নূর চৌধুরীকে যেভাবে ফেরত আনা হবে- বিভ্রান্তির চেষ্টা হচ্ছে by শংকর কুমার দে
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃতু্যদ-প্রাপ্ত নূর চৌধুরীকে কানাডায় অবৈধ অভিবাসী হিসাবে তৃতীয় কোন দেশে প্রত্যর্পণ (ডিপোর্ট) করে বাংলাদেশে ফেরত আনার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
নূর চৌধুরী ছাড়া বিদেশে পলাতক অপর ৫ খুনীর অবস্থান সম্পর্কে ইন্টারপোল ও ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে কাজ চলছে। বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের অবস্থান সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সঠিক কোন তথ্য সরকারীভাবে ইন্টারপোল ও ডিপেস্নামেটিক চ্যানেল থেকে পাওয়া যায়নি। সরকার এ ব্যাপারে দ্বিপাৰিক ও বহুপাৰিক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরম্ন করেছে। এ খবর সংশিস্নষ্ট সূত্রের।সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে জানা গেছে, নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করে সে দেশের সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে তার পৰে খবর প্রকাশ করাচ্ছে। কানাডাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে আদালতের রায় অনুযায়ী মৃতু্যদ-ে দ-িতদের ফেরত দেয়া হয় না। আদালতের রায়ের বিষয়টিকে সামনে এনে তাকে যেন ফেরত দেয়া না হয় সেই জন্য কানাডার সংবাদ মাধ্যমে আইনী জটিলতা সংক্রানত্ম সংবাদ পরিবেশন করানোর কৌশল নিয়েছে নূর চৌধুরী ও তার সহযোগীরা। কানাডা সরকারকে প্রভাবিত করতে আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরী এই কৌশল নিয়েছে। কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীর এক শ্যালক তাকে রৰার জন্য যাবতীয় কৌশল নিচ্ছে। নূর চৌধুরীর শ্যালকই কানাডায় তার পৰে আদালতে মামলা ও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ করাসহ যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছে।
নূর চৌধুরী '৯৬ সালে কানাডায় অবস্থান নেয়। একই বছরে সে ভিজিটর স্ট্যাটাস পায়। তারপর শরণার্থী স্ট্যাটাসের জন্য আবেদন করে সে। শরণার্থী স্ট্যাটাসে অবস্থানের আবেদন ২০০২ '০৪, '০৫, '০৬ সালে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এখন কানাডাতে নূর চৌধুরীর প্রকৃত অবস্থান হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কানাডা সরকারের সম্পর্ক খুবই ভাল। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে কানাডা সরকারের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰ নূর চৌধুরীর পাসপোর্টটি জব্দ করে। পরে পাসপোর্টটি কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। গত নবেম্বরে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কানাডা সফর করে সে দেশের সরকারের সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেন। কানাডা সরকারের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰ নূর চৌধুরীর পাসপোর্ট কানাডায় বাংলাদেশের দূতাবাসে জমা দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সর্বোচ্চ আদালতের আপীলের রায় ঘোষণার বিষয়টিও কানাডা সরকারকে অবহিত করানো হয়েছে। কিন্তু কানাডা সরকার নূর চৌধুরীকে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে হ্যাঁ বা না সূচক কোন কথাই জানায়নি। তবে কানাডা সরকার যে কোন অবৈধ অভিবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে সে দেশে অবস্থানের সুযোগ দিচ্ছে না তা প্রায় নিশ্চিত।
সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে জানানো হয়, অবৈধ অভিবাসী হিসাবে কানাডা সরকার নূর চৌধুরীকে যদি ধরে নেয়া হয় বাংলাদেশের কাছে নাও পাঠায় তাহলেও তাকে সে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে। কানাডাতে নূর চৌধুরী এখন সম্পূর্ণর্ অবৈধ অভিবাসী। অবৈধ অভিবাসী হিসাবে নূর চৌধুরীকে কানাডায় দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানের সুযোগ দেয়া হবে না। তৃতীয় কোন দেশে তাকে ডিপোর্ট করা হবে। সেৰেত্রে বাংলাদেশ সরকার এখন কানাডা সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে যেন তৃতীয় এমন কোন দেশে তাকে ডিপোর্ট করা হয়। যেসব দেশে মৃতু্যদ- বলবত আছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই ভাল। বিলম্ব হলেও নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশ ফেরত পাওয়ার আশা করছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার আরও একাধিক পন্থা আছে যা এখন সরকার কঠোর গোপনীয়তা রৰা করে চলেছে। সংবাদ মাধ্যমে সরকারী এসব প্রয়াস ও কৌশল প্রকাশ পেলে বিদেশে পলাতক খুনীরা সতর্ক হয়ে যেতে পারে।
নূর চৌধুরী ছাড়াও বিদেশে পলাতক অপর ৫ খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) খন্দকার আবদুর রশীদ, মেজর (বরখাসত্ম) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব) এএম রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন কোন দেশে অবস্থান করছে সরকারীভাবে কোন দেশই তা বাংলাদেশকে জানায়নি। কেবলমাত্র বিদেশে অবস্থানরত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সরকারী কর্মকর্তারা বেসরকারীভাবে অবহিত হওয়ার মাধ্যমে খুনীদের অবস্থানের কথা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারপোল বা ডিপেস্নামেটিক চ্যানেলে বাংলাদেশকে খুনীদের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে হবে।
ইন্টারপোলের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনীর ফাঁসি হওয়ার পর এখন বিদেশে পলাতক নূর চৌধুরী ও ৫ খুনীসহ ৬ খুনীকে ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ইন্টারপোল ও ডিপেস্নামেটিক চ্যানেলে নতুন করে কাজ শুরম্ন করেছে। বাংলাদেশ খুনীরা যেসব দেশে আত্মগোপন করেছে সেই সব দেশের সঙ্গে দ্বিপাৰিক ও বহুপাৰিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে খুনীদের ফিরিয়ে আনার নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। বিদেশে পলাতক খুনীদের মধ্যে সবাইকে না হলেও দু'একজনকে খুব শীঘ্রই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে বলে জানা গেছে।
No comments