ভিন্নমত-জনমনে শঙ্কা, দেশ একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যাবে তো! by আবু আহমেদ
দেশে অনেক কিছু ভালো চলছে বলে সরকার সুযোগ পেলেই বড় গলায় প্রচার করে। কিন্তু খারাপগুলোকে লুকিয়ে যায়। গত তিন বছর দেশের অর্থনীতিতে ঝড় বয়ে গেছে। সেই ঝড় বইয়ে দেওয়া হয়েছে অতি নিন্দনীয় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। প্রথম বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে শেয়ারবাজারকে কেন্দ্র করে।
হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হলো মাত্র কয়েক মাসে। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজির প্রায় সবটাই হারিয়ে এখন ক্ষোভে-দুঃখে ঘরে ফিরে গেছে। তারাও নেই, এখন শেয়ারবাজারও অনেকটা মৃত। মন্ত্রী-মিনিস্টাররা তাঁদের ভাষণ-বয়ানে শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন সম্পর্কে কিছু বললে দেশবাসী মনোযোগ দিয়ে শুনত। হলমার্ক কেলেঙ্কারি হলো স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি। অথচ সরকার এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থতাকে স্বীকার করতে যেন নারাজ। সোনালী ব্যাংকের টাকা কিন্তু জনগণের টাকা। যারা জনগণের টাকাকে কিছু লোকের পকেটে অবৈধভাবে যেতে দিল, তারা কেন জনগণের কাছে দায়ী হবে না? যদি আইনের শাসন দেশে থাকত তাহলে তো আইন সবার জন্য সমভাবে প্রয়োগ হতো। সেই অবস্থায় সোনালী ব্যাংকের টাকা যারা লোপাট করেছে, যারা ওই লোপাটে সহযোগিতা করেছে, তারা কি এত সহজে পার পেত? এখন মানুষ ভাবে একটার পর একটা কেলেঙ্কারি হবে, কিছু দিন মানুষ-মিডিয়া হৈচৈ করবে, তারপর সবাই সব কিছু ভুলে যাবে। ভালো আছে কারা? রাস্তার লোকদের জিজ্ঞাসা করুন, তারাই বলে দেবে। যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতিতেও বয়সের একটা ব্যাপার থাকা উচিত। তাঁর এ বক্তব্য জনগণও সমর্থন করে। রাজনীতিবিদরা যদি তাঁদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন, তাহলে জনগণ তাঁদের সম্পর্কে যা ভাবার দরকার তা তো ভাববেই। এক-এগারোর কথাটা রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বলে থাকেন। এক-এগারো এলো কেন, ভবিষ্যতেও যদি আসে, আসবে কেন- তার উত্তর তো রাজনীতিবিদরাই ভালো দিতে পারেন। দুটো দৈনিক জনগণের রাজনীতিতে দলগুলোর প্রতি সমর্থন নিয়ে জরিপ চালিয়েছে বলে বলেছে। ওদের জরিপে অনেক ভুল আছে। তবুও বলা চলে, যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থন জনগণের কাছে প্রায় সমান সমান হয়, তাহলে এই দুই দলের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন নিয়ে আলাপটা করতে অসুবিধা কোথায়? জনগণ অসুবিধা দেখে না, অসুবিধা দেখেন, যাঁরা সংলাপ করলে দেশ-জাতি স্বস্তি পাবে তাঁরা। কিন্তু জনগণ কি আদৌ বিশ্বাস করে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করার জন্য এমন একটি সংলাপ আদৌ হবে? জনগণ মনে করে, সংলাপও হবে না, হলেও কোনো ফল হবে না। ওই অবস্থায় আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার এত আশাবাদী কিভাবে হচ্ছে?
