পঞ্চম আদমশুমারি- নির্ভুল গণনা নিশ্চিত করুন
আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের পঞ্চম লোক ও গৃহগণনা শুরু হবে। চলবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নানা ধরনের জরিপ ও অনুসন্ধানকাজে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার রেওয়াজ দেশে রয়েছে। কিন্তু লোকগণনার সঙ্গে এর কোনোটিই তুলনীয় নয়।
প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি নারী-পুরুষ-শিশুর পরিবার, বাসগৃহ ও ব্যক্তিগত তথ্য জানার এ এক অনন্য সুযোগ। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যবহার করা হবে। এ কারণে সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পাকিস্তান আমলে আমাদের এই ভূখণ্ডে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু শাসকরা আমাদের নানাভাবে বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার করেছিল। এমনকি তারা সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রদত্ত রায় উপেক্ষা করে নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়ে আমাদের চিরতরে পদানত রাখার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিশ্ববাসী পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের ন্যায়সঙ্গত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ব্যক্ত করে। স্বাধীনতার চার দশক পর কিন্তু এই জনসংখ্যাধিক্যই আমাদের সমৃদ্ধির পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিরাজ করছে। তবে সবকিছুর পরও এই মানবসম্পদই আমাদের বড় সম্পদ এবং উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করা চাই। বিশেষজ্ঞদের কারও কারও এমন অভিমত রয়েছে যে, লোকগণনার জন্য প্রণীত তথ্য ফরম আরও বিশদ হতে পারত। সমাজের অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত জনগোষ্ঠী, বস্তিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে এ আয়োজন থেকে আরও বেশি তথ্য পাওয়ার সুযোগ ছিল কি-না কিংবা গ্রাম থেকে শহরে নিরন্তর চলে আসা নারী-পুরুষদের বিষয়েও বিশদভাবে জানার সুযোগ গ্রহণ না করা ঠিক হয়েছে কি-না_ এসব প্রশ্ন হয়তো করাই যায়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কী হারে বাড়ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরও হয়তো এ সুযোগে জানা যেত। এসব ক্ষেত্রে নতুন করে পদেক্ষপ গ্রহণের অবকাশ নেই। তবে যাচাই কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সীমিত আকারে যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে তাতে এসব ইস্যু বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে আমরা আশা করব। শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে প্রতিটি বাড়ি গিয়ে। এ জন্য তিন লাখের বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি লোকও যেমন গণনার বাইরে থাকতে পারবে না, তেমনি দেশের একটি নাগরিক সম্পর্কেও ভুল তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ভুল হলে আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়নকারীদের চলতে হবে গোড়ায় গলদ নিয়ে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা নিয়ে অভিযোগ পুরনো। সরকারি বিভিন্ন বিভাগ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রায়ই এ বিষয়টি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে থাকেন। আদমশুমারির তথ্য নিয়ে এমনটি ঘটলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না। শুমারির কাজে নিয়োজিত কর্মীদের কাজের ওপর তাই কঠোর নজরদারি থাকা চাই। গণনাকাজে সহায়তা করার জন্য মোবাইল টেলিফোন গ্রাহকদের প্রত্যেকের কাছে ক্ষুদ্র বার্তা বা এসএমএস পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। তবে জনসাধারণকে সচেতন করার বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রচার চালানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি লোককে গণনার আওতায় নিয়ে আসা নিশ্চিত করেই কেবল তা খণ্ডন করা যাবে।
No comments