গুপ্তহত্যা, গুম ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস গণতন্ত্রের পথ নয় by গাজীউল হাসান খান
যে সমাজে রাজনীতির নামে অবাধে চলে গুপ্তহত্যা, গুম ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস, সেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কোনো অর্থেই কাজ করতে পারে না। চূড়ান্তভাবেই রাজনীতি সেখানে একটি কায়েমি স্বার্থে পরিণত হয়।
আর সে স্বার্থ হচ্ছে রাজনীতির নামে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে অরাজকতা সৃষ্টি করা। তাতে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা অত্যন্ত সহজ হতে দেখা যায়। রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে বিরোধী শিবিরের নেতা ও নেতৃস্থানীয় কর্মীদেরই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গুপ্তহত্যা, গুম ও সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে, বিশেষ করে গত আড়াই বছরে, বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম কিংবা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া ও অতিসম্প্রতি বঙ্গবাজার কমপ্লেঙ্ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম মজুমদার নিহত হওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ এ কমপ্লেঙ্রে অধীনে বিভিন্ন মার্কেটের নেপথ্য নিয়ন্ত্রণ ছিল কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতার হাতে। এ দেশে এখন উচ্ছেদের বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতেও উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কিংবা রাজনৈতিক আদর্শের ব্যাপারটি মুখ্য নয়, প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজ দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের মধ্যে অর্থ-প্রতিপত্তি কিংবা বিত্ত-বেসাতের অধিকারী হওয়া। নতুবা গাঁটের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে লালন-পোষণ করে লাভ কী? দুর্নীতিগ্রস্ত এ সমাজে কঠোর আইন-শৃঙ্খলার অভাবে হত্যাকাণ্ড, গুম কিংবা দলীয় সন্ত্রাস আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে, তাতে আর অবাক হওয়ারই বা কি আছে?
পুলিশ বা র্যাবের কোনো অভিযানে চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী কিংবা রফিকুল ইসলাম মজুমদার আটক কিংবা নিহত হননি বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনাগুলো নাকি সবই পূর্বপরিকল্পিত। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজ পর্যন্ত তার একটিরও কোনো হদিস বের করতে পারল না কেন? বঙ্গবাজারের হাজী ওয়াজিউল্লাহ, চৌধুরী আলম কিংবা রফিকুল ইসলাম মজুমদারের নিখোঁজ হওয়া কিংবা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কারা? কারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে এবং হত্যা করেছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে? এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী চক্রকে শনাক্ত করতে না পারলে গুম কিংবা গুপ্তহত্যার পরিমাণ ক্রমে আরো বেড়ে যাবে। তার পাশাপাশি রাজনৈতিক সন্ত্রাস ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কাও রয়েছে। একটি রাষ্ট্রে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা সরকারের অবস্থানকে অত্যন্ত দুর্বল করে দেয় না কি? র্যাবের পোশাক ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানো কিংবা পুলিশের হাতকড়া ব্যবহার বন্ধ করার দায়িত্ব কার? নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবিলম্বে এর একটা বিহিত বের করতে হবে। তা না করে তারা নিজেরাই যদি কোনো পক্ষ অবলম্বন করে কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, তাহলে অসহায় মানুষ কোথায় যাবে? স্বজনহারা মানুষ কিংবা একজন ধর্ষিত নারী কোথায় আশ্রয় নেবে বিচারের জন্য? আইনের শাসন তো এভাবে চলতে পারে না! দেশের বিচার বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তাদের কার্যকারিতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে তাহলে তো মানুষের অধিকার, মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের কথা বলা বৃথা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে মানুষ যদি কোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কিংবা সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে নির্ভয়ে মাঠে নামতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়, তাহলে বুঝতে হবে, সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটও বর্তমানে তেমনই একটি পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর বিশাল মিছিলে কর্মী সরবরাহ করা কিংবা দলীয় হরতাল সফল করার জন্য শক্তি ও অর্থ জোগান দেওয়ার সামর্থ্য চৌধুরী আলম ও রফিকুল ইসলাম মজুমদারের কমবেশি অবশ্যই ছিল। তার চেয়ে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা ছিল ইলিয়াস আলীর। সে কারণেই হয়তো দলের মধ্যে তাঁরা ছিলেন ভিন্ন মাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় কোন্দল, ব্যক্তিগত রেষারেষি কিংবা নেহাত ব্যবসায়িক কারণে তাঁদের গুম কিংবা হত্যা করা হয়েছে, সেটি মনে করার মতো মানুষ খুব বেশি নেই। মূলত রাজনৈতিক কারণেই তাঁদের এ পরিণতি হয়েছে বলে বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস। চৌধুরী আলম ও রফিকুলের