উপদেষ্টার বেফাঁস কথায় আওয়ামী লীগের চক্রান্ত ফাঁস by বদরুদ্দীন উমর
কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ছাত্রলীগের এক সভায় বেফাঁস কথা বলে আওয়ামী লীগের চক্রান্তের একটা দিক ফাঁস করেছেন। বর্তমান সরকার সর্বক্ষেত্রে কোনো নীতির দ্বারা নয়, চক্রান্তের মাধ্যমে কীভাবে দেশ পরিচালনা করছে- এটা হল তারই এক উদাহরণ। দেশে আজ কী বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা এই ফাঁস করা চক্রান্ত থেকে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়।
এই উপদেষ্টার নানা অপকীর্তির কথা দেশের লোকের অজানা নয়। এসব অপকীর্তির মধ্যে তার দুর্নীতির ব্যাপার উল্লেখযোগ্য। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক আমলা এবং অপ্রতিনিধিত্বমূলক ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এবং তারা মন্ত্রীদের থেকেও প্রশাসনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারাই প্রধানমন্ত্রীর বেশি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের কোনো প্রকৃত প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র নেই, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের পরিচয় একেবারেই ভুয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টাদের চরিত্র আরও অপ্রতিনিধিত্বমূলক, কারণ তারা প্রায় সবাই বা তাদের অধিকাংশই কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। তারা হলেন সাবেক আমলা। এদিক দিয়ে বলা চলে বর্তমান সরকার এখন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের থেকে আমলাদের দ্বারাই প্রধানত পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে তারা মন্ত্রীদের থেকে আরও অনেক বেশি বেপরোয়া। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বেপরোয়া কথা বলেন এবং কাজ করে থাকেন, তার সঙ্গে এসব আমলার কথাবার্তা ও কাজকর্ম অধিক সঙ্গতিপূর্ণ। যে উপদেষ্টা এমন বেফাঁস কথাবার্তা বলে সরকারকে কিছুটা বিব্রত করেছেন, সেই একই কথাবার্তা আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্য এক উপদেষ্টা বলেছিলেন। কাজেই এটা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। বাস্তবত আওয়ামী লীগ যে চক্রান্তের মাধ্যমে দেশ শাসন করে
আসছে তার ধারাবাহিকতাই বর্তমান সরকারের কাজকর্মের মধ্যে দেখা যায়।
আলোচ্য উপদেষ্টা ছাত্রলীগের সভায় বেপরোয়াভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে যে কথা বলেছেন তা হল- লিখিত পরীক্ষায় যদি তারা পাস করে তাহলে মৌখিক পরীক্ষায় তাদের কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না। সরকার তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে। অর্থাৎ তারা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সরকারি চাকরিতে ঢোকা প্রায় অসম্ভব। এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ছাত্রলীগের এ নেতাকর্মীরা মেধাশূন্য। সর্বত্র যেভাবে কারচুপি চলছে তাতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করাও তাদের পক্ষে কোনো অসুবিধার ব্যাপার বা কঠিন নয়। এভাবে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে মৌখিক পরীক্ষায় সরকারের সহায়তা লাভ করে যারা সরকারি চাকরিতে যোগদান করবে, প্রশাসন তারাই পরিচালনা করবে এবং এর ফলে প্রশাসন হবে মেধাশূন্য। ক্ষমতা ও মেধাশূন্যতা যে দুর্নীতির জনক হবে এটা স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক ব্যাপারটি আজ বাংলাদেশের জনগণের জীবন কীভাবে বিপর্যস্ত করছে এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।
উপদেষ্টা শুধু আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যদের চাকরির বিষয়ে বলেই যে ক্ষান্ত হয়েছিলেন তা নয়। তিনি ছাত্রলীগের উপরোক্ত সভায় আরও বলেছেন কীভাবে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগের সদস্যরা আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কাজ করেছে। বিগত এ নির্বাচন যে কতখানি কারচুপির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সমগ্র নির্বাচনকে একটা প্রহসন ও ভুয়া ব্যাপারে পরিণত করেছে, এটাও হল তার এক অকাট্য প্রমাণ। এ প্রমাণ জনগণের সামনে এভাবে খোলাখুলি উপস্থিত করে