ব্যাংকে হঠাৎ টাকায় টান
দেশের
ব্যাংক খাতে হঠাৎ করেই ঋণ দেওয়ার মতো অর্থের টান পড়েছে। বেশ কিছু ব্যাংক
নতুন করে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিচ্ছে না। প্রায় সব ব্যাংকই বাড়িয়েছে সুদের হার।
এমনকি কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দেওয়া ঋণের টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার
ঘটনাও ঘটছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মাস দু-এক আগেও ব্যাংকগুলো বড় গ্রাহকদের
৮-৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিত, যা এখন ২-৩ শতাংশ বেশি দিতে হচ্ছে। একইভাবে বেড়ে
গেছে ভোক্তা ও গৃহঋণের সুদের হারও। ব্যাংকাররা হঠাৎ এই সংকটের পেছনে কয়েকটি
কারণ দেখছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণের
সীমা কমিয়ে দেওয়া। এ ছাড়া সুদের হার কম হওয়ায় ব্যাংকে আমানত কমে যাওয়া,
ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়া এবং বেসরকারি একটি ব্যাংকের
সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারিও পরোক্ষভাবে এ সংকটে ঘি ঢেলেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও
বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন,
‘ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়াটা খুব আশঙ্কাজনক। আমরা এটি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ
করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ঋণের সুদের হার সহনীয় থাকুক। নইলে ব্যবসার
খরচ বেড়ে যাবে এবং পণ্যের দাম বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব
পড়বে।’
সুদহার আবার দুই অঙ্কে
দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য গত এক বছর ছিল সুসময়। এ সময়ে বড় গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকের ঋণের সুদের হার কমে ৮ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। একইভাবে কমেছিল ব্যক্তিগত, গৃহ, গাড়ি ও পেশাজীবীদের ঋণের সুদের হার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণের গড় সুদের হার ছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। ২০১৭ সালে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে ঋণের সুদের গড় হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। ব্যবসায়ীরা এখন কত শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন, তা জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে দাবি করেন, ব্যাংকগুলো সুদের হার আগের চেয়ে বেশি চাচ্ছে। বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন আমরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সাড়ে ৮ শতাংশের মধ্যে পেতাম। এখন সেটা ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে।’ চলতি মূলধনের সুদহার আরও কিছুটা বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি। একটি ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ২০টি ব্যাংক মিলে যদি বাজারে নামে, তাহলে আমানতের সুদের হার তো বাড়বেই। বাজার থেকে ব্যাংকগুলো এখন ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত সংগ্রহের চেষ্টায় আছে। স্থায়ী আমানত ৯ শতাংশ সুদে নিলে কারও পক্ষে ১৪ শতাংশের কমে ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ-আমানতের অনুপাত ঠিক রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে অনুমোদিত ঋণগুলো দিলেও নতুন ঋণের ক্ষেত্রে ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
লাগাম টানল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে। বিপরীতে আমানত সংগ্রহ কমে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭ সালের প্রথম ১১ মাসেই (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর) ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। যদিও এ সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৭২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের চেয়ে দেড় গুণের বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে তারল্যে কিছুটা চাপ পড়েছে। এদিকে আমদানি দেনা চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। তাতে ডলারের দাম বাড়ছে। সংকট মেটাতে গিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২০ কোটি ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে তারল্যসংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হওয়ায় ঋণসীমা কমিয়ে লাগাম টেনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সীমা মানতে ব্যাংকগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার কারণে অনেক ব্যাংক নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে নির্ধারিত ঋণসীমার মধ্যে আসতে দেওয়া ঋণও ফেরত আনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সবাই আমানত সংগ্রহে জোর দিয়েছে। বাজারে নতুন আমানত কম, তাই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে বেশি সুদে স্থানান্তর হচ্ছে। এ কারণে আমানত ও ঋণ উভয়ের সুদহার বাড়ছে। আবার রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে, আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় হচ্ছে না। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ আমানত আসছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ যাচ্ছে। এ কারণে তারল্যসংকট শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারল্য জোগাড় করতে সুদহার বাড়ছে। তিনি মনে করেন, এ জন্য তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরে ব্যাংকে ঋণের চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল কম। ফলে ব্যাংকে এখন আর অতিরিক্ত তারল্য নেই। আবার ঋণখেলাপি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ঋণ আদায় বাড়েনি। আবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় টাকা সেখানে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে, এতে ঋণের সুদের হার বাড়বে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, ঋণপ্রবাহ কমলে বাণিজ্য প্রসার, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে বাধা তৈরি হতে পারে। আর সুদের হার বাড়লে ব্যবসার খরচও বাড়বে। এসব কিছু অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো ফল আনবে না।
