বিএনপি সংসদে যাবে সদস্যপদ রক্ষায় by নাজনীন আখতার
সংসদে ফিরতে কৌশলী পন্থা নিয়েছে বিএনপি। সদস্য পদ বাঁচাতে অধিবেশনে যোগ দেয়ার আয়োজন চললেও রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে দেশের স্বার্থ রৰার ইসু্যগুলো সামনে রেখে সংসদে যাচ্ছে দলটি।
সমালোচনার দায় ঘোচাতে অনুপস্থিতির কারণে সংসদ সদস্য পদ খারিজের সময় পেরম্ননোর ২৯ কার্যদিবস আগেই অধিবেশনে যোগ দেয়ার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের মতে, এবার বিএনপি একদিকে সংসদে বিভিন্ন ইসু্যতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। অন্যদিকে রাজপথে আন্দোলনের উৎস তৈরি করবে। তবে এবারও অধিবেশনে বিএনপির উপস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। বড় জোর অধিবেশনের সাত কার্যদিবস পর্যনত্ম দলের সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি থাকতে পারে। কোন এক বিষয়ে বিতর্ক তুলে ধরে আবারও দলটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অধিবেশন বর্জন করবে।অধিবেশনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির টানা অনুপস্থিতি নিয়ে মিডিয়া কর্মীদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারম্নক অধিবেশনে যোগ না দেয়ার কারণ হিসাবে দাবি দাওয়ার বিষয় তুলে ধরেন। অধিবেশনকৰের সামনের সারির আসন বাড়ানোর এক দফা দাবি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ১০ দফা দাবিতে গিয়ে ঠেকে। সংসদে ফেরার শর্ত হিসাবে সর্বশেষ ১০ দফা দাবির কোনটিই সরকার এখনও পূরণ না করলেও কেন সংসদে ফিরছে বিএনপি? হিসাব-নিকাশে একটি জবাবই পাওয়া যায়_ সদস্যপদ রৰা। তবে ২৯ কার্যদিবসের দিন যোগ দিলেও যেখানে পদ রৰা করা সম্ভব সেখানে এত আগে কেন? বিশেস্নষকরা এর জবাববেই বিএনপি কৌশলী পথ ধরেছে বলে মনত্মব্য করছেন।
অধিবেশনে যোগ দেয়ার ৰেত্রে বিএনপির শর্তের ব্যাপারে একরোখা ও অনড় অবস্থানে থাকায় ধারণা করা হচ্ছিল চলতি চতুর্থ অধিবেশনে বিরোধী দলের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নেই। নিয়ম অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য অধিবেশনের টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যাবে। সংসদের চারটি অধিবেশনের ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিএনপি টানা ৬১ কার্যদিবস অনুপস্থিত আছে। তবে বিরোধী দলের কোন কোন সদস্যের ব্যক্তিগত অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। হিসাব অনুযায়ী চলতি অধিবেশন ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম পুরো সময় ধরে চললেও নিরাপদ থাকবে বিএনপি। সদস্য পদ হারানোর শঙ্কা নেই।
সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতির মাঠ গরম করতে অধিবেশনে যোগ দেয়ার প্রথম দিনেই ১০ দফা দাবির প্রধান দুটি দাবি নিয়ে সরগরম হবে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি রৰার জন্য সরকারকে নানাভাবে আক্রমণ করা হবে। অভিযোগ করা হবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদাসীন। দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে বিদেশে অবস্থানরত তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের কথা তুলে ধরে সাধারণ জনগণের সহানুভূতি কাড়ার চেষ্টা করা হবে। সরকারকে সবচেয়ে বেশি চাপে রাখা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর এবং চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাৰরের ওপর। এ ইসু্যতে ভারতের কাছে দেশ বিক্রির অভিযোগ এনে তুমুল বিতর্ক তুলে রাজপথে আন্দোলনের ৰেত্র তৈরি করা হবে। জানা গেছে, সংসদে এ ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরতে ব্যাপক প্রসত্মতি নিচ্ছে দলটি।
বিরোধী দলের চীফ হুইপ শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের স্বার্থ রৰার জন্যই সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের যে কোন দিনই তা হতে পারে। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) রাতে (শনিবার) বৈঠক ডেকেছেন। অধিবেশনে যোগ দেয়ার তারিখ নির্ধারণের জন্য পরবর্তী বৈঠকের সময় জানাবেন তিনি।
উলেস্নখ্য, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল রায় নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরম্ন হয়। তিনটি অধিবেশনে মোট ৮৬ কার্যদিবস সংসদ চলে। ৪ জানুয়ারি থেকে সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরম্ন হয়েছে। এখন পর্যনত্ম ১৪ কার্যদিবস চলেছে। ২৫ জানুয়ারি শুরম্ন হওয়া সংসদের প্রথম অধিবেশন চলে ৭ এপ্রিল পর্যনত্ম। কার্যদিবস ছিল মোট ৩৯টি। এর মধ্যে চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা ২৩ কার্যদিবস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল সামনের সারিতে আসন বাড়ানোসহ বিভিন্ন ইসু্যতে কয়েকদিন সংসদ বর্জন করে। আসন বাড়ানোর ব্যাপারে স্পীকারের আশ্বাসে দলটি সংসদে ফিরে এসে শেষ কার্যদিবস ৭ এপ্রিল পর্যনত্ম সংসদে উপস্থিত থাকে। সেদিন বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অধিবেশনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেন। শেষদিন পর্যনত্ম দলটির উপস্থিতির কারণে দলের সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতি গণনা করা হবে দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে। গত ৪ জুন শুরম্ন হওয়া বাজেট অধিবেশন শেষ হয় ৯ জুলাই। এ সময়ের ২৫ কার্যদিবসের পুরোটাই অনুপস্থিত থাকে বিরোধী দল। অনুপস্থিতি অব্যাহত ছিল তৃতীয় অধিবেশনেও। তৃতীয় অধিবেশন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নবেম্বর পর্যনত্ম চলে। মোট কার্যদিবস ২২টি। ফলে এ দুই অধিবেশনে বিএনপির টানা অনুপস্থিতি ৪৭ কার্যদিবস। নতুন বছরে ৪ জানুয়ারি শুরম্ন হওয়া চতুর্থ অধিবেশনে এখনও যোগ দেয়নি বিএনপি।
No comments