উপদেষ্টা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন এতে সন্দেহ নেই। এ কারণে বিষয়টি তাদের দলীয় বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। এর রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে (Daily Star, 15.11.2014)। এর থেকে দেখা যায় যে, প্রধানমন্ত্রী তার উপদেষ্টার বেফাঁস কথায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ সম্ভাব্য সমালোচনা লঘু করার জন্য উপদেষ্টা এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করায় তিনি তার পক্ষে ওকালতি করেন! এই মন্ত্রীর ওকালতির পর প্রধানমন্ত্রী নাকি তাকে বলেন, তিনি যেন উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পরামর্শ দেন! এটাও এক লোক দেখানো খেলা। যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন যে, উপদেষ্টা কর্তৃক তার পদ অলংকৃত করে থাকা আর ঠিক নয়, তাহলে তিনি তার নিয়োগকর্তা হিসেবে তাকে অনায়াসে বাদ দিতে পারেন, যেটা তিনি অনেক ক্ষেত্রে করে থাকেন। সম্প্রতি তিনি লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তার এ পছন্দের উপদেষ্টা সাবেক আমলার ক্ষেত্রে মনে হয় সেটা তিনি আসলে চান না। কাজেই নিজে কোনো পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে না নিয়ে তিনি উপদেষ্টার উকিল মন্ত্রীকে বলেছেন তার মক্কেলকে ইস্তফা দেয়ার পরামর্শ দিতে! এসব আসলে কোনো গণতান্ত্রিক অথবা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত নয়। এটা হল চক্রান্তমূলক রাজনীতি এবং দুর্নীতির শাসন অব্যাহত রাখার ব্যাপার। কাজেই এর ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। যথা পূর্বং তথা পরং! সাবেক এক রেলমন্ত্রীর চরম ও ধরা পড়া দুর্নীতির পর শেখ হাসিনা তাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে লোক দেখানোভাবে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত রাখার কাজ করে তিনি দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন, বর্তমানে আলোচ্য উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও সেই উদাহরণ স্থাপন করতেই যে তিনি আগ্রহী, এতে আর সন্দেহ কী! এ সবই জনগণের জীবনে ও সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে এক মহা-আতংকের ব্যাপার। এ আতংকজনক পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের জনগণ এখন বসবাস করছেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
এই উপদেষ্টার নানা অপকীর্তির কথা দেশের লোকের অজানা নয়। এসব অপকীর্তির মধ্যে তার দুর্নীতির ব্যাপার উল্লেখযোগ্য। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক আমলা এবং অপ্রতিনিধিত্বমূলক ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এবং তারা মন্ত্রীদের থেকেও প্রশাসনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারাই প্রধানমন্ত্রীর বেশি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের কোনো প্রকৃত প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র নেই, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের পরিচয় একেবারেই ভুয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টাদের চরিত্র আরও অপ্রতিনিধিত্বমূলক, কারণ তারা প্রায় সবাই বা তাদের অধিকাংশই কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। তারা হলেন সাবেক আমলা। এদিক দিয়ে বলা চলে বর্তমান সরকার এখন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের থেকে আমলাদের দ্বারাই প্রধানত পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে তারা মন্ত্রীদের থেকে আরও অনেক বেশি বেপরোয়া। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বেপরোয়া কথা বলেন এবং কাজ করে থাকেন, তার সঙ্গে এসব আমলার কথাবার্তা ও কাজকর্ম অধিক সঙ্গতিপূর্ণ। যে উপদেষ্টা এমন বেফাঁস কথাবার্তা বলে সরকারকে কিছুটা বিব্রত করেছেন, সেই একই কথাবার্তা আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্য এক উপদেষ্টা বলেছিলেন। কাজেই এটা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। বাস্তবত আওয়ামী লীগ যে চক্রান্তের মাধ্যমে দেশ শাসন করে
আসছে তার ধারাবাহিকতাই বর্তমান সরকারের কাজকর্মের মধ্যে দেখা যায়।