সুদহার আবার দুই অঙ্কে
দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য গত এক বছর ছিল সুসময়। এ সময়ে বড় গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকের ঋণের সুদের হার কমে ৮ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। একইভাবে কমেছিল ব্যক্তিগত, গৃহ, গাড়ি ও পেশাজীবীদের ঋণের সুদের হার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণের গড় সুদের হার ছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। ২০১৭ সালে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে ঋণের সুদের গড় হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। ব্যবসায়ীরা এখন কত শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন, তা জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা প্রত্যেকে দাবি করেন, ব্যাংকগুলো সুদের হার আগের চেয়ে বেশি চাচ্ছে। বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন আমরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সাড়ে ৮ শতাংশের মধ্যে পেতাম। এখন সেটা ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে।’ চলতি মূলধনের সুদহার আরও কিছুটা বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি। একটি ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ২০টি ব্যাংক মিলে যদি বাজারে নামে, তাহলে আমানতের সুদের হার তো বাড়বেই। বাজার থেকে ব্যাংকগুলো এখন ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত সংগ্রহের চেষ্টায় আছে। স্থায়ী আমানত ৯ শতাংশ সুদে নিলে কারও পক্ষে ১৪ শতাংশের কমে ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ-আমানতের অনুপাত ঠিক রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে অনুমোদিত ঋণগুলো দিলেও নতুন ঋণের ক্ষেত্রে ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
লাগাম টানল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে। বিপরীতে আমানত সংগ্রহ কমে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭ সালের প্রথম ১১ মাসেই (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর) ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। যদিও এ সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৭২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের চেয়ে দেড় গুণের বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে তারল্যে কিছুটা চাপ পড়েছে। এদিকে আমদানি দেনা চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। তাতে ডলারের দাম বাড়ছে। সংকট মেটাতে গিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২০ কোটি ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে তারল্যসংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হওয়ায় ঋণসীমা কমিয়ে লাগাম টেনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সীমা মানতে ব্যাংকগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার কারণে অনেক ব্যাংক নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে নির্ধারিত ঋণসীমার মধ্যে আসতে দেওয়া ঋণও ফেরত আনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সবাই আমানত সংগ্রহে জোর দিয়েছে। বাজারে নতুন আমানত কম, তাই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে বেশি সুদে স্থানান্তর হচ্ছে। এ কারণে আমানত ও ঋণ উভয়ের সুদহার বাড়ছে। আবার রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে, আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় হচ্ছে না। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ আমানত আসছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ যাচ্ছে। এ কারণে তারল্যসংকট শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারল্য জোগাড় করতে সুদহার বাড়ছে। তিনি মনে করেন, এ জন্য তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরে ব্যাংকে ঋণের চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল কম। ফলে ব্যাংকে এখন আর অতিরিক্ত তারল্য নেই। আবার ঋণখেলাপি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ঋণ আদায় বাড়েনি। আবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় টাকা সেখানে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে, এতে ঋণের সুদের হার বাড়বে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, ঋণপ্রবাহ কমলে বাণিজ্য প্রসার, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে বাধা তৈরি হতে পারে। আর সুদের হার বাড়লে ব্যবসার খরচও বাড়বে। এসব কিছু অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো ফল আনবে না।
No comments