ক্ষেত্রে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়িক স্বার্থকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না অনেকে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য কোনো অভিযোগের কারণে যে তাঁদের গুম কিংবা হত্যা করা হয়নি সেটি অনেকটা নিশ্চিত। কারণ তাঁরা সে মাপের নেতা ছিলেন না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের সরকারবিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর অভিযোগ ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের একটি অভিনব রাজনৈতিক কৌশল বলে কোনো কোনো মহলে ধারণা রয়েছে। বিএনপির অত্যন্ত উচ্চ স্থানীয় কয়েকজন নেতার কিছু অসাবধান ও অসংলগ্ন বক্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীনরা সে সুযোগ করে নিয়েছে বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। বিএনপি একটি বিশাল জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নেতাদের ঢালাও উক্তি অনুযায়ী সে দলের সবাই দক্ষিণপন্থী, মৌলবাদী কিংবা পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন নন। বিএনপির মধ্যে অসংখ্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরীক্ষিত রাজনৈতিক মানুষ। তাঁরা অবশ্যই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায়সংগত ও আইনানুগ বিচারপ্রত্যাশী। এতে কোনো মতবিরোধের অবকাশ নেই। দলের ভেতর তাঁদের অবস্থান তেমন শক্তিশালী না হলেও তাঁরা যে সংগঠনের একটি বিশাল অংশ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করলেও তাঁরা মোটেও ধর্মান্ধ নন। অতীতে জামায়াতের সঙ্গে মিলে সরকার গঠনকেও তাঁদের অনেকেই অপছন্দ করেছেন। ইস্যুভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশ্বাস করলেও তাঁদের অনেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে সম্মত নন। তাঁদের অনেকেই দলের অভ্যন্তরে অধিক গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী। দলে সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে ক্রমে পেশিশক্তি ও কালো টাকার মালিকদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ঘটুক কিংবা স্বজনপ্রীতি বিস্তার লাভ করুক, তা তাঁরা চান না।
ওপরে উল্লিখিত তেমন একটি বাস্তবতায়ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নেতারা দল বেঁধে যেভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের সরকার পতনের আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র বলে বারবার উল্লেখ করছেন, তা অবশ্যই বাস্তবতাবিবর্জিত একটি অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপির নেতৃস্থানীয় কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে আইনের দিক থেকে সম্পূর্ণ একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এখানে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযোগ করে তড়িঘড়ি করে কাউকে ঝুলিয়ে দিলে চলবে না। কারণ একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে। আইনের শাসনে বিশ্বাসী একটি সভ্য দেশে এটি সবারই কাম্য। অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। নতুবা দেশে অপরাধপ্রবণতা সব সীমা ছাড়িয়ে যাবে। এ দেশে কখনোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও একদিন হারিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন ও যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁরা যদি সে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে বিচার না পান, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে- এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এ বিশ্বাস বিএনপির শরিক দলের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু নিজের দুর্নীতি, চরম অনিয়ম ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সরকার বিরোধী জোটের গণ-আন্দোলনকে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র বলে সার্বক্ষণিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তার জনপ্রিয়তা কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সরকারের প্রতি জনগণের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা সমর্থন আরো কমতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরও দেশে যদি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতেও সরকারের ভরাডুবি হতে পারে।
ক্ষমতাসীন সরকারের কল্পিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নামে দেশব্যাপী বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে পরিমাণ ধরপাকড় চলছে এবং যে পরিমাণ মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে তাতে কারো পক্ষে এখন আর নিজেদের ঘরবাড়িতে বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাম-গঞ্জে কয়জন রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারে, সে তথ্য সম্ভবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও নেই। থানা-পুলিশসহ বৃহত্তরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যে স্থানীয় নেতাদের হুকুম ছাড়া থানা স্বাধীনভাবে কোনো মামলাও নিতে পারে না। প্রশাসনের সর্বস্তরেও একই অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কী করে সম্ভব হতে পারে, সে প্রশ্নই এখন সর্বত্র দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গুম ও গুপ্তহত্যার পরিমাণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে সংগতভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে দেশে কি বিরোধী দল বলতে আর কিছুই থাকবে না। এ রকম একটি পরিস্থিতি ইউরোপ ও আমেরিকা দূরে থাকুক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও কি চিন্তা করা যায়? সে কারণেই অনেকে এখন প্রশ্ন তুলছেন, এর নামই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? এ অবস্থায় কি একটি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার বিকশিত হতে পারে? তার পাশাপাশি চলছে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ঘুষ-দুর্নীতি ও জনগণের সম্পত্তি বেদখল। সবার চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের অতি মূল্যবান জমি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ কোথাও নেই। সেসব কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা নিরূপণ করার ক্ষমতা যেন তাদেরও নেই। সাধারণ মানুষের এখন দাবি হচ্ছে, দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন। তবে এর আগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সামাল দিন। তা না হলে দেশের শাসনব্যবস্থা এমনিতেই ধসে পড়বে, অন্যের ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন সৎ, ভদ্র ও সংস্কৃতিবান রাজনীতিক। ছাত্রাবস্থায় তাঁর সঙ্গে একই আবাসিক হলে (এসএম হল) থেকেছি। একই বিষয়ে (অর্থনীতি) পড়াশোনা করেছি এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও পরে পূর্ব বাঙলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলাম। তাঁর মতো একজন আদর্শবান ও সজ্জন মানুষ খুব কমই পেয়েছি। হরতালের সময় গাড়ি পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফেলে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হেনস্তা করা হচ্ছে একের পর এক। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ দেশে কোনো শিক্ষিত, সৎ ও ভদ্র মানুষ রাজনৈতিক অঙ্গনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে কি এ দেশে রাজনীতি করবে কিছু অশিক্ষিত, অভদ্র ও দুর্নীতিপরায়ণ ইতর মানুষ? সে কারণে অবিলম্বে তাঁর মতো মানুষের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা আরো চাই, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করুক, যাতে সরকার ও বিরোধী দলের প্রজ্ঞাবান সদস্যরা একই টেবিলে বসে জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন। এ কথা ঠিক, এ দেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো স্থান হবে না। তার পাশাপাশি এ কথাও ঠিক, আগামী এক দশকের মধ্যে পুরনো ঘরানার রাজনীতিকরা ক্রমে একে একে রাজনৈতিক অঙ্গন ত্যাগ করবেন। রাজনীতিতে আসবে নতুন প্রজন্ম। টিকিয়ে রাখতে হবে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে। সে রাষ্ট্রে যেন প্রতিফলন ঘটে আমাদের প্রাণ উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের। সে রাষ্ট্র যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার খরস্রোত বেয়ে এগিয়ে চলে। নেতৃত্বের রেষারেষি, দলীয় বিভেদ ও একে অপরের প্রতি উচ্ছেদের রাজনীতি ভুলে এখনই সূচনা করতে হবে একটি সম্ভাবনাময় ও আলোকিত ভবিষ্যতের। সে কারণেই এ সরকারের বাকি সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিকভাবে সহাবস্থানের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অর্থবহ আলোচনার জন্য একত্রে বসতে হবে এবং সব সংকট উত্তরণের জন্য সম্মিলিতভাবে পথ খুঁজে বের করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সমালোচিত হতে হবে দেশ ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা ও ব্যর্থতার জন্য।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com
পুলিশ বা র্যাবের কোনো অভিযানে চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী কিংবা রফিকুল ইসলাম মজুমদার আটক কিংবা নিহত হননি বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনাগুলো নাকি সবই পূর্বপরিকল্পিত। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজ পর্যন্ত তার একটিরও কোনো হদিস বের করতে পারল না কেন? বঙ্গবাজারের হাজী ওয়াজিউল্লাহ, চৌধুরী আলম কিংবা রফিকুল ইসলাম মজুমদারের নিখোঁজ হওয়া কিংবা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কারা? কারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে এবং হত্যা করেছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে? এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী চক্রকে শনাক্ত করতে না পারলে গুম কিংবা গুপ্তহত্যার পরিমাণ ক্রমে আরো বেড়ে যাবে। তার পাশাপাশি রাজনৈতিক সন্ত্রাস ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কাও রয়েছে। একটি রাষ্ট্রে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা সরকারের অবস্থানকে অত্যন্ত দুর্বল করে দেয় না কি? র্যাবের পোশাক ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানো কিংবা পুলিশের হাতকড়া ব্যবহার বন্ধ করার দায়িত্ব কার? নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবিলম্বে এর একটা বিহিত বের করতে হবে। তা না করে তারা নিজেরাই যদি কোনো পক্ষ অবলম্বন করে কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, তাহলে অসহায় মানুষ কোথায় যাবে? স্বজনহারা মানুষ কিংবা একজন ধর্ষিত