রাশিয়া থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র কিনছে সরকার by রাহীদ এজাজ
রাশিয়ার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণে আট হাজার কোটি টাকার (১০০ কোটি ডলার) সমরাস্ত্র কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য সাত ধরনের এবং বিমানবাহিনীর জন্য চার ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হবে।
সেনাবাহিনীর সমরাস্ত্রের তালিকায় রয়েছে ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল মেতিস-এম-১ ও করনেট-ই; সাঁজোয়া যান বিটিআর-৮০ ও বিটিআর-৮০-কে; স্বয়ংক্রিয় গ্রেনেড লঞ্চার এজিএস-৩০, নৌপথে সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক পারাপারের উপযোগী পিপি-৯১ পন্টুন ও ট্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত এমটিইউ-৯০ সেতু।
বিমানবাহিনীর কেনাকাটার তালিকায় রয়েছে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, সামরিক পণ্য পরিবহন উপযোগী এমআই১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, গামা-ডিই/গামা-সি১ই রাডার ও কাস্তা-২ই২ রাডার।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন রাশিয়া সফরের সময় ক্রেমলিনে হাসিনা-পুতিন শীর্ষ বৈঠক শেষে এ বিষয়ে চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সফরে আজ সোমবার সকালে রাশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। মঙ্গলবার মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল রোববার দুপুরে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের এই সফর সম্পর্কে ব্রিফ করেন। রাশিয়ার দেওয়া রাষ্ট্রীয় ঋণে আট হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র কেনাকাটার তথ্য জানালেও বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
রাষ্ট্রীয় ঋণে কী ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হচ্ছে এবং ঋণের সুদের হার কত, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করছে ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ)। এই চুক্তিতে যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা হয়, খুব স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনারা ইআরডির কাছে তথ্য পাবেন।’ সহজ শর্তে, নাকি কঠিন শর্তে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর কোনোটাই না।
স্বাধীনতার পর এত বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ঋণে সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য নেই। আমার ধারণা, আগেও আমরা রাষ্ট্রীয় ঋণে সমরাস্ত্র কিনেছি।’
এই কেনাকাটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইআরডির কাছে তথ্য চাওয়ার যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেই মতে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর খসড়া সফরসূচি অনুযায়ী, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করবেন ইআরডি সচিব। সমরাস্ত্র কেনাকাটা-সংক্রান্ত চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারাও কথা বলতে অপারগতা জানিয়েছেন।
রাশিয়ার এই ঋণনির্ভর কেনাকাটার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, শুরুতে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকায় মিগের নতুন সংস্করণ ‘সুখয়’ জঙ্গি বিমান কেনার কথা ছিল। এ ব্যাপারে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফর করে। ফিরতি সফরে গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল মস্কো সফর করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, কিন্তু জঙ্গি বিমান কেনার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাধীনতার পর সত্তর ও আশির দশকের সামরিক সরকার এবং নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে অস্ত্র কিনেছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে এবং কতটুকু যৌক্তিক প্রয়োজনে এসব কেনাকাটা হয়, তা নিয়ে সব সময়ই আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় সমরকৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কখন, কী প্রয়োজনে, কী পরিমাণ অস্ত্র কেনা উচিত, তার কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, লন্ডনের বিখ্যাত সাময়িকী জেন’স ডিফেন্স উইকলি ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। তাতে তৎকালীন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার।
জেন’স ডিফেন্স উইকলির প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা থাকলেও প্রতিরক্ষানীতি না থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় না বলেও বলা হয় প্রতিবেদনটিতে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ বিমান কেনা হয়েছিল। মোট ১২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওই জঙ্গি বিমানগুলো কেনা নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, মামলাও হয়। তখন বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের মিগ কেনার যৌক্তিকতা নিয়েও কোনো কোনো মহল প্রশ্ন তোলে। মিগ-২৯ কেনা নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতেও চুক্তির দলিল দেখায়নি।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই মিগগুলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে শেষ পর্যন্ত মিগগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া থেমে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেনা ওই আটটি মিগের মধ্যে বর্তমানে চারটি উড্ডয়নের উপযোগী আছে।
চুক্তির শর্ত ও অন্যান্য: খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, সমরাস্ত্রের তালিকা চূড়ান্ত হলেও কোন সমরাস্ত্র কত সংখ্যায় কেনা হবে, তা দুই পক্ষ পরে চূড়ান্ত করবে। দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনে তালিকা পরিবর্তনও করা যাবে।
খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, আট হাজার কোটি টাকার এই কেনাকাটার জন্য অগ্রিম হিসেবে রাশিয়াকে ঋণের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। ঋণের সুদ হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি সরকারের সময়ের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন অনস্বীকার্য। তবে এটি একটি প্রতিরক্ষানীতির আলোকে সমরকৌশলের পরিকল্পনায় হলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কেনাকাটা হয়। আর এসব কেনাকাটায় স্বচ্ছতা না থাকায় এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।’