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন কি দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? যদি সরকার মনে করে গ্রহণযোগ্য হবে, তাহলে আমাদের কারো কিছু করার নেই। আমরা বিধাতার ওপর সব ছেড়ে দিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিনগুলো কাটানোর জন্য অপেক্ষা করলাম। গত চার বছরে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখ করার মতো কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি, পদ্মা সেতু হতো, হয়নি কেন- সে ব্যাপারেও সরকারের ভাষণগুলোতে ভালো ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হতো। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রান্তিক সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার আরেক নিদর্শন হলো উচ্চ সুদে কম অঙ্কের সরকারি সঞ্চয়পত্রগুলো বিক্রি হওয়া। মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখন তাদের অতীত সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেকে ভোগই কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাহলে উন্নয়নের ভাগ পেল কারা? যে অর্থনীতি বাড়তে পারত বছরে ৭ শতাংশ করে, সেই অর্থনীতি বাড়ছে ৬ শতাংশের কম। কারণ কী? কারণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ নেই। আর বিনিয়োগের খরার জন্যও কি আমাদের আপামর জনগণ দায়ী? অর্থনীতিতে দারুণ তারল্য সংকট চলছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আস্থার সংকট। আস্থা না থাকলে কোনো কিছুই সামনে এগোবে না। অর্থনীতি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গত কয়েক বছরে বিদেশে চলে গেছে। কোনো বড় ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে দেশে বড় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। ওই অবস্থায় অর্থনীতি এগোবে কিভাবে? বিনিয়োগ নেই বলে কর্মসংস্থানও নেই। সরকার বলছে এত এত লাখ লোককে চাকরি দিয়েছে। কিন্তু সরকারি খাতে এত এত লাখ লোকের আদৌ কি প্রয়োজন আছে? ওই নিয়োগ তো প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির ওপর বোঝাই বাড়াচ্ছে। মানুষের মনে স্বস্তি আসত এবং সেই সঙ্গে আশাবাদ জাগত যদি আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে সরকার একটা রূপরেখা তুলে ধরতে পারত। সেই রূপরেখা অবশ্যই বিএনপি বা প্রধান বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন কি দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? যদি সরকার মনে করে গ্রহণযোগ্য হবে, তাহলে আমাদের কারো কিছু করার নেই। আমরা বিধাতার ওপর সব ছেড়ে দিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিনগুলো কাটানোর জন্য অপেক্ষা করলাম। গত চার বছরে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখ করার মতো কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি, পদ্মা সেতু হতো, হয়নি কেন- সে ব্যাপারেও সরকারের ভাষণগুলোতে ভালো ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হতো। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রান্তিক সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার আরেক নিদর্শন হলো উচ্চ সুদে কম অঙ্কের সরকারি সঞ্চয়পত্রগুলো বিক্রি হওয়া। মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখন তাদের অতীত সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেকে ভোগই কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাহলে উন্নয়নের ভাগ পেল কারা? যে অর্থনীতি বাড়তে পারত বছরে ৭ শতাংশ করে, সেই অর্থনীতি বাড়ছে ৬ শতাংশের কম। কারণ কী? কারণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ নেই। আর বিনিয়োগের খরার জন্যও কি আমাদের আপামর জনগণ দায়ী? অর্থনীতিতে দারুণ তারল্য সংকট চলছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আস্থার সংকট। আস্থা না থাকলে কোনো কিছুই সামনে এগোবে না। অর্থনীতি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গত কয়েক বছরে বিদেশে চলে গেছে। কোনো বড় ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে দেশে বড় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। ওই অবস্থায় অর্থনীতি এগোবে কিভাবে? বিনিয়োগ নেই বলে কর্মসংস্থানও নেই। সরকার বলছে এত এত লাখ লোককে চাকরি দিয়েছে। কিন্তু সরকারি খাতে এত এত লাখ লোকের আদৌ কি প্রয়োজন আছে? ওই নিয়োগ তো প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির ওপর বোঝাই বাড়াচ্ছে। মানুষের মনে স্বস্তি আসত এবং সেই সঙ্গে আশাবাদ জাগত যদি আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে সরকার একটা রূপরেখা তুলে ধরতে পারত। সেই রূপরেখা অবশ্যই বিএনপি বা প্রধান বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments