সিদ্ধান্ত সঠিক, কৌশল ভুল
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে যে পদ্ধতিতে সারাদেশে এ অভিযান চালানো হচ্ছে তা ভুল এবং অন্তঃসারশূন্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ এবং অনুমোদনহীন যান-বাহনের বিরুদ্ধে অবশ্যই বছরান্তে অভিযান চালানো উচিত। কেবল ঘোষণাকে গুরুত্ব দিয়েই যদি এ ধরনের অভিযান চালানো হয়, এটা ভালো কোনো ফল নিয়ে আসবে না বরং জনভোগান্তি আরো বাড়বে। কেননা আমাদের রাস্তায় চলাচল করা অধিকাংশ গাড়িই ত্রুটিপূর্ণ এবং অনুমোদনহীন। আর মামলা ও জরিমানার ভয়ে এগুলো তখন উধাও হয়ে যায়।” ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম জানান, “বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের মধ্যেও দুর্নীতি রয়েছে। অনুমোদনহীন যানবাহন বাড়ার ক্ষেত্রে লোকবল ঘাটতি এক বিরাট সমস্যা।” তিনি বলেন, “বিআরটিএ- প্রশাসনিক কাঠামো সুগঠিত নয়। আর এর জন্য গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট সেখান থেকে পেতেও প্রচুর সময় লেগে যায়। ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলোও কোনো ধরনের ছাড় পাচ্ছে না বিআরটিএ থেকে। মানুষের ধারণা বিআরটিএ দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান।” এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজপথ থেকে ত্রটিযুক্ত গাড়ি অবশ্যই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এগুলোর জন্যই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। আর এ অভিযানটা হওয়া উচিত কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়া। ত্রটিযুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার এ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। কারণ অভিযানের প্রথম দুই দিন যে পরিমাণ গাড়ি ধরা হয়েছিলো তা প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় কম। বিআরটিএ কার্যালয়ের এক সূত্র জানায়, নভেম্বরের ১০ ও ১১ তারিখের অভিযানে ৯৯টি গাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়। অভিযানের আগে ত্রুটিযুক্ত ও অনুমোদনহীন এ গাড়ির সংখ্যা ধরা হয়েছিলো ৩.৫ লাখ।” বিআরটিএ এর তথ্য মতে, সারাদেশে ২১ লাখ রেজিস্ট্রিকৃত গাড়ি রয়েছে, যার মধ্যে মোটর সাইকেলের সংখ্যা ১১ লাখ। এছাড়া ৩.৪০ লাখ গাড়ি রয়েছে যেগুলো কোনো অনুমোদন ছাড়াই রাস্তায় চলছে। নভেম্বরের ১০ তারিখ সারাদেশের অনুমদোনহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। আগেই ঘোষণা জেনে যাওয়ায় অভিযানের সময় রাস্তায় নামেনি ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো। বিআরটিএ’র সূত্র জানায়, নভেম্বরের ১০ তারিখ সারা দেশে ১০৫টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। ৬৫টি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়, মামলা করা হয় ২২৪৯ টি এবং ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৪১০ টাকা জরিমানা করা হয় প্রথম দিনের অভিযানে। এছাড়া ২১ গাড়ি চালককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। সূত্র জানায়, জরিমানার মধ্যে ৯.৩৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩৪ গাড়ি ধ্বংস ও ৫ গাড়ি চালককে বিভিন্ন বছরের মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযানে গাড়ি ধ্বংস ও মামলার পরিমাণটা কমিয়ে আনা হয়। যানবাহন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, “এ রকম অভিযান এর আগেও চালানো হয়েছে, তবে কোনো সাফল্য আসেনি।” বুয়েটের সিভিলি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক জানান, বিআরটিএর সার্টিফিকেট দেয়ার পদ্ধতিটা আরো আধুনিকায়ন করা উচিত। আর এটা হওয়া উচিত স্বাধীন একটি কমিশনের নিয়ন্ত্রণে যাতে কোনো দুর্নীতি না হয়। আর গাড়ির ফিটনেসের বিষয়টি সারাদেশেই বি-কেন্দ্রীকরণ করে দেয়া উচিত। সূত্র: ইউএনবি।
No comments