ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে সেই শিশুকে ধর্ষণ ও হত্



রাজবাড়ীতে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় জামিন পাওয়া তরুণ একই শিশুকে গতকাল রোববার ধর্ষণ ও হত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় রইচ শেখ নামের ওই তরুণকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী।
সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে গতকাল রোববার সকালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটে। মেয়েটি (৫) স্থানীয় একটি ব্র্যাক স্কুলের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মেয়েটি সকাল ১০টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় গ্রামের মৃত আশরাফ আলী শেখের ছেলে রইচ শেখ (১৮) তাকে পাশের একটি বাঁশবাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এর আগে ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় রইচ শেখকে গত বছরের ১৫ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই শিশুর বাবা আফজাল মৃধা বাদী হয়ে রইচের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় মামলা করেন। ওই মামলা বিচারাধীন অবস্থায় তিনি হাজতবাস করেন। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি জামিন পান।
পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় রইচ শেখ মেয়েটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর (মেয়েটির) জন্য আমি ছয় মাস জেল খাটছি। এ সময়ে আমার বাবাও মারা গেছে। আমি ওকে বাঁশবাগানে ডেকে নিয়ে পেটে লাথি মেরে হত্যা করেছি।’ তবে তিনি ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন।
গতকাল বেলা একটার দিকে গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মেয়েটির লাশ রাখা হয়েছে। লাশের পাশে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বিলাপ করছেন তাঁর মা। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে, মেয়েটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নীলফামারী: জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের এক গ্রামে শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
মামলার এজাহার, পুলিশ, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার রাতে মেয়েটির এক চাচাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রতিবেশী আবদুল জলিলের ছেলে আবু সাঈদ (২০) ও কালু মাহমুদের ছেলে মুকুল হোসেন (২১) মেয়েটিকে গ্রামের অদূরে একটি সেতুর কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। মেয়েটি আহত অবস্থায় ফিরে আসতে পারলেও বাড়িতে ঢুকেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। মেয়েটির এক চাচা জানান, ঘটনার পর তাঁরা মোটরসাইকেলযোগে তাকে নীলফামারী সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেদের পরামর্শে রাতেই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি আছে।
নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে স্থানান্তর করা হয়।
মেয়েটির চাচাতো ভাই বাদী হয়ে শনিবার বিকেলে নীলফামারী সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে সাঈদ (২০) ও মুকুলকে। তাঁরা পলাতক রয়েছেন।
গতকাল রোববার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার শিকার মেয়েটি ও অভিযোগ ওঠা দুই যুবকের বাড়ি একেবারে লাগোয়া। মেয়েটির বাক্প্রতিবন্ধী বাবা পেশায় দিনমজুর। কথা বলতে না পারলেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না তিনি। শুধু আঙুলের ইঙ্গিতে তিনি দুই যুবকের বাড়ি দেখাচ্ছিলেন। অভিযোগ ওঠা সাঈদ ও মুকুলের বাড়িতে গিয়ে কথা বলার জন্য কোনো পুরুষ মানুষকে পাওয়া যায়নি। সাঈদের মা দাবি করেন, তাঁর ছেলে তাঁকে বলেছেন, তাঁরা ওই ঘটনায় জড়িত নন। সাঈদ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন বলে তিনি জানান। মুকুলের মা-ও একই রকম দাবি করেন। তবে তাঁর বাবা কালু মাহমুদ দাবি করেন, ঘটনার অনেক আগে থেকেই মুকুল কুমিল্লায় দিনমজুরের কাজ করতে গেছেন।
চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। হাসপাতালে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। সে ওই দুজনের (সাঈদ ও মুকুল) নাম বলেছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.