আর বর্তমান প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সরকারদলীয় সাংসদ এম ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে প্রতিরক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিরক্ষানীতির খসড়া নিয়ে ২০১০ সালে আলোচনা হয়। এই খসড়ার ব্যাপারে বেশ কিছু মতামতও সে সময় দেওয়া হয়। তবে তা আর এগোয়নি।
বিমানবাহিনীর কেনাকাটার তালিকায় রয়েছে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, সামরিক পণ্য পরিবহন উপযোগী এমআই১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, গামা-ডিই/গামা-সি১ই রাডার ও কাস্তা-২ই২ রাডার।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন রাশিয়া সফরের সময় ক্রেমলিনে হাসিনা-পুতিন শীর্ষ বৈঠক শেষে এ বিষয়ে চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সফরে আজ সোমবার সকালে রাশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। মঙ্গলবার মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল রোববার দুপুরে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের এই সফর সম্পর্কে ব্রিফ করেন। রাশিয়ার দেওয়া রাষ্ট্রীয় ঋণে আট হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র কেনাকাটার তথ্য জানালেও বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
রাষ্ট্রীয় ঋণে কী ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হচ্ছে এবং ঋণের সুদের হার কত, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করছে ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ)। এই চুক্তিতে যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা হয়, খুব স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনারা ইআরডির কাছে তথ্য পাবেন।’ সহজ শর্তে, নাকি কঠিন শর্তে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর কোনোটাই না।
স্বাধীনতার পর এত বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ঋণে সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য নেই। আমার ধারণা, আগেও আমরা রাষ্ট্রীয় ঋণে সমরাস্ত্র কিনেছি।’
এই কেনাকাটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইআরডির কাছে তথ্য চাওয়ার যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেই মতে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর খসড়া সফরসূচি অনুযায়ী, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করবেন ইআরডি সচিব। সমরাস্ত্র কেনাকাটা-সংক্রান্ত চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারাও কথা বলতে অপারগতা জানিয়েছেন।
রাশিয়ার এই ঋণনির্ভর কেনাকাটার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, শুরুতে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকায় মিগের নতুন সংস্করণ ‘সুখয়’ জঙ্গি বিমান কেনার কথা ছিল। এ ব্যাপারে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফর করে। ফিরতি সফরে গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল মস্কো সফর করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, কিন্তু জঙ্গি বিমান কেনার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাধীনতার পর সত্তর ও আশির দশকের সামরিক সরকার এবং নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে অস্ত্র কিনেছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে এবং কতটুকু যৌক্তিক প্রয়োজনে এসব কেনাকাটা হয়, তা নিয়ে সব সময়ই আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় সমরকৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কখন, কী প্রয়োজনে, কী পরিমাণ অস্ত্র কেনা উচিত, তার কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, লন্ডনের বিখ্যাত সাময়িকী জেন’স ডিফেন্স উইকলি ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। তাতে তৎকালীন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার।
জেন’স ডিফেন্স উইকলির প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা থাকলেও প্রতিরক্ষানীতি না থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় না বলেও বলা হয় প্রতিবেদনটিতে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ বিমান কেনা হয়েছিল। মোট ১২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওই জঙ্গি বিমানগুলো কেনা নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, মামলাও হয়। তখন বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের মিগ কেনার যৌক্তিকতা নিয়েও কোনো কোনো মহল প্রশ্ন তোলে। মিগ-২৯ কেনা নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতেও চুক্তির দলিল দেখায়নি।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই মিগগুলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে শেষ পর্যন্ত মিগগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া থেমে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেনা ওই আটটি মিগের মধ্যে বর্তমানে চারটি উড্ডয়নের উপযোগী আছে।
চুক্তির শর্ত ও অন্যান্য: খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, সমরাস্ত্রের তালিকা চূড়ান্ত হলেও কোন সমরাস্ত্র কত সংখ্যায় কেনা হবে, তা দুই পক্ষ পরে চূড়ান্ত করবে। দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনে তালিকা পরিবর্তনও করা যাবে।
খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, আট হাজার কোটি টাকার এই কেনাকাটার জন্য অগ্রিম হিসেবে রাশিয়াকে ঋণের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। ঋণের সুদ হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি সরকারের সময়ের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন অনস্বীকার্য। তবে এটি একটি প্রতিরক্ষানীতির আলোকে সমরকৌশলের পরিকল্পনায় হলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কেনাকাটা হয়। আর এসব কেনাকাটায় স্বচ্ছতা না থাকায় এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।’
আর বর্তমান প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সরকারদলীয় সাংসদ এম ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে প্রতিরক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিরক্ষানীতির খসড়া নিয়ে ২০১০ সালে আলোচনা হয়। এই খসড়ার ব্যাপারে বেশ কিছু মতামতও সে সময় দেওয়া হয়। তবে তা আর এগোয়নি।
No comments