কন্যাশিশু অপহরণ- নারী নিগ্রহের অন্য রূপ
দরজা ভেঙে যখন পুলিশ ঘরে ঢুকেছিল, রুখসানা তখনো ঘুমে। পুলিশ জানতে চাইল, ‘তোর বয়স কত? এখানে এসেছিস কীভাবে?’
‘১৪’—বড় বড় চোখে তাকিয়ে শীর্ণ মেয়েটির নিচুস্বরে জবাব।
‘১৪’—বড় বড় চোখে তাকিয়ে শীর্ণ মেয়েটির নিচুস্বরে জবাব।
‘আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল...।’ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল রুখসানা। কিন্তু একজন বয়স্ক নারী তাতে বাধা দিয়ে পুলিশকে বলেন, ‘ও মিথ্যা বলছে। ওর বয়স ১৮ পেরিয়েছে। আমি ওর মা-বাবাকে টাকা দিয়ে ওকে নিয়ে এসেছি।’
পুলিশ মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে যেতে উদ্যত হলো। এ সময় সেই নারী ছুটে গিয়ে মেয়েটির কানের দুলজোড়া খুলে নিতে নিতে বলেন, ‘এগুলো আমার।’
চতুর্দশী রুখসানা এক বছর আগে মা-বাবা ও ছোট দুই ভাইবোনের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি একটি গ্রামে থাকত। বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে একদিন তার শৈশবের সমাপ্তি হয়। তিনজন লোক সেদিন তাকে জোর করে একটি মোটরগাড়িতে তুলে নেয়। বাধা দিলে তাকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল। তারা মোটরগাড়ি, বাস ও ট্রেনে চড়ে তিন দিনব্যাপী যাত্রা শেষে উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে পৌঁছায়। সেখানে একটি পরিবারের কাছে রুখসানাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
মা ও তিন ছেলে নিয়ে সেই পরিবার। এক বছর ধরে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি রুখসানাকে। বড় ছেলেটি নিজেকে রুখসানার ‘স্বামী’ বলে দাবি করতেন। তাঁর নিয়মিত ধর্ষণের শিকার হতো রুখসানা।
এ ছাড়া ওই পরিবারের সবাই তাকে মারধর করত। রুখসানার ভাষ্য, ‘ওরা আমাকে কিনে নিয়েছিল। তাই ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। আমি প্রতিদিন কাঁদতাম। নিজের পরিবারকে আবার কোনো দিন দেখতে পাব, এমন কথা তখন ভাবতেও পারিনি।’
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সম্প্রতি ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে। দেশটিতে নারীর অবস্থা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। কন্যাশিশু ও ভ্রূণ হত্যার মতো বিষয় প্রচারে এলেও দেশজুড়ে নারী পাচারের প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা তুলনামূলক কম হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ উদ্বেগের সঙ্গে জানায়, ভারতজুড়ে প্রতিবছর ১০ হাজার মেয়ে নিখোঁজ হয়। তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং যৌনকর্মী ও গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ওই মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা কম। গর্ভপাত ও কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অন্য কোনো দেশের জনসংখ্যায় নারীর অনুপাতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ভারত থেকে অন্তত দুই কোটি ৫০ লাখ থেকে পাঁচ কোটি নারী ‘হারিয়ে গেছেন’। দেশটিতে ভ্রূণ অথবা শিশু অবস্থায় বহু মেয়েকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া শিশু ও তরুণীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীদের অনেকেরই অকাল মৃত্যু হয় অবহেলায়।
জন্মের পরপরই কন্যাশিশুদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার হার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। দিল্লি, চণ্ডীগড় ও আহমেদাবাদের মতো সমৃদ্ধ ও আধুনিক শহরেও কন্যাশিশুর অনুপাত কম। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ণয়ে আলট্রাসাউন্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও প্রায় সবখানেই তা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন-সংলগ্ন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে কন্যাশিশুদের নিয়মিত অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী, ভারতে ২০১১ সালে মোট ৩৫ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজারই নিখোঁজ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কেবল ৩০ শতাংশ ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
