হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন: ডিএনএ পরীক্ষার পর সিলেটে দাফন
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূর বলেন, তার মেয়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে মরদেহটি উত্তোলন করা হয়েছে। এরপর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। পরে পরিচয় নিশ্চিত হলে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানিয়ে দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীর রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য কবর থেকে লাশ তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন।
ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী ১/১১-এর পর থেকে তার বাবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর পুনঃতদন্ত দাবি করে বলেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আমার বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি একজন বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মিথ্যা চার্জশিট দিয়ে তার সঙ্গে চরম অন্যায় করা হয়েছে। তাই মামলাটির পুনঃতদন্ত করে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমার বাবার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লেখা হয়েছে। এখানে যাকে প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়েছিল তিনিই হারিছ চৌধুরী। বাবার মৃত্যুর পর আমি ভয়ে ছিলাম। আমি পরিবারের সহায়তা পাইনি। কারণ ১৫ বছর আমার পরিবারের ওপর অনেক অত্যাচার চলেছে। বাবাকে দাফন করার জায়গা খুঁজতে থাকলে পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকেই বলেছিলেন, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে দাফনের জন্য। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে বাধ্য হয়ে আমার বড় মামা নানুর জন্য এই মাদ্রাসায় জমি নিয়েছিলেন করোনার সময় ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর। বাবাকে এখানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে বাবার মৃত্যু সনদ চেয়ে আবেদন করা হলেও স্বৈরাচার সরকার আমাদের কথা শুনেনি। আপনারা এবার সত্যটা তুলে ধরুন।
সামিরা তানজিম চৌধুরী আরও বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকার বাবাকে গ্রামে নিয়ে দাফন করতে দেয়নি। তারা মানতে চাননি মাহমুদুর রহমানই আমার বাবা হারিছ চৌধুরী। এমনকি বাবার মৃত্যু সনদও দেয়নি। অনেকেই বলছেন, হারিছ চৌধুরী মারা যাননি। পালিয়ে আছেন, গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। যাচ্ছে তাই কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাবার মৃত্যু নিয়ে তো ধূম্রজাল থাকতে পারে না। একটা ভালো মানুষকে ‘ক্রিমিনাল’ সাজানো হয়েছে। সত্যি লুকিয়ে রাখা যায় না। এখন এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। আদালতের নির্দেশে হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর থেকে উত্তোলন করে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করানো, পরিচয়ের ইতিবাচক ফলাফল, মৃত্যুর সনদ পাওয়া, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে বাবার নাম মুছে ফেলা এবং তাকে নিজ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে দাফন করার আশা প্রকাশ করেন তার মেয়ে।
সামিরার ফুপা নাজমুল আরিফ খান বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষা হয়ে গেলে আশা করছি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হবে। উনার ইচ্ছা অনুযায়ী সিলেটে তাকে কবরস্থ করা হবে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও জানাজা পড়ানো মাওলানা আশিকুর রহমান কাসিমি বলেন, ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর মাহমুদুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে মাদ্রাসায় দাফন করা হয়। ওইদিন বাদ আসর আমি তার জানাজার নামাজে ইমামতি করি। দাফনের সময়ও আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবে তার মরদেহ দাফন করি। আমাদেরকে দেয়া ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, জন্মসনদ এবং পাসপোর্টে মাহমুদুর রহমান লেখা ছিল। এর এক বছর পর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় খবরে জানতে পারি মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী। এ ঘটনার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এখানে এসে আমাদের অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যর বিষয়টি প্রকাশ পায়। রিপোর্টে করোনায় মারা যাওয়া হারিছ চৌধুরীকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান পরিচয়ে দাফন করা হয় বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
No comments