নারী কোথায় আশ্রয় নেবে বিচারের জন্য? আইনের শাসন তো এভাবে চলতে পারে না! দেশের বিচার বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তাদের কার্যকারিতা, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে তাহলে তো মানুষের অধিকার, মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের কথা বলা বৃথা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে মানুষ যদি কোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কিংবা সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে নির্ভয়ে মাঠে নামতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়, তাহলে বুঝতে হবে, সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটও বর্তমানে তেমনই একটি পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর বিশাল মিছিলে কর্মী সরবরাহ করা কিংবা দলীয় হরতাল সফল করার জন্য শক্তি ও অর্থ জোগান দেওয়ার সামর্থ্য চৌধুরী আলম ও রফিকুল ইসলাম মজুমদারের কমবেশি অবশ্যই ছিল। তার চেয়ে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা ছিল ইলিয়াস আলীর। সে কারণেই হয়তো দলের মধ্যে তাঁরা ছিলেন ভিন্ন মাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় কোন্দল, ব্যক্তিগত রেষারেষি কিংবা নেহাত ব্যবসায়িক কারণে তাঁদের গুম কিংবা হত্যা করা হয়েছে, সেটি মনে করার মতো মানুষ খুব বেশি নেই। মূলত রাজনৈতিক কারণেই তাঁদের এ পরিণতি হয়েছে বলে বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস। চৌধুরী আলম ও রফিকুলের ক্ষেত্রে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়িক স্বার্থকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না অনেকে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য কোনো অভিযোগের কারণে যে তাঁদের গুম কিংবা হত্যা করা হয়নি সেটি অনেকটা নিশ্চিত। কারণ তাঁরা সে মাপের নেতা ছিলেন না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের সরকারবিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর অভিযোগ ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের একটি অভিনব রাজনৈতিক কৌশল বলে কোনো কোনো মহলে ধারণা রয়েছে। বিএনপির অত্যন্ত উচ্চ স্থানীয় কয়েকজন নেতার কিছু অসাবধান ও অসংলগ্ন বক্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীনরা সে সুযোগ করে নিয়েছে বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। বিএনপি একটি বিশাল জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নেতাদের ঢালাও উক্তি অনুযায়ী সে দলের সবাই দক্ষিণপন্থী, মৌলবাদী কিংবা পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন নন। বিএনপির মধ্যে অসংখ্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরীক্ষিত রাজনৈতিক মানুষ। তাঁরা অবশ্যই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায়সংগত ও আইনানুগ বিচারপ্রত্যাশী। এতে কোনো মতবিরোধের অবকাশ নেই। দলের ভেতর তাঁদের অবস্থান তেমন শক্তিশালী না হলেও তাঁরা যে সংগঠনের একটি বিশাল অংশ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করলেও তাঁরা মোটেও ধর্মান্ধ নন। অতীতে জামায়াতের সঙ্গে মিলে সরকার গঠনকেও তাঁদের অনেকেই অপছন্দ করেছেন। ইস্যুভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশ্বাস করলেও তাঁদের অনেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে সম্মত নন। তাঁদের অনেকেই দলের অভ্যন্তরে অধিক গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী। দলে সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে ক্রমে পেশিশক্তি ও কালো টাকার মালিকদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ঘটুক কিংবা স্বজনপ্রীতি বিস্তার লাভ করুক, তা তাঁরা চান না।
ওপরে উল্লিখিত তেমন একটি বাস্তবতায়ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নেতারা দল বেঁধে যেভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের সরকার পতনের আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র বলে বারবার উল্লেখ করছেন, তা অবশ্যই বাস্তবতাবিবর্জিত একটি অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপির নেতৃস্থানীয় কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে আইনের দিক থেকে সম্পূর্ণ একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এখানে যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযোগ করে তড়িঘড়ি করে কাউকে ঝুলিয়ে দিলে চলবে না। কারণ একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে। আইনের শাসনে বিশ্বাসী একটি সভ্য দেশে এটি সবারই কাম্য। অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। নতুবা দেশে অপরাধপ্রবণতা সব সীমা ছাড়িয়ে যাবে। এ দেশে কখনোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও একদিন হারিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন ও যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁরা যদি সে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে বিচার না পান, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে- এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এ বিশ্বাস বিএনপির শরিক দলের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু নিজের দুর্নীতি, চরম অনিয়ম ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সরকার বিরোধী জোটের গণ-আন্দোলনকে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র বলে সার্বক্ষণিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তার জনপ্রিয়তা কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সরকারের প্রতি জনগণের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা সমর্থন আরো কমতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরও দেশে যদি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতেও সরকারের ভরাডুবি হতে পারে।
