ফেনীতে গুলিবিদ্ধ সাহেদুল হারিয়েছে চোখ, অর্থ সংকটে বন্ধ চিকিৎসা

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বাম চোখ হারিয়েছে তরুণ সাহেদুল ইসলাম। মাথা, মুখ ও বুক সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিন শতাধিক ছররা গুলি লেগেছিল। ৫ই আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিলেও বের করা হয়নি একটি গুলিও। সমপ্রতি চিকিৎসক সাহেদুলকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার। আহত সাহেদুল ইসলাম ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ যশপুর মির্জাপাড়ার নুর আলমের ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সাহেদুল সবার ছোট। বাবা নুর আলম হৃদরোগ ও অ্যাজমা আক্রান্ত হয়ে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে অসুস্থ অবস্থায় বেকার জীবনযাপন করছেন। বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামের আয়ে কোনোরকম সংসার চলছে সাহেদুলের। আহত সাহেদুলের বোন ফাহিমা আক্তার বলেন, গত ৫ই আগস্ট ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌর শহরে আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে অংশ নেয় সাহেদুল ইসলাম। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে ছুটোছুটির সময় মাটিতে পড়ে যায় সাহেদুল। মাটি থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সময় চোখ, মুখ, মাথা ও বুক সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কয়েক শতাধিক ছররা গুলি লাগে। এরপর দ্রুত তাকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেয়া হয় সাহেদুলের। সাহেদুলের বোন ফাহিমা আক্তার আরও বলেন, পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশনে বাম চোখ নষ্ট হওয়ার কথা জানালেও চিকিৎসকরা গুলি বের করতে পারেননি। তার বাম চোখে এখনো দু’টি গুলি রয়েছে। এ ছাড়া মাথায় ১৯৪টি, দুই হাতে শতাধিক, বুকে তিন-চারটা সহ তিন শতাধিক গুলি রয়ে গেছে। সিএমএইচ থেকে এক সপ্তাহের ছুটি দেয়ায় সাহেদুলকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এরপর পূজা ও নানা কারণে বিগত ১৫ দিনেও সাহেদুলকে পুনরায় সিএমএইচে নেয়া হয়নি।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বাবা নুর আলম বলেন, দেশে চিকিৎসা অনুযায়ী তার শরীর থেকে গুলি বের করতে গেলে ব্রেন এমনকি জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তার সুচিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত থাইল্যান্ড নেয়া প্রয়োজন। সরকারিভাবে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা পেলেও ইতিমধ্যে ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা চালানো হয়েছে। বাকি চিকিৎসা কীভাবে চলবে এনিয়ে আমরা দিশাহারা। এখন চিকিৎসা করানোর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বাইরে নিয়ে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো যেত।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.