সংবিধান সংশোধন দাবিতে সমর্থন
মিয়ানমারে একটি ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দেশটির ‘অন্যায্য’ সংবিধানে পরিবর্তন আনতে বিরোধী নেতা অং সান সু চি যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাতে সমর্থনও জানিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এই নেত্রীর সঙ্গে গতকাল শুক্রবার ইয়াঙ্গুনে বৈঠকের পর এসব কথা বলেন ওবামা। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অং সান সু চির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন পর্যন্ত যত কথা বলেছেন, তার মধ্যে গতকালের বক্তব্যটি ছিল সবচেয়ে সুস্পষ্ট। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সু চির অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সংবিধানে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে আহ্বান জানাননি। সু চির দুই সন্তান ও প্রয়াত স্বামী বিদেশি নাগরিক। এ কারণে সংবিধান অনুযায়ী তিনি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ, বর্তমান সংবিধানের ৫৮(এফ) ধারা অনুযায়ী, কারও সন্তান বা স্বামী-স্ত্রী বিদেশি নাগরিক হলে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারবেন না।
অনেকের বিশ্বাস, সু চির বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে মাথায় রেখেই সংবিধানে ওই বিধান করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতা জোট আসিয়ানের সম্মেলনে অংশ নিতে মিয়ানমার সফরে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট সে দেশে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। গতকাল তিনি শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির সঙ্গে ইয়াঙ্গুন শহরে তাঁর নিজ বাড়িতে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করেন। এটি ছিল ওবামার এ সফরে তাঁদের দ্বিতীয়বারের সাক্ষাৎ। এরপর তাঁরা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে সু চির নাম উল্লেখ না করে ওবামা বলেন, ‘সন্তানের পরিচয় কী, তার ভিত্তিতে কাউকে প্রেসিডেন্ট হওয়া থেকে বিরত রাখা হবে—এমন বিধানের কোনো অর্থ নেই।’ ২০১১ সালে মিয়ানমারে প্রত্যক্ষ সামরিক শাসনের অবসান ঘটার পর থেকে এ পর্যন্ত যে সংস্কার সাধিত হয়েছে, তাকে ‘কোনোমতেই পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না’ উল্লেখ করে ওবামা আগামী বছরের নির্বাচন ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক’ করতে দেশটির বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অং সান সু চি এখনো মিয়ানমারে ব্যাপক জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাঁর রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বড় জয় পেলেও সামরিক সরকার দলটিকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। আগামী বছরের নির্বাচনে দলটি খুব ভালো করবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সু চি।
সংবাদ সম্মেলনে সংবিধানকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট, অন্যায্য ও অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে সু চি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বললে, বিশেষ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন বৈষম্য করার কোনো অধিকার নেই। দেশের বেশির ভাগ মানুষই এটা বোঝে যে গণতন্ত্র অর্জন করতে হলে এই সংবিধান যেভাবে আছে, সেভাবে থাকতে পারে না।’ মিয়ানমারের চলমান সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আবারও ‘খুব বেশি আশাবাদী’ না হওয়ার আহ্বান জানান সু চি। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই খুব বেশি আশাবাদী না হওয়ার জন্য বলি। কারণ, এটা আত্মতুষ্টির দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো, আশাবাদ ও নৈরাশ্যের একটা স্বাস্থ্যসম্মত ভারসাম্য।’ সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ার কথা নাকচ করে দেন সু চি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কার-প্রক্রিয়াটা একটা অসমান তালে চলছে।...বার্মা (মিয়ানমারের সাবেক নাম) যখন জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, তখন আমরা বলতে পারব যে আমাদের যেসব বন্ধু এই পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল প্রথম।’ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওবামা বলেন, মিয়ানমারে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। প্রায় অর্ধ শতকজুড়ে সামরিক শাসনের অধীনে থাকার পর ২০১১ সালে মিয়ানমারে একটি আধা সামরিক সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর সামরিক নেতারা গণতন্ত্রমুখী সংস্কার কর্মসূচি শুরু করেন।
No comments