আলোচ্য উপদেষ্টা ছাত্রলীগের সভায় বেপরোয়াভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে যে কথা বলেছেন তা হল- লিখিত পরীক্ষায় যদি তারা পাস করে তাহলে মৌখিক পরীক্ষায় তাদের কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না। সরকার তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবে। অর্থাৎ তারা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সরকারি চাকরিতে ঢোকা প্রায় অসম্ভব। এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ছাত্রলীগের এ নেতাকর্মীরা মেধাশূন্য। সর্বত্র যেভাবে কারচুপি চলছে তাতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করাও তাদের পক্ষে কোনো অসুবিধার ব্যাপার বা কঠিন নয়। এভাবে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে মৌখিক পরীক্ষায় সরকারের সহায়তা লাভ করে যারা সরকারি চাকরিতে যোগদান করবে, প্রশাসন তারাই পরিচালনা করবে এবং এর ফলে প্রশাসন হবে মেধাশূন্য। ক্ষমতা ও মেধাশূন্যতা যে দুর্নীতির জনক হবে এটা স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক ব্যাপারটি আজ বাংলাদেশের জনগণের জীবন কীভাবে বিপর্যস্ত করছে এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।
উপদেষ্টা শুধু আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যদের চাকরির বিষয়ে বলেই যে ক্ষান্ত হয়েছিলেন তা নয়। তিনি ছাত্রলীগের উপরোক্ত সভায় আরও বলেছেন কীভাবে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগের সদস্যরা আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কাজ করেছে। বিগত এ নির্বাচন যে কতখানি কারচুপির দ্বারা পরিচালিত হয়ে সমগ্র নির্বাচনকে একটা প্রহসন ও ভুয়া ব্যাপারে পরিণত করেছে, এটাও হল তার এক অকাট্য প্রমাণ। এ প্রমাণ জনগণের সামনে এভাবে খোলাখুলি উপস্থিত করে উপদেষ্টা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন এতে সন্দেহ নেই। এ কারণে বিষয়টি তাদের দলীয় বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। এর রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে (Daily Star, 15.11.2014)। এর থেকে দেখা যায় যে, প্রধানমন্ত্রী তার উপদেষ্টার বেফাঁস কথায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এ সম্ভাব্য সমালোচনা লঘু করার জন্য উপদেষ্টা এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করায় তিনি তার পক্ষে ওকালতি করেন! এই মন্ত্রীর ওকালতির পর প্রধানমন্ত্রী নাকি তাকে বলেন, তিনি যেন উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পরামর্শ দেন! এটাও এক লোক দেখানো খেলা। যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন যে, উপদেষ্টা কর্তৃক তার পদ অলংকৃত করে থাকা আর ঠিক নয়, তাহলে তিনি তার নিয়োগকর্তা হিসেবে তাকে অনায়াসে বাদ দিতে পারেন, যেটা তিনি অনেক ক্ষেত্রে করে থাকেন। সম্প্রতি তিনি লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তার এ পছন্দের উপদেষ্টা সাবেক আমলার ক্ষেত্রে মনে হয় সেটা তিনি আসলে চান না। কাজেই নিজে কোনো পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে না নিয়ে তিনি উপদেষ্টার উকিল মন্ত্রীকে বলেছেন তার মক্কেলকে ইস্তফা দেয়ার পরামর্শ দিতে! এসব আসলে কোনো গণতান্ত্রিক অথবা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত নয়। এটা হল চক্রান্তমূলক রাজনীতি এবং দুর্নীতির শাসন অব্যাহত রাখার ব্যাপার। কাজেই এর ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। যথা পূর্বং তথা পরং! সাবেক এক রেলমন্ত্রীর চরম ও ধরা পড়া দুর্নীতির পর শেখ হাসিনা তাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে লোক দেখানোভাবে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত রাখার কাজ করে তিনি দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন, বর্তমানে আলোচ্য উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও সেই উদাহরণ স্থাপন করতেই যে তিনি আগ্রহী, এতে আর সন্দেহ কী! এ সবই জনগণের জীবনে ও সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে এক মহা-আতংকের ব্যাপার। এ আতংকজনক পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের জনগণ এখন বসবাস করছেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments