কেন কেউ বেশি ঘুমান, কারো ঘুমই আসে না?
ঘুম
আমাদের সবচেয়ে প্রিয় এক স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তা সে সুন্দর তুলতুলে নরম
বিছানাতেই হোক বা চলন্ত বাসে-ট্রেনে। যদিও সেক্ষেত্রে সহযাত্রীদের কিছু
কটাক্ষ বা তির্যক বাক্যের মুখে পড়তে হলেও হতেও পারেন। তা হোক। সমীক্ষা
কিন্তু জানাচ্ছে, দিবানিদ্রা প্রিয় গ্রিকদের মধ্যে যেমন হার্টের অসুখের
আশঙ্কা অনেক কম তেমনই আবার আমেরিকানদের মধ্যে সে আশঙ্কা প্রবল। তাই সুযোগ
পেলে ছোট্ট একটি ‘ন্যাপ’ নিয়ে শরীর-মনকে খানিক ‘রিচার্জ’ করে নিতে পারলে
মন্দ কি? এখন প্রশ্ন হলো দিনে আপনি কতটা ঘুমাবেন? এ বিষয়ে নানা মুনির নানা
মত রয়েছে। কেউ বলেন দিন ৭ ঘণ্টা তো কেউ বলেন ৮ ঘণ্টা। সম্প্রতি মার্কিন
স্লিপ ফাউন্ডেশন একটি সমীক্ষা করে জানিয়েছে, পরিমিত ঘুমের সময় বয়স অনুযায়ী
আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। সদ্যজাতদের (৩ মাস বয়স অবধি) যেমন ১৪-১৭ ঘণ্টার
ঘুমের প্রয়োজন তেমনই বৃদ্ধদের (৬৫ ঊর্দ্ধ) ৭-৮ ঘণ্টা। পাশাপাশি ৪-১১ মাস
বয়সের শিশুদের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা, ১-২ বছরের শিশুদের ১১-১৪ ঘণ্টা, ৩-৫ বছরের
শিশুদের ১০-১৩ ঘণ্টা, ৬-১৩ বছরের শিশুদের ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা, ১৪ থেকে ১৭
বছরের কিশোর-কিশোরীদের ৮-১০ ঘণ্টা, ১৮-৬৪ বছরের ব্যক্তিদের ৭-৯ ঘণ্টার
ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম নিয়ে কথা হচ্ছে আর ভারতীয় ধর্মীয়-কিংবদন্তিতে থাকা
কুম্ভকর্ণের কথা উঠবে না তা কি হয়?
এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে কুম্ভকর্ণ
কিভাবে বা কোন বরে বলিয়ান হয়ে বছরের ছয় মাস অঘোরে ঘুমাতেন। কথিত আছে,
একবার তার যজ্ঞে প্রসন্ন হয়ে ব্রহ্মাদেব তাকে বর চাইতে বলায়, কুম্ভকর্ণ
ইন্দ্রাসন না চেয়ে ভুলবশত নিদ্রাসন চেয়ে ফেলেছিলেন। অন্যদিকে ইতিহাস বলছে,
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ঘোড়ায় চড়েই ঘুমাতেন। এর কারণ হলো, নেপোলিয়নের
নারকোলেন্সি নামক রোগ থাকায় তার এমনটা হতো। আসলে এই রোগে রোগীর হঠাৎ
করেই প্রচণ্ড ঘুম চলে আসে। যার স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড বা কখনো কখনো
মিনিট ২০। কিন্তু বর্তমান জেট যুগে পরিমিত ঘুমের সুযোগ কি আমরা সকলে ঠিকমত
পাই? কেবল কাজের অজুহাত নয়, অনেকে আবার সখ করে বা বীরত্ব দেখাতেও
দীর্ঘক্ষণ না ঘুমানোর অভ্যাস করেন। যেমনটি করেছিলেন আমেরিকাবাসী টেলর
শিল্ডস। ২৮ বছরের এই ফটোগ্রাফার নিছক রেকর্ড গড়ার নেশাতেই জেগেছিলেন টানা
৪০ দিন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ না ঘুমানোটা যেহেতু শরীরের পক্ষে হানিকারক এবং
শরীরে নানাবিধ রোগের জন্ম দেয়, তাই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে
কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেয়।
No comments