ভারত-পাকিস্তান সংলাপ যেন ব্যাহত না হয় by বি রমন
জম্মু ও কাশ্মীর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ভারতীয় দুই সেনার মৃত্যুর কারণে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ভারতকে। গত ৮ জানুয়ারি ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা এই সেনাদের একজনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ শিরশ্ছেদ করার ঘটনাকে অস্বীকার করেছে। বরং তাদের কথায় স্পষ্ট হয়ে যায়, ভারতীয় দুই সেনাকে হত্যা করার পেছনে ৬ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া ঘটনাই সূত্র হিসেবে কাজ করেছে। ৬ জানুয়ারি উরি সেক্টরে পাকিস্তানের এক সেনা ভারতীয় টহলরত সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এটিও অস্বীকার করেছে। মনে করা হচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের উরি সেক্টরের কিছু জঙ্গি অধিকৃত অংশে কভারিং ফায়ার করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
দুটি দেশের বর্তমান সম্পর্কের যে অবস্থা, তাতে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করা কঠিন বৈকি। আমাদের কৌশল হচ্ছে, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে আমাদের উভয় পক্ষকেই। এর মাধ্যমে বাণিজ্য, নাগরিক-নাগরিক সম্পর্ক, আন্তসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, হয়রানিমুক্ত ভ্রমণসুবিধা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। এই কৌশল যাতে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, সে জন্য এ মুহূর্তে দুটি দেশের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
৮ জানুয়ারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার পথ থেকে দূরে থাকা হবে সবচেয়ে বোকামির কাজ। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বিতর্ককে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে আলোচনার পথ যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে দুই দেশের নাগরিকদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হবে। একইভাবে এটাও স্বীকার করতে হবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি এ রকম মানসিকতা পোষণ করে চলতে থাকে, তাহলে দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অকালেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। পাকিস্তানিদের এই মানসিকতা জম্মু-কাশ্মীর সমস্যাকে উসকে দিতে পারে। ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য জঙ্গি তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান নিজে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হওয়ায় তাদের মানসিকতায় যদি নেতিবাচক চিন্তা কাজ করতে থাকে, তাহলে ভারতের শান্তি বিঘ্নিত করার দিকে তাদের প্রচেষ্টা চলবে। এটা পারমাণবিক যুদ্ধকে এড়িয়েও হতে পারে।
৮ জানুয়ারির ঘটনা ঘটার পেছনে যদি যুক্তি খোঁজা হয় তাহলে আমরা বলতে পারি, পাকিস্তানিরা হয়তো চিন্তা করেছে ভারত এ মুহূর্তে পারমাণবিক যুদ্ধচিন্তা করছে না। কিংবা তারা সাধারণ যুদ্ধেও জড়াতে চাইবে না।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, পি ভি নরসিমা রাও ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ নিরসনের চিন্তা করে পাকিস্তানের শক্তির বিপরীতে নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের প্রতি নজর দিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, আমাদের বুদ্ধিজীবী, আমলা ও সাম্প্রতিককালের প্রধানমন্ত্রীরা এ বিষয়টিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
আমার বিশ্বাস, এ ধরনের ব্যর্থতা কিংবা উদাসীনতার কারণেই ২৬/১১ মুম্বাই ঘটনা ঘটিয়েও তারা পার পেয়ে যেতে পেরেছে। মুম্বাই ঘটনার পর সংগত কারণেই প্রত্যাশা করা হয়েছিল, কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জরুরিভিত্তিতে কোনো প্রস্তুতি না থাকার কারণে সেদিন সাধারণ প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জঙ্গিরা থেমে থাকবে- এটা হতে পারে না। পরবর্তীকালে বিশেষ করে ৮ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরে যে ঘটনার সৃষ্টি হলো তাও এই দুর্বলতার কারণেই হয়েছে। তার পরও আমরা যখন শক্তি অর্জনের কথা শুনি, তখন তাকে কাগুজে বাঘ হিসেবেই মনে হয়।
পাকিস্তান মনে করতে পারে, তাদের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের কারণে ভারত এখন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই ভারত কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করার চিন্তা করছে না। তবে এটাও ভাবা দরকার, প্রতিরক্ষামূলক হস্তক্ষেপ অর্থই পাকিস্তানিদের মতো প্রতিবেশীদের ওপর আঘাত হানাকেই বোঝায় না। শত্রু পক্ষকে নিবৃত করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপই একমাত্র পদক্ষেপ নয়। ঢিল মারলে পাটকেল মারার নীতিও সুষ্ঠু প্রতিবেশীসুলভ আচরণ হতে পারে না। ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের কল্যাণ চিন্তা করে দুই দেশকেই এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক : ভারত সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব
দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
দুটি দেশের বর্তমান সম্পর্কের যে অবস্থা, তাতে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করা কঠিন বৈকি। আমাদের কৌশল হচ্ছে, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে আমাদের উভয় পক্ষকেই। এর মাধ্যমে বাণিজ্য, নাগরিক-নাগরিক সম্পর্ক, আন্তসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, হয়রানিমুক্ত ভ্রমণসুবিধা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। এই কৌশল যাতে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, সে জন্য এ মুহূর্তে দুটি দেশের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
৮ জানুয়ারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার পথ থেকে দূরে থাকা হবে সবচেয়ে বোকামির কাজ। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বিতর্ককে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে আলোচনার পথ যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে দুই দেশের নাগরিকদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হবে। একইভাবে এটাও স্বীকার করতে হবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি এ রকম মানসিকতা পোষণ করে চলতে থাকে, তাহলে দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অকালেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। পাকিস্তানিদের এই মানসিকতা জম্মু-কাশ্মীর সমস্যাকে উসকে দিতে পারে। ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য জঙ্গি তৎপরতাও বেড়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান নিজে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হওয়ায় তাদের মানসিকতায় যদি নেতিবাচক চিন্তা কাজ করতে থাকে, তাহলে ভারতের শান্তি বিঘ্নিত করার দিকে তাদের প্রচেষ্টা চলবে। এটা পারমাণবিক যুদ্ধকে এড়িয়েও হতে পারে।
৮ জানুয়ারির ঘটনা ঘটার পেছনে যদি যুক্তি খোঁজা হয় তাহলে আমরা বলতে পারি, পাকিস্তানিরা হয়তো চিন্তা করেছে ভারত এ মুহূর্তে পারমাণবিক যুদ্ধচিন্তা করছে না। কিংবা তারা সাধারণ যুদ্ধেও জড়াতে চাইবে না।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, পি ভি নরসিমা রাও ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ নিরসনের চিন্তা করে পাকিস্তানের শক্তির বিপরীতে নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের প্রতি নজর দিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, আমাদের বুদ্ধিজীবী, আমলা ও সাম্প্রতিককালের প্রধানমন্ত্রীরা এ বিষয়টিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
আমার বিশ্বাস, এ ধরনের ব্যর্থতা কিংবা উদাসীনতার কারণেই ২৬/১১ মুম্বাই ঘটনা ঘটিয়েও তারা পার পেয়ে যেতে পেরেছে। মুম্বাই ঘটনার পর সংগত কারণেই প্রত্যাশা করা হয়েছিল, কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জরুরিভিত্তিতে কোনো প্রস্তুতি না থাকার কারণে সেদিন সাধারণ প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জঙ্গিরা থেমে থাকবে- এটা হতে পারে না। পরবর্তীকালে বিশেষ করে ৮ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরে যে ঘটনার সৃষ্টি হলো তাও এই দুর্বলতার কারণেই হয়েছে। তার পরও আমরা যখন শক্তি অর্জনের কথা শুনি, তখন তাকে কাগুজে বাঘ হিসেবেই মনে হয়।
পাকিস্তান মনে করতে পারে, তাদের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের কারণে ভারত এখন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই ভারত কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করার চিন্তা করছে না। তবে এটাও ভাবা দরকার, প্রতিরক্ষামূলক হস্তক্ষেপ অর্থই পাকিস্তানিদের মতো প্রতিবেশীদের ওপর আঘাত হানাকেই বোঝায় না। শত্রু পক্ষকে নিবৃত করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপই একমাত্র পদক্ষেপ নয়। ঢিল মারলে পাটকেল মারার নীতিও সুষ্ঠু প্রতিবেশীসুলভ আচরণ হতে পারে না। ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের কল্যাণ চিন্তা করে দুই দেশকেই এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক : ভারত সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব
দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
No comments