রোহিঙ্গাদের কেউ চায় না!
মালয়েশিয়ার
কুয়ালালামপুরের একটি উপশহর হলো পুচং। সেখানকার একটি ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটে
গাদাগাদি করে থাকেন ১৩ জন রোহিঙ্গা। ফ্ল্যাটটির একমাত্র আসবাব বলতে স্তূপ
করে রাখা বিছানাপত্র। দিনের কাজ শেষে মেঝেতে ঘুমানোর সময় কাজে লাগে এগুলো।
দিনে এক বেলা, বড়জোর দুই বেলা খাবার জোটে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের এসব
মানুষের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
এসব দেশে মূলত ‘অবাঞ্ছিত’ হিসেবেই দেখা হয় রোহিঙ্গাদের। তাঁরা একদিকে যেমন
সম্মানজনক কাজ পান না, অন্যদিকে সব সময় তাড়া করে ফেরে বিতাড়নের ভয়। গত পাঁচ
মাসে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে
আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। রাখাইনের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের
লোকজনের অভিযোগ, মিয়ানমারের সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের কারণেই
দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। অবশ্য মিয়ানমারের সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার
করে আসছে। গত বছরের আগস্ট মাসের আগেও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে
রোহিঙ্গারা। দ্য ইকোনমিস্টে সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে,
সহিংসতার শিকার হয়েই এসব রোহিঙ্গা ঘর ছেড়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান,
মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছেন। আনুমানিক হিসাবে
পাকিস্তানে বাস করছে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা।
মালয়েশিয়ায় এই সংখ্যা এক লাখ
এবং সৌদি আরবে প্রায় আড়াই লাখ। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকেরা এই তিন দেশে
গেছেন মূলত অবৈধ উপায়ে, চোরাচালানিদের সহায়তায়। ভারতেও এভাবেই পৌঁছেছে
রোহিঙ্গারা। দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক
সনদে এখনো স্বাক্ষর করেনি পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া। অথচ ওই সনদেই এই
শরণার্থীদের সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা
শরণার্থীরা তাঁদের পরিচয়ও লুকাচ্ছেন। যেমন: পাকিস্তানে থাকা রোহিঙ্গারা
নিজেদের পরিচয় দেন ‘ভারত থেকে আসা মুসলিম’ হিসেবে। কারণ, পাকিস্তানে
সামাজিকভাবে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি যে সহানুভূতি আছে, রোহিঙ্গাদের প্রতি
তা নেই। অন্যদিকে, মালয়েশিয়াতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন
(ইউএনএইচসিআর) প্রায় ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়েছে।
তাঁদের বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও ওই দেশে কাজ করার বা বসবাসের বৈধ
অধিকার এটি নয়। ভারত: দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা
রয়েছেন। ধারণা করা হয়, সীমান্ত পেরিয়ে স্থলপথে তাঁরা ভারতে ঢুকেছেন। ভারত
সরকার রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে এবং গত বছর
রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়নের নীতিগত সিদ্ধান্তও নেয়। তবে এখন দেশটির
সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে মামলা চলছে। এর আগে ভারতের রাজ্যগুলোর প্রতি দেওয়া
এক পরামর্শে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, রোহিঙ্গারা তাদের
জন্য ‘বোঝা’ এবং দেশের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’। মালয়েশিয়া:
রোহিঙ্গারা বৈধভাবে কাজ করতে পারেন না মালয়েশিয়াতে। মূলত আবর্জনা কুড়িয়ে
সেখানে জীবিকা নির্বাহ করেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এর বাইরে নামমাত্র বেতনে
কেউ কেউ কাজ করেন নির্মাণশ্রমিক বা কৃষিকর্মী হিসেবে। ইকোনমিস্টের
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগকর্তা ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা—উভয় পক্ষই
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালায়। শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ তাঁদের নেই।
ইউএনএইচসিআরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্যসেবায় কিছু ছাড় পান। তবে যাঁদের
নিবন্ধন নেই, তাঁদের অসুখ হলে খরচের অন্ত নেই।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে থাকা রোহিঙ্গারাও রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। ওই দেশের বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। ভারতীয় মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাঁরা। কারণ, পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের সামাজিকভাবে খুব হেয় করা হয়। অবৈধভাবে জেলে, মিস্ত্রি বা পরিচারক হিসেবে কাজ করে জীবন চালান রোহিঙ্গারা। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা পরিচয় প্রকাশিত হলে পাকিস্তানে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা মেলে না।
