সড়কে বাড়ছেই মৃত্যু
সড়ক
দুর্ঘটনা নিয়ে এত আলোচনার প্রেক্ষাপটে যান্ত্রিক যানের চালকরা ন্যূনতম
সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরলই বলা চলে। বরং বেপরোয়া গতিতে
গাড়ি চালানো যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে। চালকের অদক্ষতা এবং ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি
চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা যে বাড়ছে তা বলাই বাহুল্য। অবস্থা এতটাই
ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, একজন যাত্রী ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে গন্তব্যে
পৌঁছাতে পারবেন কিনা অথবা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড শেষ করে নিরাপদে ফিরতে
পারবেন কিনা এ নিয়ে প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়। বিভিন্ন
সংস্থার জরিপের তথ্য উদ্ধৃত করে বোরবারের যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে
উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ বছরে সড়কে ৫৯ হাজার ৯৪১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন
৬৮ হাজারের বেশি যাত্রী। উল্লিখিত সময়ে আহত হয়েছেন ২ লাখেরও বেশি যাত্রী।
যেখানে একজন ব্যক্তির হতাহতের কারণে একাধিক পরিবারে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি
হয়, সেখানে এই বিপুলসংখ্যক আহত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কী
অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। রাজধানীর একজন
গাড়ির মালিক বিচক্ষণতার সঙ্গে গাড়ির চালক নিয়োগ প্রদান করেন। ফলে রাজধানীতে
সড়ক দুর্ঘটনা তুলনামূলক কম হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তব চিত্রটি একেবারেই
ভিন্ন। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জরিপের তথ্য অনুযায়ী,
সারা দেশের শহরাঞ্চলে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশই ঘটে রাজধানীতে। বেপরোয়া
গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অতিরিক্ত যাত্রী
বোঝাই এবং অদক্ষ চালকের কারণে যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে তাও বহুল আলোচিত।
এছাড়া অন্য যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে তাও
অজানা নয়। চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিক এটাই বড় প্রশ্ন।
একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে আর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত
হাজির করবে, এটা কতদিন চলবে? ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময়ও যদি দুর্ঘটনার কবলে
পড়তে হয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে? এ নিয়ে কোনো জ্ঞানগর্ভ
আলোচনা শুনতে চায় না কেউ। সবাই চায় এর প্রতিকার। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে
কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা যে বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ
নেই। চিহ্নিত সমস্যার সমাধানে দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির আশ্রয়
নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমবে না।
বস্তুত চালকের অসতর্কতা ও অবহেলার করণেই সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। চালকদের
তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে
আলোচিত বিষয়ে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে না। চালকদের সার্বিক জীবনযাত্রার
মান উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াটাও অতি জরুরি।
No comments