাজাবাসীর ওপর) চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বোঝা। অত্যধিক দ্বৈত-ব্যবহারে বিধিনিষেধ। মানবিক কর্মী এবং শিপমেন্টে নতুন যাচাইকরণ। কঠিন দায়বদ্ধতা। প্রভৃতি। আইনহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে লুটপাট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব মিলে গাজার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতিতে ভূমিকা রাখছে। এতে আরও বলা হয়, ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে ৩০ দিনের মধ্যে ইসরাইলকে অবশ্যই ধারাবাহিক দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনই এটা শুরু করতে হবে। ব্যর্থ হলে মার্কিন নীতিতে প্রভাব ফেলবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের কথা তুলে ধরা হয়। এ আইনে ওইসব দেশকে সামরিক সহায়তা দেয়া নিষিদ্ধ করতে পারে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টি করে। চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, শীতের আগেই পুরো গাজায় সব রকম মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে ইসরাইলকে। এর মধ্যে আছে গাজার মোট চারটি ক্রসিং দিয়ে দিনে সর্বনিম্ন ৩৫০ লরি সহায়তা পৌঁছতে দেয়া। একই সঙ্গে পঞ্চম একটি নতুন ক্রসিং দিয়েও তা প্রবেশ করতে দিতে হবে। আল মাওয়াসিতে আশ্রয় নেয়া লোকদের পুরো এলাকায় চলাচল করতে দিতে হবে। গাজার উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয় এতে। ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, চিঠিটি প্রাইভেট কূটনৈতিক যোগাযোগ। এটা আমরা প্রকাশ করতে চাইনি।
No comments