সফল হচ্ছে সাকিবের দেশে ফেরার ‘মিশন’ by ইশতিয়াক পারভেজ

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ছিল সংশয়। আবার এলেও খুনের মামলার কারণে ফিরে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। আপাতত তার দেশে ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল ঘোষণা করেছে। তার মানে তিনি এই টেস্ট সিরিজ খেলে টেস্ট ফরম্যাটকে বিদায় বলতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নপূরণ হওয়ার পথ খুলে গেল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- সাকিব কি শুধু দেশের মাটিতে  টেস্ট বিদায় নিতেই ফিরছেন নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণও? সাকিব টেস্ট খেলতে চান না এটা প্রায় ওপেন-সিক্রেট বিষয়। কিন্তু তাকে পাকিস্তান ও ভারতে টেস্ট  খেলতে মরিয়া দেখা গেছে। কারণ তিনি হয়তো জানতে পেরেছেন- না খেলে দেশের মানুষের তার প্রতি যে রাগ তা প্রশমন করা সম্ভব নয়। জনতার আন্দোলনে সরকারের পতন হয়। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। অন্দোলনের সময় ছাত্রদের যখন প্রাণ যাচ্ছিলো গুলিতে, তখন ছিলেন একেবারেই নীরব। সেই সময় তার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাতে ফুঁসে ওঠে দেশের মানুষ। তবে সরকার পতনের পর রঙ বদলাতে শুরু করেন। ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টের আগে অবসরের ঘোষণা দেন। আর শেষ ইচ্ছা হিসেবে দেশের মাটিতে খেলে বিদায় নিতে চান। শুরুতে বিসিবি ও সরকার এতে তেমন সায় না দিলে সাকিব নিজের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেন। এতে তার আসার সুযোগ তৈরি হলেও তার আসার প্রতিরোধে চলছে এখনো আন্দোলন। তবে সাকিব দেশে ফিরতে মরিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার সুযোগ হলে তার বিপিএল খেলার পথ উন্মুক্ত হবে। সেইসঙ্গে তিনি আবারো দেশের বিজ্ঞাপনসহ নানা ব্যবসায়িক কাজে অংশ নিতে পারবেন এবং তার বিরুদ্ধে খুনের মামলাটাও খারিজ হবে। মূলত সাকিবের দেশে ফিরতে চাওয়ার কারণগুলো নিয়ে বেশ জমজমাট আলোচনা হচ্ছে। কেন সাকিব দেশে টেস্ট খেলেই অবসর নিতে চান তার অন্তরালের কারণ নিয়েও চলছে সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শুধু যে সাকিব ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাই নয়। মাঠে ও মাঠের বাইরে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনাও কম ঘটাননি।

২০২৩ বিশ্বকাপে দল যখন একের পর এক ম্যাচে হারছিল তখন তিনি দেশে এসে কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে চলে আসেন নিজের ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করতে। কিন্তু পরে দেখা যায় তিনি দেশে এসেছেন একটি বিজ্ঞাপনের কাজে অংশ নিতে। টুর্নামেন্ট ও সিরিজের মাঝে এমন বিজ্ঞাপনের কাজ ও শোরুম উদ্বোধন করা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। অন্যদিকে জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততায় আইসিসি তাকে দুই বছর নিষিদ্ধও করেছিল। মাঠে অশোভন আচরণ, দর্শক পেটানোর মতো ঘটনা ঘটিয়ে নিষিদ্ধ হন বেশ কয়েকবার। আর তার টেস্ট খেলার প্রতি অনীহার কথা সবারই জানা। আর এই সব কারণেই সাকিব কেন দেশের মাটিতে বিদায় নিতে চান তা নিয়ে প্রশ্নও তৈরি হচ্ছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রিকেট সংগঠক মনে করেন এখানে সাকিব চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘দেখেন- সাকিব শুধু টেস্ট খেলতে দেশে ফিরছে এটা ভাবা খুব কঠিন। আমার কাছে মনে হয় এর পিছনে তার বড় কোনো মিশন রয়েছে। তিনি যদি খেলতে পারেন হতে পারে তার যে দেশে ব্যবসা- বাণিজ্য রয়েছে সেটি করার পথটা ফের খুলে যাবে। বিপিএল খেলে অর্থ আয় করবেন। এছাড়াও নানা বিজ্ঞাপনও তিনি করতে পারবেন। তিনি যে ক্ষমা চেয়েছেন এতে আমরা অবাক হইনি। তিনি রঙ বদলাতে পারেন এমনকি নিজের প্রয়োজনে অন্যকোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’ তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছ থেকে পাওয়া সবুজ সংকেত নিয়েই সাকিবকে দলে রেখেছে বিসিবি। যে কারণে উদ্দেশ্য যাই হোক আপাতত সাকিবের দেশে ফেরার মিশনটা সফল হচ্ছে। অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের দল থেকে এই সিরিজে পরিবর্তন আছে কেবল একটি। জায়গা হারিয়েছে পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তার জায়গায় নেয়া হয়নি কাউকে। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুব ভালো না হলেও দলে তেমন পরিবর্তন আনেননি নির্বাচকরা। সবশেষ ৯ ইনিংসে ফিফটি না করা ওপেনার জাকির হাসান টিকে গেছেন দলে। ভারতে খেলার সুযোগ না পেলেও জায়গা ধরে রেখেছেন কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলী। বাদ পড়েছেন শুধু ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে খরুচে বোলিং করে উইকেটশূন্য থাকা পেসার খালেদ। স্কোয়াডে এরপরও পেসার আছেন তিনজন-তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। চোটের কারণে ভারতে টেস্ট সিরিজে না থাকা পেসার শরিফুল ইসলাম এই মিরপুর টেস্টেও। মিরপুর টেস্ট শুরু আগামী সোমবার। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সের প্রথম ম্যাচ হবে এটিই।

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, নাহিদ রানা, জাকের আলী অনিক, হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.