ক্ষমতাসীন সরকারের কল্পিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নামে দেশব্যাপী বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে পরিমাণ ধরপাকড় চলছে এবং যে পরিমাণ মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে তাতে কারো পক্ষে এখন আর নিজেদের ঘরবাড়িতে বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাম-গঞ্জে কয়জন রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারে, সে তথ্য সম্ভবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও নেই। থানা-পুলিশসহ বৃহত্তরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যে স্থানীয় নেতাদের হুকুম ছাড়া থানা স্বাধীনভাবে কোনো মামলাও নিতে পারে না। প্রশাসনের সর্বস্তরেও একই অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কী করে সম্ভব হতে পারে, সে প্রশ্নই এখন সর্বত্র দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গুম ও গুপ্তহত্যার পরিমাণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে সংগতভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে দেশে কি বিরোধী দল বলতে আর কিছুই থাকবে না। এ রকম একটি পরিস্থিতি ইউরোপ ও আমেরিকা দূরে থাকুক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও কি চিন্তা করা যায়? সে কারণেই অনেকে এখন প্রশ্ন তুলছেন, এর নামই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? এ অবস্থায় কি একটি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার বিকশিত হতে পারে? তার পাশাপাশি চলছে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ঘুষ-দুর্নীতি ও জনগণের সম্পত্তি বেদখল। সবার চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের অতি মূল্যবান জমি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ কোথাও নেই। সেসব কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা নিরূপণ করার ক্ষমতা যেন তাদেরও নেই। সাধারণ মানুষের এখন দাবি হচ্ছে, দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন। তবে এর আগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সামাল দিন। তা না হলে দেশের শাসনব্যবস্থা এমনিতেই ধসে পড়বে, অন্যের ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন সৎ, ভদ্র ও সংস্কৃতিবান রাজনীতিক। ছাত্রাবস্থায় তাঁর সঙ্গে একই আবাসিক হলে (এসএম হল) থেকেছি। একই বিষয়ে (অর্থনীতি) পড়াশোনা করেছি এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও পরে পূর্ব বাঙলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলাম। তাঁর মতো একজন আদর্শবান ও সজ্জন মানুষ খুব কমই পেয়েছি। হরতালের সময় গাড়ি পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফেলে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হেনস্তা করা হচ্ছে একের পর এক। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ দেশে কোনো শিক্ষিত, সৎ ও ভদ্র মানুষ রাজনৈতিক অঙ্গনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে কি এ দেশে রাজনীতি করবে কিছু অশিক্ষিত, অভদ্র ও দুর্নীতিপরায়ণ ইতর মানুষ? সে কারণে অবিলম্বে তাঁর মতো মানুষের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা আরো চাই, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করুক, যাতে সরকার ও বিরোধী দলের প্রজ্ঞাবান সদস্যরা একই টেবিলে বসে জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন। এ কথা ঠিক, এ দেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো স্থান হবে না। তার পাশাপাশি এ কথাও ঠিক, আগামী এক দশকের মধ্যে পুরনো ঘরানার রাজনীতিকরা ক্রমে একে একে রাজনৈতিক অঙ্গন ত্যাগ করবেন। রাজনীতিতে আসবে নতুন প্রজন্ম। টিকিয়ে রাখতে হবে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে। সে রাষ্ট্রে যেন প্রতিফলন ঘটে আমাদের প্রাণ উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের। সে রাষ্ট্র যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার খরস্রোত বেয়ে এগিয়ে চলে। নেতৃত্বের রেষারেষি, দলীয় বিভেদ ও একে অপরের প্রতি উচ্ছেদের রাজনীতি ভুলে এখনই সূচনা করতে হবে একটি সম্ভাবনাময় ও আলোকিত ভবিষ্যতের। সে কারণেই এ সরকারের বাকি সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিকভাবে সহাবস্থানের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অর্থবহ আলোচনার জন্য একত্রে বসতে হবে এবং সব সংকট উত্তরণের জন্য সম্মিলিতভাবে পথ খুঁজে বের করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সমালোচিত হতে হবে দেশ ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা ও ব্যর্থতার জন্য।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com
No comments