‘শক্তি বাহিনী’ নামের একটি সংগঠনের সমাজকর্মী ঋষি কান্ত বলেন, মেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উত্তর ভারতে তরুণেরা বিয়ে করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন। মূলত যৌতুক দেওয়ার ভয়ে সেখানকার পরিবারগুলোতে কন্যাশিশুদের হত্যা করা হয়। বিবিসি।
পুলিশ মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে যেতে উদ্যত হলো। এ সময় সেই নারী ছুটে গিয়ে মেয়েটির কানের দুলজোড়া খুলে নিতে নিতে বলেন, ‘এগুলো আমার।’
চতুর্দশী রুখসানা এক বছর আগে মা-বাবা ও ছোট দুই ভাইবোনের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি একটি গ্রামে থাকত। বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে একদিন তার শৈশবের সমাপ্তি হয়। তিনজন লোক সেদিন তাকে জোর করে একটি মোটরগাড়িতে তুলে নেয়। বাধা দিলে তাকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল। তারা মোটরগাড়ি, বাস ও ট্রেনে চড়ে তিন দিনব্যাপী যাত্রা শেষে উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে পৌঁছায়। সেখানে একটি পরিবারের কাছে রুখসানাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
মা ও তিন ছেলে নিয়ে সেই পরিবার। এক বছর ধরে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি রুখসানাকে। বড় ছেলেটি নিজেকে রুখসানার ‘স্বামী’ বলে দাবি করতেন। তাঁর নিয়মিত ধর্ষণের শিকার হতো রুখসানা।
এ ছাড়া ওই পরিবারের সবাই তাকে মারধর করত। রুখসানার ভাষ্য, ‘ওরা আমাকে কিনে নিয়েছিল। তাই ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। আমি প্রতিদিন কাঁদতাম। নিজের পরিবারকে আবার কোনো দিন দেখতে পাব, এমন কথা তখন ভাবতেও পারিনি।’
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সম্প্রতি ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে। দেশটিতে নারীর অবস্থা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। কন্যাশিশু ও ভ্রূণ হত্যার মতো বিষয় প্রচারে এলেও দেশজুড়ে নারী পাচারের প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা তুলনামূলক কম হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ উদ্বেগের সঙ্গে জানায়, ভারতজুড়ে প্রতিবছর ১০ হাজার মেয়ে নিখোঁজ হয়। তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং যৌনকর্মী ও গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ওই মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা কম। গর্ভপাত ও কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অন্য কোনো দেশের জনসংখ্যায় নারীর অনুপাতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ভারত থেকে অন্তত দুই কোটি ৫০ লাখ থেকে পাঁচ কোটি নারী ‘হারিয়ে গেছেন’। দেশটিতে ভ্রূণ অথবা শিশু অবস্থায় বহু মেয়েকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া শিশু ও তরুণীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীদের অনেকেরই অকাল মৃত্যু হয় অবহেলায়।
জন্মের পরপরই কন্যাশিশুদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার হার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। দিল্লি, চণ্ডীগড় ও আহমেদাবাদের মতো সমৃদ্ধ ও আধুনিক শহরেও কন্যাশিশুর অনুপাত কম। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ণয়ে আলট্রাসাউন্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও প্রায় সবখানেই তা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন-সংলগ্ন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে কন্যাশিশুদের নিয়মিত অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী, ভারতে ২০১১ সালে মোট ৩৫ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজারই নিখোঁজ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কেবল ৩০ শতাংশ ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
‘শক্তি বাহিনী’ নামের একটি সংগঠনের সমাজকর্মী ঋষি কান্ত বলেন, মেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উত্তর ভারতে তরুণেরা বিয়ে করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন। মূলত যৌতুক দেওয়ার ভয়ে সেখানকার পরিবারগুলোতে কন্যাশিশুদের হত্যা করা হয়। বিবিসি।
No comments