সৌদি আরব: ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়, সৌদি আরবে থাকা আড়াই লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই অবৈধ অভিবাসী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের রয়েছে বিশেষ পরিচয়পত্র। এই পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁরা সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ ও কাজ করতে পারেন। আর যাঁদের পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের থাকতে হচ্ছে খুব সাবধানে। কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়লেই যেতে হয় জেলে। সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন—এমন এক মানবাধিকারকর্মীর বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেখানে পৃষ্ঠপোষকদের কম মজুরির শর্তে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ যখন উঠেছিল, তখন এর প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিল মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের সরকার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তুলেছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যু। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ রোহিঙ্গা সংকটকে ‘বিবেকের প্রতি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল এ দুই দেশ। দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকে সহজ করে তুলতে এই দুই দেশকে খুব বেশি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ, তারা নিন্দায় যতটা মুখর ছিল, কাজে ততটা নয়। রোহিঙ্গাদের কাজ জোগাড় করে দিতে মালয়েশিয়ায় একটি পাইলট প্রকল্প চালু হলেও এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র ৩০০। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতারা মুখে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেও প্রাদেশিক সরকারগুলো তাতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে। মূলত রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি চলছে পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায়। বিদেশি সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের মূলত ‘বোঝা’ হিসেবেই দেখে। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের থাকতে হচ্ছে বঞ্চনা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে এই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন হয়তো নিজেদের দেশে ফেরার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন ইচ্ছে থাকলেও ফিরতে পারেন না তাঁরা।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে থাকা রোহিঙ্গারাও রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। ওই দেশের বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। ভারতীয় মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাঁরা। কারণ, পাকিস্তানে রোহিঙ্গাদের সামাজিকভাবে খুব হেয় করা হয়। অবৈধভাবে জেলে, মিস্ত্রি বা পরিচারক হিসেবে কাজ করে জীবন চালান রোহিঙ্গারা। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা পরিচয় প্রকাশিত হলে পাকিস্তানে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা মেলে না।
সৌদি আরব: ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়, সৌদি আরবে থাকা আড়াই লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই অবৈধ অভিবাসী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের রয়েছে বিশেষ পরিচয়পত্র। এই পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁরা সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ ও কাজ করতে পারেন। আর যাঁদের পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের থাকতে হচ্ছে খুব সাবধানে। কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়লেই যেতে হয় জেলে। সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন—এমন এক মানবাধিকারকর্মীর বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেখানে পৃষ্ঠপোষকদের কম মজুরির শর্তে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ যখন উঠেছিল, তখন এর প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিল মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের সরকার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তুলেছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যু। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ রোহিঙ্গা সংকটকে ‘বিবেকের প্রতি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল এ দুই দেশ। দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকে সহজ করে তুলতে এই দুই দেশকে খুব বেশি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ, তারা নিন্দায় যতটা মুখর ছিল, কাজে ততটা নয়। রোহিঙ্গাদের কাজ জোগাড় করে দিতে মালয়েশিয়ায় একটি পাইলট প্রকল্প চালু হলেও এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র ৩০০। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতারা মুখে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেও প্রাদেশিক সরকারগুলো তাতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে। মূলত রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি চলছে পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায়। বিদেশি সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের মূলত ‘বোঝা’ হিসেবেই দেখে। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের থাকতে হচ্ছে বঞ্চনা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে এই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন হয়তো নিজেদের দেশে ফেরার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন ইচ্ছে থাকলেও ফিরতে পারেন না তাঁরা।
No comments